27585

৪২ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক

৪২ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক

2023-05-25 01:47:55

উত্তরবঙ্গের শিক্ষা দর্পণ নামে পরিচিত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। কিন্তু শিক্ষক সংকট চরমে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে আবেদন করলেও এখনো হয়নি নতুন নিয়োগ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন কার্যক্রম।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক ১৮৮ জন আছেন। অর্থাৎ প্রতি ৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। এদের মধ্যে শিক্ষাছুটিতে আছেন ২৮ জন শিক্ষক। এ হিসাবে প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র একজন শিক্ষক। ফলে অতিরিক্ত ক্লাসের চাপে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রম।

বৈশ্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন শিক্ষক থাকবেন। জাতীয় পর্যায়েও দেশের সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ মানদণ্ড অনুসরণে উৎসাহিত করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যদিও সে লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে দেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

অথচ ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলে বাস্তবে তার উল্টো পথে হাঁটছে রংপুরের এ বিশ্ববিদ্যালয়।

ফলশ্রুতিতে গড়ে একজন শিক্ষককেই নিতে হচ্ছে ৮-১০টি কোর্স। অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষার চাপে গবেষণা কার্যক্রমে যথেষ্ট সময় দিতেন পারছেন না শিক্ষকরা। কার্যত ঝিমিয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা কার্যক্রম।

১৮৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ২৮ জন শিক্ষক আছেন শিক্ষা ছুটিতে। বাকি ১৬০ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। এতে বিভাগ প্রতি গড়ে মাত্র ১১ শিক্ষক আছেন। ২২টি বিভাগের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, লোকপ্রশাসন, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের নাজুক অবস্থা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চার বছর মেয়াদের আট সেমিস্টারের স্নাতকে পড়ানো হচ্ছে ন্যূনতম ৪৮টি কোর্স এবং এক বছর মেয়াদের দুই সেমিস্টারের স্নাতকোত্তরে পড়ানো হয় ন্যূনতম ১২-১৪টি কোর্স। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় এক শিক্ষককে নিতে হচ্ছে ৮-১০টি কোর্স। কিছু বিভাগে তারও বেশি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ বলেন, শিক্ষক সংকটের জন্য প্রধানত একাডেমিক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের শিক্ষকদের যেমন ব্যক্তিগত গবেষণার জায়গা থাকে, তাদের নিজেদের পড়াশোনার জায়গা থাকে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ন্যূনতম যে নির্দেশিকা সেটা আমরা পালন করা স্বত্বেও ইউজিসি শিক্ষক দিচ্ছে না। এছাড়া ওয়ার্কলোড ক্যালকুলেশনে যে পরিমাণ শিক্ষক থাকার কথা সেটিও নেই।

তিনি আরও বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত চার বছর শিক্ষকদের কোনো পদ চাওয়া হয়নি। ফলে বর্তমান উপাচার্যের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যার ফলশ্রুতিতে আমরা পদ পাচ্ছি না। অতীতে যদি পদ চাওয়া হতো তাহলে শিক্ষকদের সংকট এখন অনেকটা কমে যেত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শিক্ষক চাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে চিঠি পাঠিয়েছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট আছে। শিক্ষকের পদ চেয়ে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে আবেদন করেছি। পদ পেলে নিয়োগ দেওয়া হবে।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]