দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন


Dhaka | Published: 2021-10-08 02:49:21 BdST | Updated: 2024-04-19 21:28:58 BdST

আজ ৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও খাদ্যে ভেজাল প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করে সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শাহীন মাতবর, রোমান হোসাইনসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, "কালোবাজারিরা ষড়যন্ত্র করে দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অধিকাংশ খাদ্য দ্রব্যে জীবন বিধ্বংসী কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে যা আমাদের নতুন প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পথে বড় অন্তরায়। এমনকিও ভেজাল ঔষধও বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি, অবিলম্বে দেশ ও জাতির শত্রুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।"

সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন,"সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণসহ খাদ্যে ভেজাল প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। জনগণের যেকোনো যৌক্তিক দাবির প্রতি সবসময় আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।"

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন,
"সম্প্রতি সকল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে যা জনগণের স্বার্থ পরিপন্থী। আলু, পেঁয়াজসহ সকল ধরনের সবজির প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। মরিচের প্রতি কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। চাল, ডাল, তেল সহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ দাম বেড়েছে যা জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল বলে আমরা মনে করি। একশ্রেণীর অসাধু সিন্ডিকেটরা প্রতিনিয়ত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব কালোবাজারিরা জনগণকে জিম্মি করে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন ও খাদ্য মন্ত্রণালয় কখনোই এসব ব্যর্থতার দায়ভার এড়াতে পারেন না। সঠিক নজরদারি ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকলে দ্রব্য মূল্য অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান তৈরী হবে। জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের জীবীকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের নিকট দাবি, অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের কষ্ট লাঘব করুন। মনিটরিং সেল জোরদার করতে হবে।"

আল মামুন আরোও বলেন,
"নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি রাষ্ট্রের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, প্রতিটি খাদ্যে ভেজাল প্রদান করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজরা দেশ ও জাতির শত্রু। খাদ্য ভেজাল প্রদানকারীরা দুর্নীতিবাজদের চেয়েও ভয়ংকর। এদেরকে চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য আইন সংশোধন করে খাদ্যে ভেজাল প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জীবন ধ্বংসকারী বিভিন্ন মেডিসিন, কেমিক্যাল খাদ্যে মিশিয়ে মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে। বিএসটিআইসহ খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সম্প্রতি হঠাৎ চাল, ডাল, তৈলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে যা কখনোই কাম্য নয়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মনিটরিং সেল কঠোরভাবে জোরদার করতে হবে। খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং খাদ্যে ভেজাল প্রদানকারীদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতি লক্ষ্য করছি। যার কারণে বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতিনিয়ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যর দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। খাদ্যে জীবনবিধ্বংসী কেমিক্যাল মিশিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির শত্রু। অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাওসহ দেশব্যাপী আরোও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।"

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর ছয় দফা দাবিসমূহ। যথাক্রমে-
১. নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে হবে।

২. সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৩. খাদ্যে ভেজাল প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।

৪. পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং সেল জোরদার এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

৫. খাদ্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইসহ অন্যান্য মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বে গাফিলতি ও নিষ্ক্রিয়তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

৬. বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে।