এনওয়াইবিবি বায়োটেক ক্যারিয়ার ফেস্ট অনুষ্ঠিত


ঢাকা | Published: 2021-03-02 00:03:58 BdST | Updated: 2024-04-23 16:15:50 BdST

ভবিষ্যৎ নেতৃত্বদানকারী তরুণ জীবপ্রযুক্তিবিদদের দক্ষ ও যোগ্য করার লক্ষ্যে নেটওয়ার্ক অব ইয়ং বায়টেকনোলজিস্টস্ অফ বাংলাদেশ (এনওয়াইবিবি) প্রথমবারের মতো বিগত ২৬-২৭ ফেব্রুয়ারি আয়োজন করেছে দুই-দিন ব্যাপী এনওয়াইবিবি প্রথম বায়োটেক ক্যারিয়ার ফেস্ট।

বাংলাদেশে জীবপ্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কর্মক্ষেত্র বিস্তারের লক্ষ্যে সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে এবং জীবপ্রযুক্তিবিদদের কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারনের লক্ষ্যে করণীয় সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে ফেস্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এনওয়াইবিবি এর Chief Executive Officer মাহমুদা কবির শাওনের স্বাগত ও ক্যারিয়ার ফেস্টের উদ্দেশ্য নিয়ে বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া উদ্বোধনী পর্বের সম্মানিত বিশেষ অতিথিবৃন্দ ছিলেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটস এর প্রেসিডেন্ট ড. মোঃ শাহেদুর রহমান, আইসিডিডিআরবি এর প্রধান এবং গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশী বায়োটেকনোলজিস্ট’র সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আসাদুলগনি, বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ সানোয়ার হোসেন, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজি’র মহাপরিচালক ড. মোঃ সলিমুল্লাহ, বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’র চেয়ারম্যান ড. মোঃ আফতাব আলী শেখ। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজিস্টদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ড. মোঃ সলিমুল্লাহ বলেন,”দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে যদি দেশ আরো সামনে আগাতে চায়, তাহলে বায়োটেকনোলজি কে সাথে নিয়েই আগাতে হবে।”

এই ফেস্টের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও সভাপতি ড. সাবিনা ইয়াসমিন । তিনি তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশে জীবপ্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরেন। উপস্থিত অতিথিবৃন্দ দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো বায়োটেকনোলজিস্টদের নিয়োগ না দিতে পারার সম্ভাব্য কারণ ও সমস্যাগুলো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে তাদের মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন। এনওয়াইবিবি এর Chief Operating Officer মোঃ শাহাদাত হোসেনের ধন্যবাদ বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে এই পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আড়াইশোর অধিক এক ঝাঁক উৎসুক তরুণ বায়োটেক শিক্ষার্থী ও স্নাতকদের মাঝে দুই দিন ব্যাপী ১০ টি সেশন এবং ৪টি কর্মশালায় প্রায় ৬৮ টি বক্তব্য পর্ব উপস্থাপিত হয়। আমন্ত্রিত অতিথিদের সংক্ষিপ্ত তবে তথ্যবহুল বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ১ম দিনে উপস্থিত শ্রোতারা অবহিত হন বাংলাদেশের ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি, সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বায়োটেক কোম্পানি, কৃষি-সংক্রান্ত কোম্পানি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, বিদেশে উচ্চশিক্ষা, পেশার পদ পরিবর্তন, উদ্যোক্তা, আন্তর্জাতিকভাবে পেশা, বাংলাদেশের বায়োটেক কমিউনিটি, বিভিন্ন বায়োটেক বিভাগের মধ্যে বন্ধন সম্পর্কে এবং সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন নিয়োগকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজি’র মাইক্রোবিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ও ইনচার্জ পলাশ কুমার সরকার 'সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পেশা' পর্বে বলেন “দেশের কৃষি বিষয়ক গবেষণা ইনস্টিটিউট গুলো কে প্রাধান্য দেয়া হয় কারণ তারা প্রডাক্ট দেখাতে পারছে। আমাদের কে পণ্য কেন্দ্রিক গবেষণা করতে হবে।“ সেই সাথে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির নিয়োগকর্তাগন বলেন, কিভাবে ছাত্র অবস্থায় নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে, কি কি দক্ষতা বাড়াতে হবে, কিভাবে নেটওয়ার্কিং করতে হবে। দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত গবেষকগন উচ্চশিক্ষার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য এবং অনুপ্রেরনা প্রদান করেন একাধিক পর্বে। ১ম দিনে আরো ছিলো জীবপ্রযুক্তিবিদদের উদ্যোক্তা বা ভিন্নমুখী চাকুরীক্ষেত্রে প্রবেশের করণীয় সম্পর্কে চমৎকার উপস্থাপনা ও বক্তব্য।

এছাড়াও, অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে তরুণ জীবপ্রযুক্তিবিদদের জন্য দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছিল ৪টি কর্মশালার - নেটওয়ার্কিং এর কৌশল এবং বৃত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত, যথাযথ পোর্টফোলিও এবং চাকরির সাক্ষাৎকার সম্পর্কিত কৌশল বিষয়ে।

অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি বক্তব্য রাখতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ এনামুল হক, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর বায়োকেমিস্ট্রি এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নুরুল আবসার, লালতীর লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের কার্যনির্বাহী পরিচালক কাজী এমদাদুল হক। সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, ইমেরিটাস প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। উপস্থিত সন্মানিত অতিথিবৃন্দের বক্তব্যে উঠে আসে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায়, সুস্থ দিগন্ত উন্মোচনে নিরলস ভাবে কাজ করা প্রথম সারির যোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম বায়োটেকনোলজিস্টদের ভুমিকা এবং দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে বায়োটেকনোলজিস্টদের ক্যারিয়ার সচেতনতার গুরুত্ব। সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গুলোতে বায়োটেকনোলজিস্টদেরকে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের পদ সৃষ্টিতে সহযোগিতা এবং নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার সাহসিকতা অতীব জরুরী বলে উল্লেখ করেন বক্তাগণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং এনওয়াইবিবি এর অন্যতম নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাক ইবনে আয়ুব এই আয়োজনের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে দুই দিন ব্যাপী চলা এনওয়াইবিবি প্রথম বায়োটেক ক্যারিয়ার ফেস্ট এর সমাপ্তি করেন।