28071

হলুদ সাংবাদিকতা যেভাবে এলো

হলুদ সাংবাদিকতা যেভাবে এলো

2023-08-05 07:34:39

‘হলুদ সাংবাদিকতা’ শব্দটি আতঙ্কের হলেও এর পেছনে রয়েছে মজার এক ইতিহাস। সোনায় যেমন খাদ থাকে, তেমনি সাংবাদিকতা পেশাতেও আছে অপসাংবাদিকতা। এসব অতিক্রম করে অসির চেয়ে মসির শক্তি বেশি – এ কথা বারবার প্রমাণ করেছেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়, এতে রয়েছে আবেগ, আদর্শ ও দেশপ্রেমের সম্ভার।

সাংবাদিকতায় ইয়েলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতা শব্দটি এসেছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। দুই ভুবন বিখ্যাত সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম হার্স্টের এক অশুভ প্রতিযোগিতার ফসল আজকের এই ‘হলুদ সাংবাদিকতা’।

১৮৮৩ সালে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড নামে একটি সংবাদপত্র কিনেন প্রখ্যাত সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজার। পত্রিকাটির আগের মালিক ছিলেন জে গোল্ড।

অন্যদিকে উইলিয়াম হার্স্ট ১৮৮২ সালে ‘দ্য জার্নাল’ নামে একটা পত্রিকা কিনে নেন জোসেফ পুলিৎজারের ভাই অ্যালবার্ট পুলিৎজারের কাছ থেকে। কিন্তু পরিবারের সদস্যের পত্রিকা হার্স্টের হাতে চলে যাওয়ার বিষয়টিকে সহজ ভাবে নিতে পারেন নি পুলিৎজার।

শুরু হয় হার্স্টের সাথে পুলিৎজারের স্নায়ুযুদ্ধ। পুলিৎজার নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড কিনেই ঝুঁকে পড়লেন চাঞ্চল্যকর খবর, চটকদারি সংবাদ ইত্যাদি প্রকাশে। রিচার্ড ফেন্টো আউটকল্ট নামে একজন কার্টুনিস্টকে চাকরি দিলেন তার কাগজে। ওই কার্টুনিস্ট ‘ইয়েলো কিড’ বা ‘হলুদ বালক’ নামে প্রতিদিন নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের প্রথম পাতায় একটি কার্টুন আঁকতেন এবং তার মাধ্যমে সামাজিক অসংগতি থেকে শুরু করে এমন অনেক কিছু বলিয়ে নিতেন, যা ছিল অনেকটাই পক্ষপাতদুষ্ট।

এক সময় হার্স্ট পুলিৎজারের নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের কার্টুনিস্ট রিচার্ড ফেন্টো আউটকল্টকে অধিক বেতনের প্রলোভনে নিয়ে এলেন তার ‘জার্নাল’ পত্রিকায়। হার্স্ট তাতেই ক্ষান্ত থাকেননি, মোটা বেতনের লোভ দেখিয়ে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের ভালো সব সাংবাদিককেও টেনে নেন নিজের পত্রিকায়। বেচারা পুলিৎজার রেগে আগুন। তিনি অগত্যা জর্জ চি লুকস নামে আরেক কাটুনিস্টকে নিয়োগ দেন।

এদিকে জার্নাল, ওদিকে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড – দুটো পত্রিকাতেই ছাপা হতে লাগলো ইয়োলো কিডস বা হলুদ বালক কার্টুন। শুরু হয়ে গেলো পত্রিকার কাটতি নিয়ে দুটো পত্রিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব। জার্নাল এবং নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের বিরোধ সে সময়কার সংবাদপত্র পাঠকদের কাছে ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিলো।

দুটো পত্রিকাই তাদের হিট বাড়ানোর জন্য ভিত্তিহীন, সত্য, অর্ধসত্য ব্যক্তিগত কেলেংকারিমূলক খবর ছাপা শুরু করলো। এতে দুটো পত্রিকাই তাদের মান হারালো। তৈরী হলো একটি নষ্ট মানসিকাতর পাঠকশ্রেণি, যারা সব সময় চটকদার, ভিত্তিহীন, চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী, অর্ধ-সত্য সংবাদ প্রত্যাশা করতো এবং তা পড়ে তৃপ্তি পেতো।

এভাবেই জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম হার্স্ট দু’জনেই হলুদ সাংবাদিকতার দায়ে অভিযুক্ত এবং ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে রইলেন।

জার্নাল ও নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড এর হলুদ বালক
জার্নাল ও নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড এর হলুদ বালক

জোসেফ পুলিৎজারের জন্ম ১৮৪৭ সালের ১০ এপ্রিল। অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধ থেকে ঊনবিংশ শতকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত তিনি ছিলেন একাধারে সফলতম লেখক ও সংবাদপত্র প্রকাশক। সাংবাদিকতা ও লেখালেখির মাধ্যমে তার আয় করা বিপুল অর্থ ও ধন-সম্পদ তিনি দান করে গেছেন কলম্বিয়া স্কুল অব জার্নালিজমে। বর্তমানে এটি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তার ইচ্ছে অনুযায়ী ১৯১১ সালের ২৯ অক্টোবর তার প্রয়াণের পর তার সম্মানার্থে পুলিৎজার পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। সাংবাদিকতা ও আলোকচিত্রকলা, নাটক, কবিতা, ইতিহাস, পত্র, সংগীতের মতো ২১টি বিভাগে এ পুরস্কার সাংবার্ষিক আকারে দেয়া হয়।

হলুদ সাংবাদিকতার সাথে তার নাম জড়িত থাকলেও ১৮৮০-এর দশকে পুলিৎজার নতুন সাংবাদিকতার কলা-কৌশল প্রবর্তন করে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেন। যা তাকে করেছে অমর। অনেকেই তাকে সাংবাদিকতার পিতামহ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।

 

 

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]