ক্যান্টিন চান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা


Desk report | Published: 2022-05-28 23:58:52 BdST | Updated: 2024-04-20 02:03:53 BdST

ফারহানা মাহমুদ তাকওয়া। থাকেন গাজীপুরে। পড়াশোনা করেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে। ক্লাস করতে হলে কাক ডাকা ভোরে বের হতে হয় প্রতিদিন। সকালে খালি পেটে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। ঐতিহ্যবাহী কলেজটিতে নেই কোন ক্যান্টিন। ফলে দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ভরসা কলেজের বিপরীতে অস্বাস্থ্যকর খাবার।

এমন পরিস্থিতিতে হাজারো শিক্ষার্থী এখন ক্যান্টিনের দাবি তুলছেন। তারা বলছেন, কলেজে কোনো ক্যান্টিন না থাকায় বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েই সময় কাটাতে হয়। যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা চাই কলেজ প্রশাসন দ্রুত এ বিষয়ে যেন সিদ্ধান্ত নেয়।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী সংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ায় সর্ববৃহৎ কলেজ হলেও নেই কোনো ক্যান্টিন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন। ফলে নানা রোগ-বালাইয়ের সম্মুখীন হতে হয় তাদের।

ফারহানা মাহমুদ তাকওয়া বলেন, প্রতিদিন সকাল বেলা কলেজে উপস্থিত থাকতে গেলে না খেয়ে আসা ছাড়া উপায় নেই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কলেজে থাকতে হলে কিছুতো খেতে হবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে রাস্তার পাশের চা-সিঙ্গারা আমার ভালো লাগে না। খাবারের মান ভালো না। যদি ক্যাম্পাসে নিজেদের ক্যান্টিন থাকতো, তাহলে আমরা শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দবোধ করতাম। এতে আমাদের পড়াশোনার মূল্যবান সময়ও বেঁচে যেত।

মারিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কলেজে এসে যে খাবার কিনে খাই, তা সব অস্বাস্থ্যকর। যা খেলে আমাদের নানা রোগ হয়। কিন্তু কী করার আছে? আমরা বাধ্য হয়েই এসব খাই। না খেয়ে তো আর থাকা যায় না, তাই খাই। কিন্তু কলেজে যদি একটা ক্যান্টিন হতো তাহলে আমরা স্বাস্থ্যকর খাবারও পেতাম, সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়ার সময়টাও বেঁচে যেত।

ক্যান্টিন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিতুমীর কলেজ ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, অন্তত পক্ষে মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করার জন্য হলেও ক্যান্টিন প্রয়োজন। সারাদিনের ক্লাস শেষে ক্লান্তির ছাপ মুখে নিয়ে ও ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করে যখন ক্যাম্পাসের বাইরে যাই, তখন চোখে পড়ে শুধু ভাজা পোড়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যদি ক্যাম্পাসে একটি ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে আমরা অন্তত নিশ্চিত হতে পারব যে আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছি। তা-ছাড়া অনেক ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকলেও কখনও কখনও সেমিনার বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পানি পান করতে পারেন না। যদি ক্যান্টিন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে ক্যাম্পাসে সবার পানি পান করার একটি নির্দিষ্ট জায়গা হবে।

তিতুমীর কলেজ নাট্যদলের সাধারণ সম্পাদক ওমর আহমেদ অভ্র জানান, কলেজে একটি ক্যান্টিন থাকা আবশ্যক ছিল। কিন্ত দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কোনো ক্যান্টিন নেই। ঢাকার আশেপাশে ও দূর-দূরান্ত থেকে যেসব শিক্ষার্থীরা এসে দীর্ঘ সময় ক্লাস করেন, তাদের ক্লাসের ফাঁকে খাবারের প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্ত ক্যান্টিন না থাকায় বাইরে গিয়ে তাদের খাবার খেতে হয়। তবে আশেপাশে কোনো মানসম্মত খাবার না থাকায় সেই খাবারগুলোই বেশ দাম দিয়ে খেতে হচ্ছে। শিক্ষার্থী হিসেবে এটি খুবই জটিল সমস্যা কেননা আমাদের আর্থিক খরচের একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। যদি ক্যাম্পাসে ক্যান্টিন থাকে তাহলে আমরা অল্প খরচে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিতে পারবো।

এই বিষয়ে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া বলেন, আমার প্রথম পরিচয় আমি তিতুমীর কলেজের ছাত্র, তারপর ছাত্রনেতা। সরকারি তিতুমীর কলেজের ৫৮ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যান্টিন অবশ্যই দরকার। আমরা শুধু আজকে নয়, নেতৃত্বে আসার পর থেকেই ক্যান্টিনের জন্য আবেদন জানিয়ে আসছি।’

ক্যান্টিন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া সম্পর্কে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা বলেন, ‘ক্যান্টিন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমার কাছে কোনো জোড়ালো দাবি আসেনি। তাই আমরা এই বিষয়ে এখনো উদ্যোগ নেইনি। আমার পূর্বে যারা ছিলেন, তারাও এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। তবে মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিনের ব্যাপারে বলে, যেহেতু বাইরে খাবার খেতে হয়।’