ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য ১০ পরামর্শ


Prothom-alo.com | Published: 2017-08-13 15:59:03 BdST | Updated: 2024-03-28 18:38:19 BdST

গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মো. সাইয়েদ বিন আবদুল্লাহ প্রথম হয়েছিলেন। কীভাবে তিনি সফল হলেন, সে গল্পই লিখেছেন স্বপ্ন নিয়ের পাঠকদের জন্য। সঙ্গে থাকল ঘ ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের জন্য তাঁর দশটি পরামর্শ।

ছেলেবেলা কেটেছে পাবনার সাঁথিয়ায়। পাবনার আলহেরা একাডেমি থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হই পাবনা ক্যাডেট কলেজে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমি যাঁদের আদর্শ বলে মানি, তাঁদের প্রায় সবাই আইনের ছাত্র। তাই ইচ্ছা ছিল আইন নিয়ে পড়ব। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি। বন্ধুরা যখন অনেকেই বুয়েট-মেডিকেলে ভর্তির দৌড়ে শামিল হয়েছে, আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ঘ ইউনিট। ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ বিষয়ে কিছুটা আগ্রহ ছিল। তাই বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত ঢাবির আগেই বিইউপির ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলাম বলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল অনেকখানি।

আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়েই ঢাবির ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলাম। মজার ব্যাপার হলো, আমার ভালো ফলের পেছনে ঢাকার দুর্বিষহ যানজটের একটা অবদান আছে। তখন ‘সুদূর’ উত্তরা থেকে ফার্মগেটে এসে আমাকে মডেল টেস্ট দিতে হতো। একবার তীব্র যানজটে পড়ে রাস্তায় চার ঘণ্টা কেটে গেল, মডেল টেস্ট আর দিতে পারিনি। প্রতিদিন কোচিংয়ে আসা-যাওয়া করতেও লেগে যেত প্রায় চার ঘণ্টা। ভাবলাম, এই সময়টাকেই কাজে লাগাই না কেন! এরপর থেকে আমি যখনই বাসে উঠতাম, কোনো না কোনো বই নিয়ে উঠতাম। সত্যি বলতে, বাসেও আমার বেশ ভালো পড়া হতো!

ভর্তি পরীক্ষার এই সময়টায় সবাই ফেসবুক থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে আমি খানিকটা অবাধ্য ছিলাম। তবে এ সময় আমি ফেসবুকটাকে সত্যি সত্যিই ‘ব্যবহার’ করেছি। বিসিএস প্রস্তুতি, সাধারণ জ্ঞানসহ ইংরেজি শেখার বিভিন্ন পেজ অনুসরণ করতাম। ফেসবুকে নিছক আড্ডা বা ম্যাসেজিং নয়, এসব পেজে দেওয়া বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে আমি বেশ উপকার পেয়েছি।

ভর্তি পরীক্ষায় পড়ালেখার যে ধরন, তা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের পড়ালেখার চেয়ে বেশ ভিন্ন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরের তিন-চার মাস প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই আমি কলেজজীবন থেকেই ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী বইগুলো থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। আমার আরেকটা বড় সুবিধা হলো, ক্যাডেট কলেজের সুশৃঙ্খল জীবন আমাকে আগে থেকে বেশ খানিকটা তৈরি করে দিয়েছিল। নিয়মিত পত্রিকা পড়া ক্যাডেটদের রুটিনের মধ্যেই থাকে। এ ছাড়া সাধারণ জ্ঞান ও কুইজ প্রতিযোগিতা, বানানের প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা বা বিতর্কের মতো ক্যাডেট কলেজের নিয়মিত সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলো ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আমাকে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। ক্লাসের বাইরেও সব সময় আমরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকতাম। যখনই কোনো সমস্যা হয়েছে, সরাসরি শিক্ষকদের সহায়তা পেয়েছি। এ ছাড়া সাবেক সফল ক্যাডেটরা সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাই আজকের সাফল্যের পেছনে আমি আমার কলেজের কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ।

আমাদের দেশের একটা সমস্যা হলো, আমরা নিজেদের আগ্রহের জায়গায় মনস্থির করার সুযোগ পাই না। বিজ্ঞান বিভাগে পড়লে মা-বাবা চান ছেলে বিজ্ঞান নিয়েই পড়বে। বাণিজ্য বিভাগে পড়লে মা-বাবা স্বপ্ন দেখেন, সন্তান বিবিএ পড়বে, একটা ভালো চাকরি করবে। আমরা নিজেদের স্বপ্ন নয়, অন্যের স্বপ্ন বয়ে বেড়াই। এদিক থেকে আমি খুব সৌভাগ্যবান। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস থাকার পরও আমার মা মোছা. তাসলিমা খাতুন ও বাবা মো. আব্দুস সোবহান কখনোই আমার ওপর প্রকৌশল বা মেডিকেলে পড়ার প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দেননি। তাঁরা আমার আগ্রহের মূল্যায়ন না করলে আমি হয়তো আজ এই ফলাফল করতে পারতাম না।

শুধু ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটই নয়, তোমরা যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছ; নিজের বাসায়, আত্মীয়ের বাসায় কিংবা মেসে থেকে দিন-রাত পরিশ্রম করছ, তোমাদের সবার জন্য শুভকামনা।

 দশ পরামর্শ

‘ঘ’ ইউনিটে তিনটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হয়—বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। সাধারণ জ্ঞানে দুটি খণ্ড থাকে—জাতীয় ও আন্তর্জাতিক। এক ঘণ্টার পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকে মোট ১০০টি। মোট নম্বর ১২০, ভুল উত্তরের জন্য কাটা যায় ০.৩০ নম্বর। এ ছাড়া মাধ্যমিকে প্রাপ্ত জিপিএর সঙ্গে ৫ এবং উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত জিপিএর সঙ্গে ১০ গুণ করে মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ করা হয়। ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা—সব শাখার ছাত্রছাত্রীরা অংশ নিতে পারে। যারা ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছ, তাদের জন্য থাকল আমার ১০টি পরামর্শ।

১.

কাউকে নকল কোরো না, বরং নিজের স্বকীয়তা অর্জন করো। কে কোথায় কোচিং করছে, কোন বই পড়ছে, কার কাছে পড়ছে, আমাকেও সেখানেই পড়তে হবে—এসব ভাবনা তোমাকে আরও পিছিয়ে দেবে।

 ২.

শুধু মুখস্থ পড়া নয়। কোনো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন করা উচিত।

৩.

সারা দিনের জন্য একটা রুটিন বানিয়ে ফেলো। রুটিন শুধু তৈরি করলেই হবে না, সেটা মেনে চলতেও হবে। দু-এক দিন মানলাম, তারপর আর মানলাম না, এমনটা যেন না হয়।

 ৪.

সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য স্থির করো। অনেকে একসঙ্গে বেশ কয়েকটা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে কোনোটার প্রস্তুতিই ভালোভাবে নিতে পারে না। এর চেয়ে একটা বিষয়ে লক্ষ্য স্থির করে সেটার ওপর জোর দেওয়াই ভালো।

 ৫.

বাংলার জন্য পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলো খুব গভীরভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি ব্যাকরণের পাঠ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজির ওপরও জোর দিতে হবে। ইংরেজিতে নম্বর কম পেলে ভালো বিষয় পাওয়া কঠিন হয়।

 ৬.

কোনো নির্দিষ্ট বিষয় যদি খুব জটিল মনে হয়, তবে তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা না পড়াই ভালো। কারণ এতে ক্লান্তি আর হতাশা তোমাকে পেয়ে বসতে পারে। কঠিন বিষয়টির জন্য রুটিনের ছোট ছোট অংশ বরাদ্দ রাখতে পারো। যেমন সকালে ২০ মিনিট, বিকেলে ২০ মিনিট, আবার রাতে ঘুমানোর আগে ২০ মিনিট...

 ৭.

সাম্প্রতিক বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে জানতে হবে। সাম্প্রতিক বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে অতীতটাও জানা জরুরি। পত্রিকায় শুধু খেলার পাতা আর বিনোদন পাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে সম্পাদকীয়, আন্তর্জাতিক, অর্থনীতিসহ সব বিষয়ই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

 ৮.

পরীক্ষায় কিছু প্রশ্ন থাকে, যেগুলো খুবই বিভ্রান্তিমূলক। মনে রাখবে, এই প্রশ্নগুলো করাই হয় পরীক্ষার্থীর ‘এক্সাম স্ট্র্যাটেজি’ যাচাই করার জন্য। কেউ কেউ এই প্রশ্নগুলোতে এত বেশি বিভ্রান্ত হয়ে যায় যে বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তরও ভুল হয়ে যায়। কিছু উত্তর তোমার অজানা থাকতে পারে, এটা মেনে নিয়েই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করা উচিত।

 ৯.

ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো জটিল বিষয়গুলো সহজে মনে রাখার উপায় বের করে নেওয়া। এতে করে সময় বাঁচবে, আবার আত্মবিশ্বাসের জায়গাটাও সুদৃঢ় হবে।

১০.

সুস্থ থাকতে চেষ্টা করো। পড়ালেখার চাপে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই ঘাটতি অপূরণীয় থেকে যেতে পারে। সম্ভব হলে নিয়মিত খাবারের তালিকার সঙ্গে ফল, দুধ, ডিম যোগ করো।

এমএসএল/ ১৩ আগস্ট ২০১৭

//