27777

রেজা-নুরের দ্বন্দ্ব চরমে

রেজা-নুরের দ্বন্দ্ব চরমে

2023-06-20 05:46:31

বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া এবং সদস্য সচিব নুরুল হক নুর সম্প্রতি একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি নানা অভিযোগ তুলছেন। গণঅধিকার পরিষদে সোমবার রাতে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হিসেবে রাশেদ খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। 

একে অপরকে সরকারি এজেন্ট বলে আখ্যা দিচ্ছেন তারা। দলটির একটি সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগিরই দলের কাউন্সিলের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। 

গণঅধিকার পরিষদের একটি সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৮ জুন) রাতে গুলশানে রেজা কিবরিয়ার বাসায় গণঅধিকার পরিষদের বৈঠক হয়। সেখানে রেজা কিবরিয়া কেন ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের ইনসাফ কায়েম কমিটির অনুষ্ঠানে গিয়েছেন তা জানতে চান নুর। তখন রেজা কিবরিয়া নুরুল হকের কাছে জানতে চান, গণঅধিকার পরিষদের নামে প্রবাস থেকে আসা টাকার হিসাব কোথায়? কেন তিনি ইসরায়েলি মেন্দি এন সাফাদি ও তার ‘বাংলাদেশি বন্ধু’ শিপন কুমার বসুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন? এসব প্রসঙ্গ নিয়ে বৈঠকের পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

পরে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আবারও গণঅধিকার পরিষদের মিটিং ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে রেজা কিবরিয়া থাকবেন না বলে জানা গেছে।

  • নুরের টাকার লেনদেন নিয়ে দলের নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। এটা এড়াতে তিনি ইনসাফে আমার যাওয়া নিয়ে হইচই করেছেন: গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, নুর কিছুটা ঝামেলা করছেন। তবে সেটা ইনসাফ কায়েমে যাওয়া নিয়ে নয়। নুরের টাকার লেনদেন নিয়ে দলের নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। এটা এড়াতে তিনি ইনসাফে আমার যাওয়া নিয়ে হইচই করেছেন। নুরের বিরুদ্ধে দুই-তিনটা ইস্যু আছে, যেটা দলের নেতাকর্মীরা পছন্দ করেননি।

তিনি বলেন, এক হচ্ছে বিদেশ থেকে যে টাকা-পয়সা আসে সেটার কোনো হিসাব দিতে রাজি নন নুর। এখানে অনেক টাকা আসে। প্রবাসীদের কমিটিতে নিজেকে তিনি প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছেন। সেখানে দলের আর কাউকে রাখেননি। প্রবাসীদের পুরো টাকা তিনি নিজেই রাখেন। দ্বিতীয় হচ্ছে, দলের মধ্যে অসন্তোষ মেন্দি এন সাফাদি ও শিপন বসুর (যারা হিন্দু সমাজের নতুন রাষ্ট্র করতে চায় উত্তরবঙ্গে) সঙ্গে নুরের যোগাযোগটা কেন? সেটা কি আমাদের কোনো রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নাকি তারা টাকা দিয়েছেন। তাকে টাকা দেওয়ার বিষয়টা নিয়ে দলের অনেকেরই সন্দেহ আছে।

রেজা কিবরিয়ার অভিযোগ, দুবাইয়ে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে মিটিং করতে নুর ট্যাক্সি দিয়ে যাননি। তাকে আমাদের লোক (দুবাইয়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা) গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তারাই আমাদের কনফার্ম করেছেন যে, এ রকম মিটিং হয়েছে এবং মিটিং শেষে তিনি (নুর) একটা কালো ব্যাগ নিয়ে ফিরেছেন। তবে কালো ব্যাগে কী ছিল সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমাদের প্রশ্ন হলো, তুমি ইসরায়েলিদের সঙ্গে মিটিং করছে, এটার কারণ কী? কারণটা আমাদের বলো? তবে তিনি তা বলতে রাজি নন।

  • ড. রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক এবং নুরুল হক নুরকে সদস্য সচিব করে ২০২১ সালের অক্টোবরে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ।

তিনি আরও বলেন, শিপন বসুর সঙ্গে বৈঠক করে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী নিয়ে তারা পৃথক হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করেছেন। এর পৃষ্ঠপোষক হলো মেন্দি এন সাফাদি। তিনি কেন সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন? কীসের লোভে? আমাদের কাছে কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। তিনি এটাকে এড়াতে গিয়ে আমার ইনসাফ কায়েমে যাওয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, আমার কথা খুব পরিষ্কার, সরকারবিরোধী মিটিংয়ে আমি যাব। সরকারের বিরুদ্ধে যে দলই মিটিং করুক, তারা যদি দাওয়াত দেয় তাহলে আমি যাব। কোনো অসুবিধা নেই। আমি তো সরকারের পক্ষে কোনো কথা বলিনি। আমি সরকারের পক্ষে মিটিং করেছি- এ দাবি তো হাস্যকর। নুর বলছেন, আমি সরকারের এজেন্টদের পক্ষে কাজ করছি। আমার সন্দেহ তিনি সরকারি দলের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে দলে একটা ভাঙন তৈরি করার জন্য কাজ করছেন। আমি তাকে সন্দেহ করি... তিনি সরকারি এজেন্ট হতে পারেন! যদিও আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। তবে একদিন প্রমাণ পাব, যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। তখন আমি সব খবর পেয়ে যাব। মানুষের সামনে তা তুলে ধরতে পারব। আমার সন্দেহ সরকারি স্বার্থ রক্ষার জন্য দলে একটা ভাঙন তৈরি করার চেষ্টা করছেন নুর।

তিনি বলেন, সমস্যাগুলো হলো- প্রবাসীদের টাকা কোথায় যায়! ইসরায়েলিদের সঙ্গে কেন তিনি গোপন মিটিং করলেন? ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে তার কী আলোচনা হয়েছে? সেগুলো তো আমরা জানি না। এসব জানাতে চাওয়া হলে, কোনো উত্তর নুর দিতে পারেননি। তখন তিনি উল্টো আমাকেই চার্জ করেছেন যে, ইনসাফ কায়েমের মিটিংয়ে গেছি, এটা বিএনপিবিরোধী গ্রুপ। তখন আমি বলেছি, আমি তো বিএনপির এজেন্ট না। বিএনপির সদস্যও না, তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে কোনোকিছু স্বাক্ষরও করিনি। আর ইনসাফ কায়েম কমিটিতেও আমি নেই। অতিথি হিসেবে সেখানে গিয়েছি। সরকারবিরোধী যেকোনো চক্রে আমি থাকব। কারণ আমি চাই, এ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হোক। এ ব্যাপারে কারো কাছে জবাবদিহি করা বা কারো হুকুমে আমি চলি না। নুর আমাকে হুকুম দেবে, এভাবে তো চলবে না। আমাকে নিয়ে যে ধরনের প্রশ্ন করেছেন, সেটা খুবই বাজে এবং অসম্মানজনক বক্তব্য। এ ধরনের লোকের সঙ্গে আমি কাজ করতে চাই না। যদি অসৎ লোকের সঙ্গে কাজ করতে হয় তাহলে আমি তো আওয়ামী লীগে থাকতাম। সেখানে ভালো অবস্থানে থাকতাম।

তাহলে কি আপনি গণঅধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে যাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রেজা কিরবিয়া বলেন, আমি পার্টির সঙ্গে থাকব। তারা যদি বের করতে চেষ্টা করে তাহলে করুক। এটি ছাড়ার কোনো কারণ নেই। আমার ধারণা দলের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোক আমার পক্ষে। নুরের এ ঘটনায় একটা ছোট গ্রুপ জড়িত। কারণ তারা টাকা-পয়সা সুযোগ-সুবিধা পান।

ইনসাফ কায়েম কমিটি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তাদের ব্যানারে প্রোগ্রাম হয়, সেখানে হাজার-হাজার লোক অংশ নেয়। এসব প্রোগ্রামের কারা অর্থ দেয়? কেন করে? আসলে তাদের কি সরকার পতনের সক্ষমতা আছে? তাদের কোনো সাংগঠনিক কাঠামো আছে?
নুরুল হক নুর

রেজা কিবরিয়ার অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুরুল হক নুর বলেন, ইনসাফ কায়েম কমিটি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তাদের ব্যানারে প্রোগ্রাম হয়, সেখানে হাজার-হাজার লোক অংশ নেয়। এসব প্রোগ্রামের কারা অর্থ দেয়? কেন করে? আসলে তাদের কি সরকার পতনের সক্ষমতা আছে? তাদের কোনো সাংগঠনিক কাঠামো আছে?

তিনি আরও বলেন, ইনসাফ কমিটির অর্থায়নের বিষয়ে আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, তার নাম মাসুদ করিম। যিনি আমেরিকাতে সিআইএ হেডকোয়ার্টারে কাজ করেন বলে জানা গেছে। এই লোক বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পতনে কাজ করছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এর আগে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে নেপাল ও ব্যাংককে বৈঠক করেছেন বলেও শুনেছি। আমরা যখন জানতে পারলাম রেজা কিবরিয়া ২০১৯ সাল থেকে এর সঙ্গে জড়িত, তখন তাকে আমরা এখান থেকে বের করার চেষ্টা করেছি। কারণ এটা তো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। রাজনৈতিক আন্দোলন ছাড়া তো সরকার পরিবর্তন হবে না। তিনি অনেকবার বলেছেন যে এখান থেকে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।

নুর অভিযোগ করেন, আমরা শুনেছি রেজা সাহেব তাদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন। যে কারণে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। তাকে মাসে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। তিনি যেখানে দলের কোনো অনুষ্ঠানে আসেন না, সেখানে ইনসাফ কমিটির অনুষ্ঠানে কীভাবে যান?

রেজা কিবরিয়া প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে। একটি বোমা হামলায় নিহত শাহ এএমএস কিবরিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

রেজা কিবরিয়াকে অনেকবার রাজনীতিতে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে নুর বলেন, কিন্তু তারা একাডেমিশিয়ান লোক, রাজনীতিবিদ নন। ড. কামাল হোসেনের ২৬ বছরের গণফোরাম ভেঙেছে তার কারণে। এই কারণে আমরা অলিখিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে অনেক দিন ধরে আহ্বায়ক কমিটি আছে। নতুন কাউন্সিল করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করব। সেক্ষেত্রে দলের অধিকাংশ লোক তাকে সমর্থন করবে না। সেই কারণে তিনি যেহেতু জানেন যে দল পুরোপুরি আমার নিয়ন্ত্রণে, সবাই আমার কথা শোনে, তাই আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে আমাকে বির্তকিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি দলের কিছু লোকজনের সাপোর্ট পাওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।

রেজা কিবরিয়ার অসত্য বক্তব্য ও মিথ্যাচার নিয়ে আমার বক্তব্য নিম্নরূপ; (নুরুল হক নুর)
বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠাপোষকতায় জনৈক মাসুদ করিম/এনায়েত করিমের বিএনপি ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কথিত সরকার বিরোধী প্রোগ্রামের নামে রেজা কিবরিয়ার ব্যাংকক,কাঠমুন্ডুতে একাধিকবার মিটিংয়ে অংশ নেয়া এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং সর্বশেষ ইনসাফের প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার বিষয়ে গতকাল রেজা কিবরিয়ার বাসায় জরুরী মিটিংয়ে এসব বিষয়ে জবাবদিহিতা চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে নেতৃবৃন্দের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বাসার ছাদের মিটিং স্থান ত্যাগ করে বাসায় ঢুকে আর মিটিংয়ে আসেনি।যে কারণে আমরা তার উপস্থিতিতে আর মিটিং করতে পারিনি।তাই উপস্থিত সদস্যদের মতামতে আমরা বাকী আলোচনা সম্পন্ন করে আজকে পূর্ব নির্ধারিত মিটিংয়ে অসমাপ্ত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে সকলে একমত হই যে মিটিং এখনো কেন্দ্রীয় কার্যলয়ে চলমান। তাই নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমাকে নিয়ে রেজা কিবরিয়ার অসত্য বক্তব্য ও মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ।রেজা কিবরিয়া কতটুকু অযোগ্য সেটা তার কাজকর্মে ইতোমধ্যে আপনারা পর্যবেক্ষণ করেছেন।গণঅধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি ঐভাবে দলের মিটিং-মিছিল,কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। বরং টাকার লোভে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে তিনি বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর। আমরা সেটাতে সমর্থন না দেয়ায় আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গণঅধিকার পরিষদে ভাঙন ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
নিশ্চয়ই আপনারা অবগত আছেন,এই রেজা কিবরিয়ার কারণেই গণফোরামও ভেঙেছিলো।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]