28135

র‍্যাগিং থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, উত্তাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

র‍্যাগিং থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, উত্তাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

2023-08-13 02:49:11

‘ইন্ট্রো’ পর্ব। আক্ষরিক অর্থেই হোস্টেলে নিজের পরিচয় দেওয়ার প্রক্রিয়া। অথচ, আপাতনিরীহ এই বিষয়টিই এখন ভারতের কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হোস্টেলে আতঙ্কের অপর নাম। এই পরিচয় পর্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর সরব প্রতিবাদ করছেন শিক্ষার্থীরা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, গত বুধবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হোস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। মৃত্যুর মাত্র তিন দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়া ওই ছাত্রের নাম স্বপ্নদীপ কুণ্ডু।

পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল (১১ আগস্ট) শুক্রবার খুনের মামলা দায়ের করে স্থানীয় পুলিশ। ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, তাকে হোস্টেলে বিভিন্ন ভাবে র‍্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার রাতে এই ঘটনার জের ধরে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় পুলিশ। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বিষয়টি নিয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের আরেক ছাত্র সায়ন সেনগুপ্ত সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, প্রতিদিন রাত এগারোটা বা বারোটার পরে অত্যন্ত স্বল্প বসনে বিল্ডিংয়ের একটি করে দরজায় নক করতে হবে আমাকে। সেই ঘরের সিনিয়রেরা দরজা খুললে সাবধান পজিশনে দাঁড়িয়ে একটি বয়ান মুখস্থ বলতে হবে আমাকে। আমার নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম দিয়ে। তার পরে জন্মদিবস।

তিনি আরও লেখেন, তার পরে ‘আনুমানিক প্রতিষ্ঠা দিবস’ (আমার জন্মের সময়ের ন’মাস দশ দিন আগের দিনটি হল এই দিনটি। আশা করি, সবাই ইঙ্গিতটি বুঝতে পারছেন)। তার পরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গোটা সিভি। এই বয়ান শেষ হবে শারীরিক বর্ণনায়।’ সায়ন আরও লিখেছেন, ‘গোটা বক্তব্যে একটিও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলে হয় ওঠবস, নয়তো খিলের আঘাত সহ্য করতে হবে হাঁটুর পিছনে। এই ইন্ট্রো চলবে রাত আড়াইটে পর্যন্ত।

সায়নের লেখা থেকে স্পষ্ট যে, এই পরিচয় পর্ব শালীনতার সীমাও ছাড়িয়ে যায়। পাশাপাশি, সিনিয়রদের ফাইফরমাশ খাটা, দাদাদের নির্দেশে চুল ছোট করে ছাঁটতে বাধ্য হওয়ার বৃত্তান্তও জানিয়েছেন সায়ন। একই কথা জানিয়েছেন গত সপ্তাহে তিন রাত মেন হোস্টেলে থাকার পরে হোস্টেল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ভূতত্ত্ববিদ্যার প্রথম বর্ষের আরেক ছাত্র অর্পণ মাজি।

এই বিষয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক অভিজিৎ কুণ্ডু বলেন, ইন্ট্রো আর নবীনবরণ এক ব্যাপার নয়। নবীনবরণ আনুষ্ঠানিকভাবে হয়। পারস্পরিক পরিচয় জ্ঞাপনের এই রীতি দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। তাতে অনেক মজার বিষয় থাকে। অনেক সময়ে মুখচোরা নবীনরা নিজেদের মেলে ধরতে পারেন ওই অনুষ্ঠানে। কিন্তু, কিছু কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্ট্রো হলো সিনিয়রদের দাদাগিরি ফলানোর পর্ব।

তিনি বলেন, এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অত্যাচারিত পরবর্তী কালে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। চূড়ান্ত অবদমন থেকেই ওই বয়সে অনেকে বিকৃত আচরণের বাহক হয়ে ওঠেন। তিনি আরও বলেন, যারা এরকম র‌্যাগিং করেন তারা আদতে খুব ভিতু প্রকৃতির। তারা জানেন, ক্যাম্পাসের সুরক্ষিত পরিবেশে কেউ তাদের কিছু করতে পারবেন না। এর বিরুদ্ধে এখনই কর্তৃপক্ষের সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।

এই বিষয়ে, মনোরোগ চিকিৎসক জ্যোতির্ময় সমাজদারের বক্তব্য, আসলে এটা শাসক এবং শোষিতের একটি রূপ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, র‌্যাগিং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তাতে কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, তৈরি হয় হীনম্মন্যতা। এর দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার। গুরুতর হতাশা থেকে আত্মহত্যার চেষ্টাও করতে পারেন কেউ। অনেকে অ্যালকোহল ও মাদকাসক্তির দিকেও চলে যান।

তিনি বলেন, দুনিয়া জুড়ে ক্যাম্পাসের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। ক্যাম্পাসের সকলেরই মানসিক স্বাস্থ্য সতেজ রাখার দিকে নজর দিতে হবে। নেতিবাচক মনোভাব কারও মধ্যে না ঢোকার বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]