
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে সরকারের ঘোষিত 'জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন' কর্মসূচিতে জায়গা পায়নি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) বা কুমিল্লার নাম। অথচ গতবছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতে, ১১ জুলাই সারাদেশে প্রথম পুলিশি হামলার শিকার হয় কুবির শিক্ষার্থীরাই। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন কুমিল্লার শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
২০২৩ সালের ১১ জুলাই কুবির শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট চালায়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। হামলার শিকার হন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীও। হামলার প্রতিবাদে সেদিন শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে প্রায় ছয় ঘণ্টা। সেদিনের কুবির ছাত্রদের সাহসিকতা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
হামলায় হাত ভেঙে যাওয়া ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. এমরান বলেন, 'সরকার ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে স্মৃতি উদ্যাপন করছে, তাতে কোথাও আমাদের ১১ জুলাইয়ের উল্লেখ নেই। অথচ ওইদিনই প্রথম পুলিশি হামলা হয় কুমিল্লায়। এ ঘটনা সবাই দেখেছে, শুনেছে। আমরা আহত হয়েছিলাম, প্রতিবাদ করেছিলাম। অথচ ইতিহাস থেকে আমাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা খুবই লজ্জাজনক। আমরা চাই, অবিলম্বে ১১ জুলাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।'
কুমিল্লা জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আরাফ ভূইয়া বলেন, 'গত ১০ মাসে আমরা এক ডজনের বেশি অনুষ্ঠান করেছি। সেখানে ১১ জুলাইয়ের ইতিহাস বারবার তুলে ধরেছি। জাতীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছি। তবুও আমাদের অবদানকে অবহেলা করা হচ্ছে। ঢাকা কেন্দ্রিক ইতিহাস তৈরি করতে চায় কেউ কেউ, এটা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব রাশেদুল হাসান বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনের সূচনা হলেও, ১১ জুলাই প্রথম হামলার শিকার হয় কুমিল্লার শিক্ষার্থীরা। তখন সারাদেশেই প্রশ্ন উঠেছিল—"কুবিতে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই?" কিন্তু আজ সেই দিনটিকে সরকারি স্মৃতি উদ্যাপন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।'
একই ক্ষোভ জানিয়ে কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক সাকিব হুসাইন বলেন, '১১ জুলাই কুমিল্লায় হামলা হয়, সেখান থেকেই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। ঢাকার বাইরেও আন্দোলনের বড় অবদান ছিল। আমরাও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। এমনকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তাহলে ইতিহাস থেকে কুমিল্লাকে বাদ দেওয়ার কারণ কী?'
নেতৃবৃন্দ দ্রুত ১১ জুলাইয়ের ঘটনাকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।