26699

আসাদ এসেছিল খবর দিতে, আর আসাদ আজকে এলো খবর হয়ে

আসাদ এসেছিল খবর দিতে, আর আসাদ আজকে এলো খবর হয়ে

2023-01-20 18:22:21

মওলানা ভাসানী ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘হাট হরতালের’ ডাক দিয়েছিলেন। নিজ বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদি থেকে সেই হাট হরতালে অংশগ্রহণ করেছিলেন আসাদ। এ কারণে তিনি পুলিশের হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই ঢাকায় আসেন এই খবরটি দিতে। এর কিছুদিন পরেই তিনি নিজে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে যান।

১৪৪ ধারা ভাঙ্গার কারণে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেই সময় দৈনিক পাকিস্তানে পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক নির্মল সেন লিখেছিলেন, ‘আসাদ এসেছিল খবর দিতে, আর আসাদ আজকে এলো খবর হয়ে।’

পুলিশের গুলিতে নিহত এই ছাত্রনেতার নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তার মৃত্যুতেই ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়। যার ধারাবাহিকতায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পান শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৪ জন। পতন ঘটে বেসিক ডেমোক্রেসির কর্ণধার স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের। তারই ধারাবাহিক আন্দোলনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

এই ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানই পরে খ্যাতি লাভ করেন শহীদ আসাদ হিসেবে। যার নামে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের প্রবেশপথে একটি বিশাল তোরণ শোভা পাচ্ছে। এই তোরণ বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘আসাদ গেট’ নামে পরিচিত। 

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের এই পথিকৃৎ শহীদ আসাদের আজ ২০ জানুয়ারি মৃত্যু দিন। দিনটিকে সকল রাজনৈতিক দল আসাদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। 
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ডাকসুসহ চার ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ)-এর নেতৃবৃন্দ ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে এবং ছাত্রদের পক্ষ থেকে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। তৎকালীন ইকবাল হলে ওই সময়ের ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদের ৩১৩ নম্বর কক্ষে বসেই ১১ দফার ভিত্তিতে গণআন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

১১ দফার মধ্যে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কিত ৬ দফার সঙ্গে ছাত্র সমস্যাকেন্দ্রিক দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থসংক্রান্ত দাবিসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 
বস্তুত ১১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্র নেতারা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তা ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একটি আন্দোলনগত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া এ সময় থেকেই শেখ মুজিবের মুক্তি ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রাধান্য পেতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদসহ (ডাকসু) ছাত্র সংগ্রাম কমিটির পূর্ব বাংলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ঊনসত্তরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১১ দফা কর্মসূচি ঘোষিত হওয়ার পরপরই ৮ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ও মোজাফফর ন্যাপসহ আটটি রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)। তারা ফেডারেল পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার, প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমান, খান আবদুল ওয়ালী খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি দাবি করে এবং দাবিগুলো বাস্তবায়নের পক্ষে গণআন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে ‘ডাক’ভুক্ত উগ্র ডানপন্থি কয়েকটি সংগঠন ছাত্র সংগ্রাম কমিটির দেওয়া ১১ দফা কর্মসূচিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আন্দোলন ক্রমেই দানা বেঁধে ওঠে এবং ১১ দফার চেতনা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি সরকারপন্থি ছাত্র সংগঠন এনএসএফের একটি অংশও তাদের ‘সংগ্রামী ২২ দফা’ কর্মসূচি নিয়ে প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। 

১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রদের ১১ দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র সংগঠনের নেতারা। সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আসাদ। সে সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) ঢাকা হল শাখার সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সংগঠক। 

১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবনের বটতলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এটিই ছিল ১১ দফা প্রণয়নের পর সংগ্রাম কমিটির প্রথম কর্মসূচি। ওই সমাবেশ থেকে এগারো দফার বাস্তবায়ন এবং ছাত্র জনতার ওপর পুলিশ ও ইপিআর বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি ২০ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালনের ডাক দেয়।

....

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]