23928

লিফট নাকি মৃত্যুর ফাঁদ!

লিফট নাকি মৃত্যুর ফাঁদ!

2022-01-25 09:01:49

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমিক ভবনের লিফট যেন মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। এই লিফটে আটকা পড়ে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনা যায়। গতকাল প্রায় ২৪ মিনিট লিফটে আটকা পড়েন যবিপ্রবির সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও এপিপিটি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। একইভাবে আজকে আটকে পড়েন ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. সাইবুর রহমান মোল্ল্যাসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক ড. মৃত্যুঞ্জয় বলেন, সকাল ৮ টা ৩৫ মিনিটে আমি লিফটে উঠেছিলাম। ওঠার শুরুতেই প্রথমে একটি বিকট শব্দ হয়। আমি প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আগে একবার বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমি আটকা পড়ি। ভেবেছিলাম আগেরবারের মতো কিছু কিন্তু এইবার এইরকম কিছু ছিল না। সুইচ চাপলেও দরজা খুলেনি, লিফটে তখন তিনতলার রয়েছে বলে দেখাচ্ছিলো। প্রায় ২৪ মিনিট হয়ে গেলেও লিফট চালু হয়নি। এরপর আমি ইঞ্জিনিয়ার মিজানকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে আমি প্রধান প্রকৌশলী আনিসকে ফোনে আমার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানায়। এরপর তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা আপনাকে উদ্ধার করার জন্য লোক পাঠাচ্ছি। এরমধ্যে আমি বিভিন্ন জায়গায় কথা বলি কিন্তু কারোর ফোনের কোন রিপ্লাই আসেনি। এসময় আমি উপায় না পেয়ে উপাচার্যের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কয়েকবার চেষ্টা করার পর উপাচার্য ফোন রিসিভ করলে আমি তাকে আমার এই বিপর্যয়ের কথা জানায়। তিনি আমাকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। এরপর আমি আমার পিওনকে ফোনে আমার অবস্থার কথা জানালে সে দ্রুত মেকানিককে সাথে করে নিয়ে আসে। এসময় লিফটে তিন তালা অবস্থান দেখালেও তারা আমাকে তিন তালায় খুঁজে পায় না পরবর্তীতে চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় দরজা খুলে তারা আমাকে পঞ্চম তলায় পায়। আমার এবং লিফটের অবস্থান ছিল পঞ্চম এবং ষষ্ঠ তলার প্রায় মাঝামাঝি।

তিনি আরো বলেন আমি লিফটের মধ্যে প্রায় ২৪ মিনিট একা একা ছিলাম। আমি আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। আমার মনে হচ্ছিল বসে পড়ে ঈশ্বরের নাম ডাকি। আমি যখন লিফট থেকে বের হয়েছি আমার মনে হয়েছে আমি যেন এক নতুন জীবন পেয়েছি। এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন যেন আর কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী না হয়।

তিনি বলেন, আমাদের একাডেমিক ভবনের লিফটের সার্ভিস মোটেও সন্তোষজনক না। লিফটে উঠলে প্রায়ই ঝাঁকুনি অনুভব করি।

লিফটে আটকে পড়ে যবিপ্রবির ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন ও ইএসটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্ল্যা বলেন, আমি লিফটের মধ্যে প্রায় ৭-৮ মিনিট আটকে ছিলাম। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি যথারীতি ঘাবড়ে যাই। আমার জায়গায় যদি কোন শিক্ষার্থী আটকে পড়তো তাহলে তার মানসিক অবস্থা কেমন হতো? এর আগে আমি কর্তৃপক্ষকে বরাবর এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছি কিন্তু তারা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা সেটা তাঁরাই ভালো জানে।

আর কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী যেন এই ধরণের বিপর্যয়ের সম্মুখীন না হতে হয় এবং যতদ্রুত সম্ভব প্রশাসন যেন এটি মেরামত ও মেন্টেনেন্স এর দায়িত্ব নেয়।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আনিসুর রহমান বলেন, এবিষয়ে আমি তো ভালো বুঝি না তবে মেইনটেনেন্স না করার জন্য হয়তো এ সমস্যাগুলো হচ্ছে। কিছু সমস্যার কারণে সিকিউরিটি মানি না দেওয়ায় গত ৩ মাস কেউ মেইনটেনেন্স করতে আসেনি। তবে আজকের মিটিংয়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে আশা করি।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]