দশম থেকে ৩৬তম অবস্থানে শাবিপ্রবি
2022-10-12 07:08:44
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০২১-২২ অর্থ-বছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূল্যায়নে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৬তম অবস্থানে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছর তালিকার ১০ম অবস্থানে ছিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। তবে কী কারণে ইউজিসির এপিএ মূল্যায়নে বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৬ ধাপ পিছিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
ইউজিসির প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলোর ক্ষেত্রে ৭০ নম্বর, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনার ক্ষেত্রে ১০ নম্বর, ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন পরিকল্পনায় ১০ নম্বর, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় ৪ নম্বর, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি কর্মপরিকল্পনায় ৩ নম্বর এবং তথ্য অধিকার কর্ম পরিকল্পনায় ৩ নম্বরসহ ১০০ নম্বরে মূল্যায়ন করা হয়।
এতে গত বছরের ধারাবাহিতায় সর্বোচ্চ ৯৯.৪৭ নম্বর পেয়ে প্রতিবেদনে প্রথম স্থানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রতিবেদনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গত বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৭৬.৪৪ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় ও সামগ্রিকভাবে ১০ম অবস্থানে ছিল। তবে এ বছর ৪৭.০৬ নম্বর পেয়ে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৭ম ও সামগ্রিকভাবে ৩৬তম অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এ তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সর্বনিম্ন ১১.৪৭ নম্বর পেয়ে তালিকার শেষে ৪৬তম অবস্থান রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে অনেক কিছুর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় বলে পরিচিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ তৈরি, মোাবাইলফোনে ভর্তিপ্রক্রিয়া চালু, রোবট তৈরি, সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা, গবেষণা, উদ্ভাবন ও সাংস্কৃতিক চর্চার দিক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এমনকি সামগ্রিক পারফরম্যান্সে ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
তবে প্রশ্ন ওঠে, বিশ্ববিদ্যালয়টির এত অর্জন থাকার পরেও হঠাৎ ইউজিসির মূল্যায়নে এত বিপর্যয়? এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের আবাসিক হলের তিন দফা দাবির প্রেক্ষিতে চলমান আন্দোলনের কারণে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ছিল। এমনকি এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাসও বন্ধ হয়ে যায়। তবে ইউজিসির নিয়ম ও চুক্তি অনুসারে প্রতি তিন মাস পরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ২৫ মার্কের কর্মসম্পাদনের রিপোর্ট দিতে হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ২৫ মার্কের কোনও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি শাবি কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। সুতরাং রিপোর্টে কোনও নম্বর যোগ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
বার্ষিক কর্মসমপাদন চুক্তির বিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে চুক্তি হয়। এর আলোকে প্রতি তিন মাস অন্তর ইউজিসিতে প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য অনেক কিছু ব্যহত হয়েছে। অর্থবছরের অর্ধেক সময় নানা সমস্যার ভেতর দিয়ে সময় পার হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত ট্রেনিং প্রোগ্রাম, কর্মশালা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে গত অর্থবছরে আয়োজন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে রিপোর্টে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অনেক কিছুতে বিশেষ অবদান রেখেছে। যদিও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এতে প্রশাসনিক কাজও অনেকাংশে ব্যহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ হয় না। কিছু জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক কাজেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
শাবির ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুহসিন আজিজ খান বলেন, আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না। তবে বাৎসরিক কি কি করবে তা নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। চুক্তি অনুসারে কাজের আপডেট প্রতিবেদন একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর ইউজিসিতে দিতে হয়। সেই রিপোর্ট অনুসারে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউজিসি।
ইউজিসির চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য ইনপুট দিতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে ইউজিসির কেবিনেট ডিভিশনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য ইনপুট দিতে হয়। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুসারে প্রতিবেদন নির্দিষ্ট সময়ে ইনপুট দেওয়া হলেও চলতি বছর জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত অর্থবছরের মাঝামাঝি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এ সময়ে ইউজিসির পূর্ব নির্ধারিত সময়ে যথাযথ রিপোর্ট সাবমিট করা সম্ভব হয়নি। আমরা এ অর্থবছরে বিশেষভাবে বিষয়টিতে নজর রাখবো। পাশাপাশি কর্ম পরিকল্পনা ক্যাটাগরি ভিত্তিক শতভাগ সাফল্য অর্জনেও তদারকি কমিটি করে দেওয়ার কথাও জানান উপাচার্য।
উল্লেখ্য, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার উন্নয়ন, সব স্তরের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা নির্ধারণ ও সরকার ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ ও রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সঙ্গে ইউজিসির প্রথম এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে আওতাধীন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর ও মূল্যায়ন করে আসছে ইউজিসি।