17890

রোমান্টিক পলিটিকস

রোমান্টিক পলিটিকস

2020-06-27 18:26:49

প্রথম দর্শনে মনে হতেই পারে নরমসরম, খানিকটা লাজুক একটু মেয়েলি অবয়ব। অথবা অবাক হতে পারেন এটা শুনে যে তিনিই কিন্তু অযাচিত হঠাৎ বসন্তের দমকা হাওয়ার নীরব স্রোতে হরণ করতে জানেন মনের অজান্তেই মধ্যবয়সী রমণীর নীতিবান হৃদয়টা। আর সংবিৎ ফিরে আসার আগেই হয়তো রমণীকুল ততক্ষণে নিঃসঙ্গ অলস দুপুরে আনমনে গুনগুন করে ‘বেদনা মধুর হয়ে যায়, তুমি যদি দাও’ নতুন করে আরেকবার গাইতে গাইতে আয়নায় চোখ পড়তেই ঠোঁটের কোণে লাজুক হেসে সেই পুরোনো সংসারের মায়াজালে আবার জড়িয়ে পড়বেন নিষ্পাপ অন্তরেই। আঙুলে আঁচল প্যাঁচাতে প্যাঁচাতেই হয়তো মনে মনে বলবেন—যাহ, কী সব উল্টাপাল্টা ভাবছি...

আর সদ্য কৈশোর পেরোনো মেয়েরা...ও বেচারীরা তো বোঝার আগেই, শরতের আকাশপানে চেয়ে উত্তাল মনের রহস্য খুঁজতে থাকার মধ্যেই অনুভব করবে মনের জানালার গরাদে অনাকাঙ্ক্ষিত এক মৃদু দোলা। কে যেন হঠাৎ উঁকি দিয়ে বসন্তের একরাশ আবেগপূর্ণ মিষ্টি হাওয়ার রোমান্টিক সুবাসের ছোঁয়ায় সিক্ত করে দিল কোমল হৃদয়টা।

তারপর না জানিয়েই আবার দিগন্তে মিলিয়ে গেল গোধূলিলগ্নে আগন্তুকের মতো। একরাশ উদাস ভাবনার ডানা মেলে বলাকার মতো তার পিছু নিতে গিয়ে অবশেষে বিষণ্ন মনটা প্রথমবারের মতো বিফল প্রেমের মায়াবী আঁচড়ে একটু ডুকরে কেঁদে বাস্তবতার ময়দানে নেমে এসে জীবনের ভিন্ন স্বপ্ন বোনায় নতুন করে আবার মনোযোগী হবে মেঘবালিকার দল। স্মৃতির পটে আবছা হলেও থেকে যাবে প্রতিচ্ছবিটা, জীবনের প্রথম ক্রাশ হয়েই চিরদিন অমলিন।

নাহ, প্রেমকাহিনি লিখতে বসিনি। মজার ব্যাপার কি জানেন, তিনি নিজে যেচে–পড়ে এই সব কোনো কিছুই করেন না। এর ধারে–কাছেও নেই তিনি। বরং ললনারাই যেন ডেকে আনে মনের কোঠায় তাঁকে, রংবাহারি জীবনের বহুরূপী রঙের দোলায় রাঙাতে। কোনোই অন্যায় নেই তাতে। মন তো আর হাত-পা নয় যে শরীরে বাঁধা থাকবে। ওটা উড়ে বেড়াবেই। this is natural human instinct. আমার পূর্ণ সমর্থন আছে তাতে। ওতে কোনো পাপ নেই। আর উড়বেই না কেন বলেন, আমি নিজেই তো নারী হলে রীতিমতো হরতাল ডেকে বসতাম অটোয়া শহরে গিয়ে, তিনি ‘কবুল’ না বলা পর্যন্ত।

সুদর্শন মায়াবী চেহারার মানুষটাকে দেখে পুরুষেরও যে একটু–আধটু ঈর্ষা হয়, সে কথা হলফ করেই বলতে পারি।

তবে না, এসবও বলার জন্য বসিনি। বসেছি তাঁর প্রতি পাবলিকলি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই। করোনায় আক্রান্তের চ্যাম্পিয়ন দেশটার হাতের নাগালে থেকেও যিনি তাঁর দূরদৃষ্টি, সহমর্মিতা আর ত্বরিত সিদ্ধান্তের কারণেই এখনো ঠিন সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন দিনান্ত কঠোর পরিশ্রম করেই নিজের দেশটাকে। আগলে রাখছেন জাতিটাকে পরম মমতায়। জনগণ যে ভরসা করে আছে তাঁর মেধা, মনন আর হয়তো বাহুবল না হলেও মনোবলের দিকে তাকিয়েই। শুধু কী তা–ই, ১৫ বছরের ওপর প্রায় সবাইকেই আগামী চার–মাস দিচ্ছেন নগদ যথেষ্ট আর্থিক সাহায্য আর থামিয়ে দিয়েছেন বাড়ির লোন আর বড় খরচগুলো আপাতত। একটু আঁচড়ও লাগতে দেবেন না কাউকেই, এমনই ব্রত নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন অনড় যুধিষ্ঠিরের মতো। প্রয়োজনে কেয়ামতকে রুখে দেবেন আপন সিনায়। ভাবখানা এমন যে ‘ছুঁয়েই দেখ না আমার লোককে, আজকে তোর একদিন কি আমার তিন-চার দিন।’

নিন্দুকেরা যা–ই বলুক না কেন, আমার কিন্তু ভীষণ পছন্দের একজন মানুষ। জনগণের নিখাদ ভালোবাসাটা অর্জনের বিদ্যাটা তিনি জানেন। ছিনিয়ে নেন না সেটা বীভৎস অভিশাপের অবরণের মোড়কে, বরং উপহার ভেবেই তাঁর কাছে খাসমনে দিলটা তুলে দেয় মানুষ শ্রদ্ধাভরা অবনত মস্তকে। তাঁর বাবাও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। যোগ্য বাবার সুযোগ্য সন্তান...আর কেউ নন, তিনি কানাডার, তথা আমার প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় জাস্টিন ট্রুডো। বড্ড ভালো মানুষ আমার চোখে।

পলিটিকসের নোংরা খাতায় যেভাবেই তাঁর নাম ঝাপসা কালিতে আবছাভাবেই লেখা হোক না কেন, বিশ্বমানবতার পাণ্ডুলিপিতে নামটা কিন্তু স্বর্ণাক্ষরেই খোদিত হবে পূর্ণ মর্যাদায়। বহুদূর থেকেও সন্ধ্যাতারার মতোই জ্বলজ্বল, ঈশান কোণে লাইট হাউস হয়েই পথ দেখাবে পৃথিবীর অনাগত দিশাহারা প্রজন্মকে, এক হয়ে কাজ করার শিক্ষায় ভবিষ্যতে যখনই ঠেকে যাবে মানব প্রজাতি।

এসব মানুষ কখনো পুরোনো হয় না। তাই উঠতি বয়সের ছবি আঁকাটাই যৌক্তিক। ১৪ ঘণ্টা কাঠপেনসিলের সঙ্গে যুদ্ধ করে আঁকার শেষে মন বলে, প্রাপ্যটা তাঁর ঠিকমতো পরিশোধ হলো না। তাই সঙ্গে আমার আকুণ্ঠ নির্ভেজাল শ্রদ্ধা, নিষ্কণ্টক সফলতা আর সফেদ শুভকামনা থাকল এই লিভিং লিজেন্ডের জন্য।

ওদিকে আজও বিশ্বাস রাখি, পরপারে যাওয়ার আগে কোনো একদিন আমার মাতৃভূমির প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও যেন এমনই গর্বভরে একবার এঁকে–লিখে যেতে পারি। নিজে তিনি যতই চেষ্টা করুক না কেন, অন্যদেরও সচেষ্ট হতে হবে!

রিয়াজ রব্বানী, টরেন্টো, কানাডা

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]