জাবিতে বঙ্গবন্ধু হলের নাম পুনর্বহালের দাবিতে সাংস্কৃতিক জোটের স্মারকলিপি, সমালোচনার ঝড়


জাবি প্রতিনিধি | Published: 2025-06-18 22:23:51 BdST | Updated: 2025-07-12 06:22:45 BdST

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট (একাংশ)। সম্প্রতি সংগঠনটির পক্ষ থেকে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসানের কাছে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপাচার্য নিজেই।

স্মারকলিপিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তনের দাবি তোলে। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি চারটি আবাসিক হলের নামফলক মুছে দেয় একদল শিক্ষার্থী এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নতুন নামকরণের দাবি জানায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’, ‘শেখ রাসেল হল’, ‘শেখ হাসিনা হল’ ও ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ নাম বাতিল করে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব স্থাপনার নতুন নাম নির্ধারণে অংশীজনদের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করে।

এই ধারাবাহিকতায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট (একাংশ) উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। সংগঠনের সভাপতি ফাইজা মেহজাবিন স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, “১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই আন্দোলন একই মুক্তির বোধ থেকে উৎসারিত। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে ৭১ ও ২৪-কে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানো স্বৈরাচারী রেজিমের মনোবৃত্তির পরিচায়ক।”

তবে স্মারকলিপির এ বক্তব্য ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্মারকলিপির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামান লেখেন, “ফ্যাসিবাদের পিতা শেখ মুজিবের নাম রাখতে চায় কারা? যেখানে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নামফলক ভেঙেছে, সেখানে এই প্রস্তাবনা ফ্যাসিবাদ পুনরায় প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দেয়।”

একই ব্যাচের সোয়াইব হাসান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নামে হলের নাম পুনর্বহালের চেষ্টা করা হলেও শেখ রাসেলের স্থানে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের নাম প্রস্তাব এসেছে। অথচ আন্দোলনের শহীদদের নাম কোথাও নেই—এটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় সাংগঠনিক পক্ষপাতিত্বের।”

৪৬ ব্যাচের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান বলেন, “জোটের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে এই বিবৃতিতে আমি হতবাক। শেখ মুজিব ছিলেন প্রথম ফ্যাসিস্ট শাসক—এ ইতিহাস আমাদের জানানো হয়নি, বরং চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে একতরফা বয়ান।”

৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব মন্তব্য করেন, “এই কালচারাল আওয়ামী গোষ্ঠী আওয়ামী রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট সংস্কৃতি কায়েম করেছে। এখনো তারা সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর। তবে আমরা তাদের রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর রাজনৈতিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাখ্যা এবং সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আবাসিক হলগুলোর নামকরণকে ঘিরে বিতর্ক এখন উত্তপ্ত। প্রশাসনের সামনে রয়েছে একটি স্পর্শকাতর চ্যালেঞ্জ—সব পক্ষের মতামত বিবেচনায় নিয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো।