3081

শিক্ষাজগতের আইকন ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান

শিক্ষাজগতের আইকন ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান

2017-10-28 06:04:28

এমনিতে আমরা মিরাকলে বিশ্বাস করি না। উত্তরাধুনিক এই যুগে ভূত-প্রেতের উপস্থিতি যেমন সেকেলে মনে হয়, মিরাকল ব্যাপারটাকেও অস্বাভাবিক ও অস্তিত্বহীনই মনে করি আমরা। তবে আমাদের পাশের কেউই যখন আবার ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়ে যায়, দারুণ কিছু অর্জন করে ফেলে, আমরা বলতে শুরু করি- এটা মিরাকল ছাড়া কিছু না। হালের এমন ব্যাপার ঘটছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি স্যারকে ঘিরে। এতোদিনের চেনা-জানা সহজ-সরল মানুষটা আবির্ভূত হয়েছেন সম্পূর্ণ নতুন এক রূপে।

ঢাবির ভিসি পদে সমাসীন হয়ে তিনি এখন লাইমলাইটে, আর আমরা অবাক হয়ে আবিষ্কার করছি একজন মানুষের সারা জীবনের সংগ্রাম ও অর্জনের অজানা দিকগুলো। সেই শৈশবে তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন রূপে আবিষ্কার ও গড়ে তোলার যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, আজ আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখছি তার পরিশ্রম, অধ্যাবসায় আর সংগ্রামী সেসব অর্জনগুলো। সাদামাটা পোশাক আর সহজ চালচলনে অভ্যস্ত মাটির এই মানুষটি এতোকাল বলা চলে চোখের আড়ালেই ছিলেন। বলছি আর কেউ নয়- ঢাবির নবনিযুক্ত ভিসি, আমাদের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় স্যার- অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের কথা। হঠাৎ করে তার এই অর্জনকে মিরাকল মনে হলেও একটু গভীরভাবে তাকালেই বোঝা যায়- কেবল নিষ্ঠা, লেগে থাকা আর সততার গুণে ভর করেই নিজেকে তিনি আজকের উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছেন। পাশে ছিলেন তার সহধর্মিনী . ...।

ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের জন্ম ১৯৬৪ সালের ১ জুলাই, বরগুনা জেলার পাথর ঘাটায়। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় বরগুনার কালমেঘা মুসলিম হাইস্কুলে। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তিনি নিজের মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। পড়াশোনা ও নিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার মাধ্যমে সহপাঠী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। এমন দারুণ শুরুর পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। সফলভাবে স্কুলের গন্ডি- পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন বরগুনা সরকারি কলেজে। সেখান থেকে অভাবনীয় ফলাফল করে এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামরে ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। শুরু হয় ঈর্ষণীয় ভবিষ্যত নির্মাণের পথে তার বিস্ময়কর যাত্রা। তীব্র প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও ঢাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর উভয় বিভাগেই তিনি ১ম স্থান অর্জন করেন।

এরপর ফারসি ভাষায় পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং ভারতের বিখ্যাত আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে ডক্টরটে ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। শুরু হয় তার কর্মজীবনের নতুন পথচলা।

 

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান এক যুগের সফল ধারাবাহিক শিক্ষকতা পেরিয়ে ২০০৪ সালে প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি আরবি বিভাগেরও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত। এর আগে একসময় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান যুক্তরোষ্ট্রের বোস্টন কলেজের পূর্ণকালীন বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র ছিলেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মোট ৪২ টি গবেষণাপত্র বিশ্বের বিখ্যাত সব জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ এক অনন্য অর্জন।

তিনি ‘মুসলিম ইতিহাসতত্ত্ব’ এবং ‘মধ্যযুগীয় বাংলার সমাজ ও নগরায়ন’ নামে তথ্যবহুল দুটো বইও লিখেছেন। সম্পাদনা করেছেন বেশ অনেকগুলো গবেষণামূলক বই ও নিবন্ধ। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাবির কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ইতহিাস ও সংস্কৃতির বিচিত্র দিক ও ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে গেছেন। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ ও হলের। একসাথে বিভিন্নধর্মী এতোসব কাজ ও দায়িত্ব পালনের পরও কোথাও তিনি কোনো ঘাটতি রাখেন নি। তার প্রতি কারো অসন্তুষ্টি নেই। এ এক বিস্ময়কর দিক, সাধারণ হিসেবে যা অসম্ভব। তবে এই অসম্ভবকেই বছরের পর বছর ধরে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করা সফল মানুষ আমাদের প্রিয় স্যার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনযিুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।

ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শিক্ষক প্যানেল নীল দল থেকে ২০০৪-২০০৭ পর্যন্ত টানা তিন বছর ঢাবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং আস্থা ও সুনামের সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ ও ২০১১ সালে এই সমিতির সহসভাপতি হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এর বাইরে নানাসময় ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। কবি জসিম উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন।

বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্যও ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ২২ জুন থেকে তিনি ঢাবির প্রো ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ কর্তৃক ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের ভিসি বা উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। একজন সংগ্রামী মানুষ হিসেবে এটা যেমন তার জীবনের সেরা অর্জন, তার মতো নীতিবান ও পরিশ্রমী শিক্ষাবিদকে উপচার্য হিসেবে পাওয়াটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর হাজার হাজার ছাত্রদের জন্যও অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার।

আমরা আশা করবো- প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় এই মানুষটির হাত ধরে ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয় নিজের সুনাম পুনরুদ্ধার করে গৌরবোজ্জ্বল পথ ধরে সামনে এগিয়ে যাবে। নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে দেশসেরা এই প্রতিষ্ঠানের নাম ও মান। জয়তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্যালুট ইউ- অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।

 

এমএসএল 

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]