নাহিদা সোবহান ও মিথিলা ফারজানার নিয়োগ বাতিল চান কানাডাবাসীরা


Desk report | Published: 2024-08-10 11:03:01 BdST | Updated: 2024-09-10 16:18:57 BdST

শেখ হাসিনার শাসনামলে কানাডার হাই কমিশনে কাউন্সিল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত বহুল আলোচিত বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির উপস্থাপক মিথিলা ফারজানার অপসারন চেয়েছেন কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা। এর সাথে সাথে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান, আরেক কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী অপর্ণা পালের নিয়োগ বাতিলেরও দাবি ওঠেছে।

হাই কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কানাডা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হওয়া সত্বেও সিনিয়র কর্মকর্তাদের টপকিয়ে নাহিদা সোবহানকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার নিয়োগকৃত সরকারের প্রধান ভারতে পালিয়ে গেলেও তিনি ১২ আগস্ট কানাডায় আসবেন। এর আগে তিনি জর্ডানের রাষ্ট্র্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নানা সমালোচিত কর্মকান্ড করে আসছিলেন। অন্যদিকে একাত্তর টিভির উপস্থাপনাকালে সরকারের পক্ষ নিয়ে নানান বিতর্কিত কর্মকান্ড করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের মিথিলা ফারজানার বিরুদ্ধে। আর অপর্ণা পাল কানাডার হাইকমিশন অটোয়ায় সেবা নিতে যাওয়াদের দীর্ঘদিন ধরে দু:ব্যবহার ও কথায় কথায় লোকজনের রাজাকার ডাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর মিথিলা ফারজানাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর গত ৪ মাস ধরে তিনি কানাডার হাইকমিশনে কাউন্সিল হিসেবে নিয়োগ পেলেও নিজেকে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। হাইকমিশনের ওয়েব সাইটে তাদের নামও ছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে সেদিনই মিথিলা ফারাজানা এবং অপর্ণা পাল জোর করে ওয়েবসাইট থেকে তাদের নাম মুছে ফেলান। এখন তারা বর্তমান সরকারের লোক হিসেবে পরিচয় দিতে চান।

প্রসঙ্গত, জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহানকে কানাডায় বাংলাদেশের পরবর্তী হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ২০২৪ সালের মে মাসের শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৫তম ব্যাচের একজন কূটনীতিক হিসেবে নাহিদা সোবহান ১৯৯৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জর্ডানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জর্ডানের পাশাপাশি রাষ্ট্রদূত হিসেবে সিরিয়া ও ফিলিস্তিনেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন।

এই রাষ্ট্রদূতের বাবা ডাঃ আবদুস সোবহান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। এই রাষ্ট্রদূতের চাটুকারিতা এই পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তিনি ২০২২ সাল থেকে নিজের নামের আগে শেখ ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন এবং তার বাবার সাথে শেখ মুজিবের ছবি খবরের কাগজেও ছাপিয়েছিলেন। 

শেখ হাসিনা ২০২৩ সালে কাতারে সরকারি সফরে গিয়েছিলেন। সেসময় নাহিদা সোবহান ছিলেন জর্ডানের রাষ্ট্রদূত। তা সত্বেও তিনি প্রটোকল ভেঙে কাতারে গিয়ে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কানাডার কুইবেক শাখা বিএনপির সভাপতি আবদুল মানান বলেন, শেখ হাসিনার খুব আস্থাভাজন ব্যক্তি ব্যতিত কোন নিরপেক্ষ কর্মকর্তা কানাডায় রাষ্ট্রদূত হয়ে আসা সম্ভব ছিল না। এজন্য কখনো অথর্ব, কখনো ডা. খলিলুর রহমানের মতো দলকানা, চাটুকার অফিসার কানাডায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নিয়েও এসকল রাষ্ট্রদূতেরা দূতাবাসকে রাজনৈতিক দলের অফিস হিসাবে ব্যবহার করেছে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য দু:সংবাদ, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতার শেষ দিকে কানাডায় আবারো নিজের পছন্দের দলকানা কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। 

টরন্টোর ব্যবসায়ী নজরুল চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা বিদায় নিলেও বাংলাদেশী প্রবাসীদের এখন হাসিনার নিয়োগকৃত আওয়ামী রাষ্ট্রদূতকে সহ্য করতে হবে। এই অবস্থায় শেখ নাহিদা সোবহানকে সহ্য করা আমাদের জন্য প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। বাংলাদেশ দূতাবাসকে আমরা আর আওয়ামী লীগের অফিস হতে দিতে পারি না। তাই কানাডায় রাষ্ট্রদূত হিসাবে নাহিদা সোবাহানের নিয়োগ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে দূতাবাসে নিযুক্ত একাত্তর টিভির আওয়ামী পা চাটা সাংবাদিক মিথিলা ফারজানার নিয়োগ বাতিলের দাবি জানাই। মিথিলা কোন যোগ্যতা ছাড়াই আগের সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কানাডার মত একটি দেশে নিয়োগ পেয়েছেন। অবিলম্বে তাকে দেশে ফেরত নেওয়ার দাবি জানাই।

অটোয়ার বাসবাসী এক বাংলাদেশি কানাডিয়ান জানান, ছাত্রলীগ কর্মী থেকে কূটনীতিক বানানো অপর্ণা পাল। তিনি দীর্ঘ বারো বছর ধরে দূতাবাসে রয়েছেন জনগণের টাকায়, তার নিয়োগও অবিলম্বে বাতিল করবার জোর দাবি জানাই। সে দূতাবাসকে আওয়ামী লীগের ঘরবাড়িতে পরিণত করেছে। ছাত্রদের এই আন্দোলন নিয়ে তার ও তার ছাত্রলীগ নেতা স্বামীর ফেসবুকে বিকৃত, অবমাননাকর ও নোংরা পোস্টগুলো এখনো দৃশ্যমান। অনতিবিলম্বে এদের সবাইকে প্রত্যাহার করে যোগ্য ও নির্দলীয় জনবল নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। না হলে কানাডাবাসী সকল শ্রেণীপেশার মানুষ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মিথিলা ফারজানা জানান, আমি তো এই নিয়োগ চাইনি। সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। আমি একজন সাধারণ লোক। জন আক্রোশ থেকে বাচার জন্যই ওয়েব সাইট থেকে নাম সরিয়েছি। এছাড়া ডেপুটি হাইকমিশনার পরিচয় দেওয়ার বিষয়টিও সত্য নয়। আামি একজন সাংবাদিক। সেটাই করতে চাই।  

অন্যদিকে অপর্ণা পালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করে এবিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।