23910

ঢাবি হল ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রকৃত প্রত্যাশা

ঢাবি হল ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রকৃত প্রত্যাশা

2022-01-24 01:42:11

গ্রামে একটা কথা আছে- গরীবের বউ সবার ভাউজ৷ ভাউজ মানে হলো ভাবি৷ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্র রাজনীতি হলো তেমন গরীবের বউ৷ কিছু ঘটলেই দোষ পড়ে ছাত্র রাজনীতির ঘাড়ে৷ কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু ঘটলেই দাবি ওঠে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের৷ এই প্রবণতা নতুন নয়৷ অনেকদিন ধরেই চলে আসছে৷

বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন ছাত্র সংগঠনের গুটিকয়েক পথভ্রষ্ট অনুপ্রবেশকারী নেতারা যখন হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে পড়েন; তখনই সবাই শোর তোলেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধের৷ বাংলাদেশের কোন পেশার মানুষের মধ্যে অবক্ষয় নেই- পুলিশ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক; কোনো পেশায় বেশি,কোনো পেশায় কম; তাই বলে কি কোনো পেশা বন্ধের দাবি উঠেছে? সব দোষ তাহলে ছাত্ররাজনীতির হবে কেন?

এখন দেশে একটা বিপদজনক রাজনীতিবিমুখ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে৷ জিজ্ঞেস করলেই তারা স্মার্টলি জবাব দেয়, ‘আমি রাজনীতি পছন্দ করি না৷' শুধু নতুন প্রজন্মই নয়, সব বয়সের মানুষের মধ্যেই রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের অনীহা কাজ করে৷ সাধারণ মানুষ রাজনীতিকে এক ধরনের ভয় পায়৷ তাই দূরে থাকে৷ এখন আর কেউ চান না, তার সন্তান ছাত্ররাজনীতি করুক৷ আর মন্ত্রী-এমপি-নেতা-আমলারা তো তাদের সন্তানদের বিদেশেই পড়ান৷ তাই দেশ, রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতি গোল্লায় গেলে তাদের যেন কিছু যায় আসে না৷ এই প্রবণতা দেশ ও জাতির জন্য বিপদজনক৷ তাহলে কি আমরা নিজেরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকবো আর জেনেশুনে দুর্বৃত্তদের হাতে দেশটা লিজ দিয়ে দেবো? ব্যাপারটা যদি এমন হয়, মেধাবীরা সব বিসিএস ক্যাডার হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে বা ভালো চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যাবে আর ছাত্র হিসেবে খারাপ এবং স্বভাবে মাস্তানরাই শুধু রাজনীতি করবে; তাহলে আমাদের কপালে সত্যি খারাবি আছে৷ কারণ ব্যাপারটা খুব সহজ, সাধারণ নিয়মে যারা রাজনীতি করবে, তারাই ভবিষ্যতে এমপি হবে, মন্ত্রী হবে; রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করবে৷ একটু কল্পনা করুন, ক্লাসের মেধাবী ছাত্রটি বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে গেল আর মাঝারি মানের ছাত্রটি রাজনীতি করলো৷ যে ক্যাডার সার্ভিস এ গেল সে প্রমোশন পেতে পেতে সচিব হলো৷ আর মাঝারি ছাত্রটি ধাপে ধাপে মন্ত্রী হলো৷ এখন মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত কিন্তু মন্ত্রীই নেবেন, সচিব তা কার্যকর করবেন শুধু৷ তার মানে কম মেধাবীরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, আর বেশি মেধাবীরা তা কার্যকর করছেন৷ ব্যাপারটা যদি উল্টো হতো যদি মেধাবীরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় থাকতো, তাহলে তা দেশ ও জাতির জন্য আরো কল্যাণকর হতো৷
আমি বলছি না, সব ছাত্রকেই রাজনীতি করতে হবে৷ যার রাজনীতি ভালো লাগে সে রাজনীতি করবে, যে একাডেমিকভাবে ভালো করতে চায়, সে তাই করবে৷ কিন্তু কলমে প্রাজ্ঞ কিংবা একাডেমিশিয়ানকে মূল্যায়ন না করে অপেক্ষাকৃত দূর্বল শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন রাজনীতিবিমুখ প্রজন্ম সৃষ্টি করবে। এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বৈপরীত্য!

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, পারিবারিক আওয়ামী ঐতিহ্যের পাশাপাশি রাজপথ ও কলমী প্রাজ্ঞের অধিকারীদের সুন্দর সমন্বয়ের মাধ্যমে আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নেতৃত্বে আসবে বলে বিশ্বাস করতে চাই। শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে, আপনার কাছের ছোট ভাইটাকে পদায়িত না করে, প্রকৃতপক্ষে যারা পিতা মুজিবের আদর্শিক কর্মী, শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে তাদের পদায়ন করুন। আর অতীতের অনেকের মতো সেটা আপনারা করতে সমর্থ না হলো আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব চলে যাবে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী, কালোবাজারি আর দৃর্বৃত্তদের হাতে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গত দুই যুগের শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ নেতৃত্বই উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট থেকে। এরমানে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের ইউনিট গুলোতে কি মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী পরিবার নেই? তাদের কি লড়াই সংগ্রামের সক্ষমতা নেই?
অবশ্যই আছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মেধাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব বরাবরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাধান্য পায়। তবে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ইউনিটে নেতৃত্ব বাছাইয়ে আমরা কেন সর্বোচ্চ মেধাবী কিংবা একাডেমিশিয়ান তথা কলমী প্রাজ্ঞদের মূল্যায়ন আশা করবো না?

বর্তমান সমাজ তথা দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রজন্ম গড়ে উঠেছে।
গত ক'বছরে যারা গুজব প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিদের বিরুদ্ধে যুক্তির ফিরিস্তি তুলে ধরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকাজ নিজ লেখনীর মাধ্যমে সাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়েছে তাঁরাও মূল্যায়িত হোক।

সর্বোপরি যোগ্যতম নেতৃত্ব উঠে আসুক। আর সেটা যদি না হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে এই ম্যাসেজ যাবে যে, মেধাবীদের মূল্যায়ন এখানে হয়না। আবারও "I hate politics" প্রজন্ম হাতে তালি বাজাবে।

জয় বাংলা,
জয় বঙ্গবন্ধু,
জয়তু দেশরত্ন।

আপেল মাহমুদ
সহ-সভাপতি,
স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগ।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]