আদ-দ্বীন হাসপাতালে হেনস্তা, আতঙ্কে পরিবারসহ নির্ঘুম রাত কাটল মাহবুবের


Staff Reporter | Published: 2024-11-12 08:51:39 BdST | Updated: 2024-12-14 13:13:18 BdST

আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভয়াবহ হেনস্তার শিকার হয়েছেন টেন মিনিট স্কুলের ম্যানেজার ও সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান, অসুস্থ স্ত্রী আর আড়াই বছরের কণ্যা শিশুকে নিয়ে ভয়াবহ রাত কেটেছে তার। মানবিক কারণে কেবিনে অবস্থান করলেও অমানবিকভাবে তার উপর আক্রমণ করেছে হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।

সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতভর এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হন মাহবুব। এতে পরিবার নিয়ে নির্ঘুম রাত কেটেছে তার। তবে মগবাজারের এই হাসপতালটির কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার ফেসবুক পোস্টে মাহবুব লিখেছেন, আমার জীবনের সুন্দর দিনটা আজ ভয়ে কাটতেসে। আদ-দ্বীন হসপিটাল মগবাজার এখন আমার জন্য এক ভয়ংকর হসপিটাল লাগতেছে। যদি প্রশাসনের কেউ দেখে থাকেন প্লিজ কিছুটা নজর দিবেন এদের রোগিদের নিয়ে যা ইচ্ছা করসে বলার বা দেখার কেউ নাই। এই দেশে যে যা ইচ্ছা আইন বানিয়ে নেয়। এই দেশে কি নাগরিক হিসেবে নুন্যতম অধিকার পাওয়ার যগ্যতা কি আমাদের নাই?

ঘটনার শুরু রাত ১২ টার কিছু আগে। আমার দুইটা বাচ্চা, বড়টার বয়স আড়াই বছর, ছেলেটা বয়স আজ দুই দিন। বড় মেয়েটা কারো কাছে যায় না, বিশেষ করে ঘুমের সময় বাবা মা ২ জন ছাড়া কেউ রাখতে পারে না। ও ওর মা ছাড়া ঘুমায় না। আমার ওয়াইফের সিজার হওয়ার পর থেকে মেয়ে টা মায়ের কাছে যেতে চায় আর অনেক কান্না করে। আমি ওকে সারা রাত কাধে নিয়ে হাটি। গতকাল রাত ২ তার পর ঘুমাইছে। যেহেতু ওর মায়ের নড়চড়া করাটাই অনেক কস্টের আবার আমাকে ছাড়া কার কাছে যেতেও চায় না, তাই আমাকেই রাখতে হয়, আজ তিন রাত ঘুম নাই আমার।

মুল কথায় আসি। আদ-দ্বীন হসপিটালের অদ্ভুত আইন রাতে কোন পুরুষ থাকা যাবে না। আমি জানি না এমন কি আইন অনুযাই এই আইন করে রাখছে। আমি আমার ফামিলি নিয়ে এই হসপিটালে সাফিনা এক্সিকিউটিভ কেবিনে আছি।

ঘটনার শুরু বিকেল বেলা। আমার রুম এ পানি শেষ হয়ে গেলে আমি পানি নিতে রিসিপশনের পেছনে গিয়ে পানি আনতো গেলে কয়েকজন বলে উঠে এখান থেকে পানি নিতে পারবে না। পরের কথাটা বল্লেন মহিলা মানুষ পাঠাবেন। আমি চলে যেতে যেতে বল্লাম সব সময় তো মেয়ে মানুষ এবেইলেবেল থাকে না। উনি বলে উঠলেন মেয়ে মানুষ থাকে না মানে? রাত ১০ তার পর তো কেবিনে থাকতে পারবেন না।
আমি বল্লাম দেখেন এখানে ১৫-২০ টা কেবিন তাদের জন্য এক্টা পানির ফিল্টার সেটাও আপ্নাদের পেছনে, একটু বাইরে রাখলেও তো পারতেন। এতেই হয়ত নার্সদের খারাপ লেগেছে। এখানে প্রতিটা কেবিন প্রতিদিন ৩৮০০-৪৮০০ আর ৫ দিনের অগ্রিম দিয়ে ওইদিন সারারাত বসে ভোর ৫ টায় সিরিয়াল নেই। এখানে কি রকম ভোগান্তি তা যারা একবার গেসেন জানেন।

আসল ঘটনা : গত রাতের মত আজকেও বড় মেয়েটা অনেক কান্না করতেসে অকে প্রায় ৯ টা থেকে কাধে নিয়ে ঘুরতেসি জদি এক্টু ঘুমায়। আমি ৩ দিন হয়ে গেছে রাতে ঘুমাতে পারি নাও। তার পর অনেক কস্ট করে রাত সারে ১১ দিকে ঘুমাইল, কিছু সময় পর হঠাৎ করে দর‍জায় জোরে জোরে ২-৩ বার বারি দিল, সাথে সাথে মেয়ে আর ওর মা লাফ দিয়ে উঠে। আমার মেজাজ অনেক খারাপ হয়ে যায়, আজকেও আর ঘুম হবে না আমার। দরজা খুলে দেখি ৩-৪ জন জোরে জোরে আমাকে বলে রাত ১০ টার পর পুরুষ থাকা যাবে না। আমি বল্লাম দেখেন মেজাজা খারাপ হয়ে আছে বলে দরজাটা বন্ধ করে দেই। এরপর আমার মেয়ের কান্না আর থামাতে পারছি না। ওই দিকে আমার ওয়াইফ ও ঘুমাতে পারছে না। এর মধ্যে আবার দরজায় নক। দরজা খুলে মনে হল এই কেবিনে কোন জঙ্গী আছে। ৭-৮ জনের সিকিউরিটি, আমার ওয়াইফ বিছানা থেকে উঠে আসল।

এদিকে আমার বড় মেয়ে গুম চোখ থেকে আতঙ্কিত হয়ে আমার বুকে লুকালো। বিশ্বাস করেন আমি আমার কে ভীত দিশাহীন অবস্থায় দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। তার পরও উনাদের বল্লাম কেন আমি কেবিনে। বলে রাখা ভালো গত রাতে ও আমি প্রতিটা কেবিনে পুরুষ মানুষ দেখেছি আজও সবগুলো কেবিনে পুরুষ আছে। আমি গতকাল কেবিনের বাইরে রাত ২ টা পর্যন্ত হেটেছি মেয়েকে নিয়ে কেউ আমাকে একবার এর জন্য কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি। আমি কেবিনে কখনও সিকিউরিটি কাওকে দেখিনি। আজ যেটা করা হইছে এটা যদি নিয়মও হয় তাহলে তারা ১০ টায় আমাকে বলে যেতে পারত। আমি ভেবেছি সব কেবিন থেকে হয়তো সবাইকে বের করে দিসে কিন্তু না, সবাই কেবিনে। তাহলে আমাকে কেন এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে হল। আমার ওয়াইফ বেড ছেড়ে বাইরে এসে দাঁড়াতে না পেরে মাটিতে বসে বসে কথা বলা কেন লাগবে। টাকা দিয়ে এই ভগান্তি কেনার আমি একজন ভুক্তভোগী হিসেবে কোথায় বিচার চাইব। এই হসপিটালের পদে পদে ভগান্তি। কেউ দেখার নাই। সবাই মুখ বুজে মেনে নিয়ে যাচ্ছে। সংবিধান আমাকে আমার মৌলিক অধিকার টুকু দিতে পারবে না?
তাহলে কি এই দেশ ত্যাগই একমাত্র আমাদের নাগরিকদের পথ?

এ বিষয়ে জানতে আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত ম্যানেজারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।