17495

সামনের পৃথিবীটা বিশ্ববিদ্যালয়ের না

সামনের পৃথিবীটা বিশ্ববিদ্যালয়ের না

2020-05-19 06:11:07

সামনের পৃথিবীটা বিশ্ববিদ্যালয়ের না, EdTech এর, চার-পাঁচ বছর মেয়াদি গতানুগতিক সার্টিফিকেট কোর্সের না, খুব সুনির্দিষ্ট ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা মোতাবেক স্কিল ও স্পেশালাইজেশনের অনেকগুলো পরিপূরক কোর্সের সমন্বয়ের!

এখন যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন নিজেদের বহুমাত্রিক স্কিল ঘষামাজা করতে না থাকলে দশ-পনেরো বছরের মধ্যে শ্রম বাজারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্রাত্য হয়ে যেতে পারেন! বেসরকারি খাতে কর্মজীবিরা প্রতি পাঁচ-আট বছরের মধ্যে নিজেদের দক্ষতা ও অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে থাকবেন, নতুন নতুন ঢেউয়ে নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে। এমনকি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও, 'সরকারি চাকরিতে ঢুকেছি, এবার আরাম করে অবসরের আগ পর্যন্ত চাকরি নিশ্চিত', এমন দিন আর নাও থাকতে পারে! পৃথিবীতে সবই বদলায়, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তর কোরিয়ারও বন্ধুত্ব হয়, তাই একবিংশ শতকের তৃতীয় দশকে সব বদলই হবে দ্রুততর!

এই প্রসংগে একটি অজনপ্রিয় প্রশ্ন তুলিঃ ট্যাক্সের অর্থে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ) বিশেষত সোশ্যাল সায়েন্সের ও আর্টসের যেসব কোর্সে একেক ক্লাসে সত্তর আশিজন করে ভর্তি করা হয় (যেমন ধরেন পলিটিক্যাল সায়েন্স, সোশিওলজি, নৃতত্ত্ব, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস, বাংলা সাহিত্য ইত্যাদি ইত্যাদি), এত গ্র্যাজুয়েটের আমাদের প্রয়োজন আছে কী? সাবজেক্টগুলো প্রতিটিই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্ত সোশিওলজিতে পড়ে আশিজনের ক্লাসে কতজন কর্মজীবনে সোশিওলজিস্ট হিসেবে ভূমিকা রাখে, অথবা ইসলামের ইতিহাসে পড়ে কতজন এই প্রেক্ষিতে গবেষণায় নিয়োজিত? বাকিরা যদি সার্টিফিকেট জোগাড় করে সরকারি চাকরি বা ব্যাংকের দিকেই ছোটে, ঠ্যাকায় পড়ে একটা এমবিএ ই করে, তবে তাদের জন্য চার-পাঁচ বছর তাদের অনাগ্রহের বিষয়ে ভর্তুকির অর্থ ব্যয়ের দরকার কী?

আবার বিশেষায়িত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (নোবিপ্রবি, শাবিপ্রবি ইত্যাদি) সমাজকর্ম, আইন অথবা বাংলার মত বিভাগ খোলা হচ্ছে দেদারসে। যৌক্তিকতা কী? কলেবর বৃদ্ধি ও শিক্ষক বানানোর রাজনীতি ছাড়া?

এখন একটি বিকল্প পলিসি প্রস্তাবঃ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বিষয়ের ছাত্রসংখ্যা ও বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে, এবং জেলায় জেলায় আর নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি না করে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগ চালিত দেশীয় একাধিক EdTech ভিত্তিক প্লাটফর্ম গড়ে তুলে সেগুলোর স্কেইল আপে সরকার সহায়তা দিলে কেমন হতে পারে? এই প্লাটফর্মগুলো দেশীয় ও বিদেশি শিক্ষক ও রিসোর্সের সমন্বয়ে অনলাইনে আন্তর্জাতিক মানের কোর্স সাজাতে পারলে তা বর্তমানের অধিকাংশ নিম্নমানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির চেয়ে বেশি সুফল দেবে! আর দেশীয় প্লাটফর্ম যে শুধু দেশেই ব্যবসা করবে তা নয়, এটি বৈশ্বিক বাজার, যেখানে আমাদের আছে অবারিত ব্যবসার সুযোগ!

এবং নিম্ন আয়ের মেধাবী ছাত্ররা দেশীয়/ বিদেশি প্লাটফর্মে ঐ কোর্সগুলো করার জন্য সরকারের কাছে বৃত্তি পাবে, যেমনটা তারা এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তুকির সুবিধা ভোগ করে!

উচ্চশিক্ষায় নতুন কাঠামোর আলাপ শুরুর সুযোগ ও সময় সমাগত বোধহয়!

লেখক: গালিব ইবনে আনওয়ারুল আজিম, উন্নয়ন গবেষক 

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]