20524

বিবাহ বিচ্ছেদের সংবাদ গণমাধ্যমে আসাটা কি জরুরী?

বিবাহ বিচ্ছেদের সংবাদ গণমাধ্যমে আসাটা কি জরুরী?

2020-12-01 19:56:51

বিবাহ একটি সুন্দর ও স্বর্গীয় সম্পর্ক যার মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ও ভালবাসার স্থায়িত্ব গড়ে উঠে। এই সম্পর্কের মাধ্যমেই সমাজ গড়ে উঠে, সমাজ ও দেশ পায় সুনাগরিক এবং মানব সভ্যতার বিচরণ। তবে নানা সময়ে দেখা যায় বিবাহের পরে বিবাহ বিচ্ছেদের মত করুণ ঘটনা, যা অনাকাঙ্ক্ষিত স্বামী বা স্ত্রীর জন্যেতো বটেই, পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও।

এদেশে প্রায় প্রতিটি শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ দেখা যায় । ইদানীং দেখা যাচ্ছে, বিখ্যাত তারকাদের বিবাহ বিচ্ছেদের কিছু সংবাদ কিছু কিছু গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে আর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে, যা সমাজে অন্যান্য মানুষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ অনেক মানুষ তারকাদের অনুসরণ করে থাকে, তাদের কাজের মাধ্যমে তারা দিক-নির্দেশনা পেয়ে থাকে জীবন কাটাবার। অনেকের পারিবারিক সমস্যার কারণে হয়তো বিবাহ বিচ্ছেদ জরুরী হয়ে দাঁড়ায়। তবে তা গণমাধ্যমে আসাটা কোনোভাবেই ভাল বিষয় নয়। এতে সাধারণ মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।বিশেষ করে ভেঙে যাওয়া পরিবারের শিশুদের ওপর এই ধরনের সংবাদের ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে। প্রতিটি শিশুরই একটি চেনা জগৎ রয়েছে। মা-বাবার বিচ্ছেদের খবর ছড়িয়ে পড়লে ভেঙে যাওয়া পরিবারের ঐ শিশুটিকে সেই চেনা জগতের মানুষের কাছে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে লজ্জায় বা বিব্রত হবার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চায় শিশুটি।

বিবাহ বিচ্ছেদ পরিবার ও পারিবারিক বন্ধনকে দুর্বল করে দেয়। মূলত পরিবার রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম এবং কার্যকর সংগঠন। সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ পরিবারে বেড়ে ওঠে, শিক্ষাগ্রহণ করে, নৈতিকতা শেখে, জীবনে চলার পথ পায়, জীবনবোধ শেখে ইত্যাদি।

পরিবারের সবচেয়ে বড় সংগঠক বাবা- মা।দেখা যায় যেসব পরিবারে বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভাল, সাধারণত তাদের সন্তানরা শান্তিপ্রিয় হয়, মানুষকে ভালবাসে, সমাজের ক্ষতি হয় এমন কাজ তারা করে না। অন্যদিকে বাবা-মায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে অর্থাৎ পারিবারিক কলহে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, বিপথে চলে যায়, হীনমন্নতায় ভোগে, সর্বপরি তা সুনাগরিক হবার পথে বাধা হয়ে দাড়ায়।

এখন প্রায়ই দেখা যায় আশংকাজনক হারে বিবাহ বিচ্ছেদের মত পরিবার ভাঙ্গার ঘটনা যা অতীতে এই সংখ্যা অতি সামান্যই ছিল। এমনও দেখা যায়, বিয়ের ৯-১০ দিনের মধ্যেও বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে! আর এক-দুই বছর সংসার করার পরেও অনেক বিয়ে ভেঙে যায়! অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রেমের সম্পর্কের বিয়েও নানাবিধ কারণে বিচ্ছেদ হচ্ছে। এই ধরনের বিচ্ছেদের ফলে পরিবার নামক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে পরিবার ভাল নাগরিক যেমন দিতে পারছে না, তেমনি পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।লক্ষ্য করা যায়, এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা যাদের বয়স হয়তো একা চলার মতই নয়।

বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকানোর জন্য সামাজিকভাবে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। এখানে গণমাধ্যম বিরাট ভুমিকা পালন করতে পারে যেমন, গণমাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের নেতিবাচক বিষয়গুলো উপস্থাপন করা এবং টেকসই পরিবার গঠনের ব্যাপারে নানাভাবে মানুষের কাছে বার্তা দিতে পারে। তাছাড়া পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করে দাম্পত্য সমস্য সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে আন্তরিকভাবে স্বামী ও স্ত্রীকে। বলা বাহুল্য স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক বোঝাপড়া করে সংসার করা যেমন জরুরী তেমনি পারস্পারিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও ভালবাসা থাকাও জরুরী। পরিস্থিতি এমন যে রাষ্ট্রকেও এগিয়ে আসতে হবে এসকল বিষয়ে।

লেখক,
আহমেদ রেজা,
উপ-পরিদর্শক,
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
[email protected]

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]