22123

একজন শিক্ষানুরাগী বিজ্ঞানী ড. মংসানু

একজন শিক্ষানুরাগী বিজ্ঞানী ড. মংসানু

2021-05-31 21:29:58

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের জিন রহস্য উন্মোচনের নেপথ্যের কারিগর ড. মংসানু মারমা। মংসানু মারমা শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, একজন শিক্ষানুরাগী এবং সমাজসেবকও বটে। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সিঙ্গিনালা গ্রামের শিক্ষক পরিবারে ড. মংসানুর জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া এই কৃতি শিক্ষার্থী আজ মার্কিন মুলুকের বোস্টন শহরে প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট হিসেবে মিল্টনেয়ি বায়োটেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। জিনোম সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং পরবর্তীতে পিএইচডি করেছেন সার্দান ক্যালিফোনির্য়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনথেটিক ওরগানিক ও বায়ো-অরগানিক রসায়নের উপর।

ছাত্রজীবনে বাংলাদেশের জননন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের অত্যন্ত প্রিয়ছাত্র ছিলেন ড. মংসানু। কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকা অবস্থায় মংসানু মারমাকে ব্যাপক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। ড. মংসানু তার প্রিয় শিক্ষক হুমায়ুন আহমেদ কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায়। একজন বিখ্যাত গুরুর বিখ্যাত শিষ্য- ড. মংসানু।

মংসানু মারমার উদ্ভাবিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আমেরিকার পেটেন্ট অফিস কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত। সুদূর আমেরিকার বোস্টন শহরে থেকেও তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের অনুন্নত এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির প্রত্যন্ত দুরছড়ি গ্রামে বিজ্ঞানী মংসানুর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত ‘বিশাখা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই স্কুলটিতে যাতায়াত ব্যবস্হা অত্যন্ত খারাপ হওয়ার দরুন অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল; কিন্তু মংসানু মারমার বদৌলতে ও স্হানীয় প্রশাসনের সহায়তায় যাতায়াত ব্যবস্হারও ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। শুধু দুরছড়ির বিশাখা স্কুল-ই নয়, গুনগত শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য ড. মংসানু গুইমারা উপজেলার কালাপানি গ্রামে ‘Kalapani Elephant Hills School ‘ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদেরকে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদানের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, সে স্বপ্নের দিকে তিনি ধাবিত হচ্ছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো অনুন্নত এলাকার শিক্ষার গুনগত মানকে বৃদ্ধি করার জন্য হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও ড. মংসানু কাজ করে যাচ্ছেন। পশ্চাৎপদ এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি কুসংস্কারমুক্ত ও বিজ্ঞানমনস্ক একটি প্রজন্ম গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন। কৃতি এই বাংলাদেশি বিজ্ঞানী হাজারো কাজের ভিড়ে দেশমাতৃকার প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। মানুষ যে তার স্বপ্নের চেয়েও বড় সেটি ড. মংসানু প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। গুনগত শিক্ষার আলো যেন দেশের সকল প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়ুক, কালাপানি স্কুল কিংবা বিশাখা স্কুল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রতিথযশা বিজ্ঞানী ড. মংসানু মারমার মতো মানুষরাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুন্দর বাংলাদেশ গঠনের সৈনিক।

লেখক: পার্বন চাকমা, শিক্ষার্থী আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]