ঢাবির হলে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে 'গেস্টরুমে' নির্যাতনের অভিযোগ


DU Correspondent | Published: 2022-01-27 22:37:03 BdST | Updated: 2024-03-28 15:50:01 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে এক শিক্ষার্থীকে কথিত 'গেস্টরুম' নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টায় এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতনে এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আখতার হোসেন নামে ওই শিক্ষার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে তুলনামূলক নতুন শিক্ষার্থীদের ‘আচার-আচরণ শেখানো’র নামে গেস্টরুমে ডেকে নানান বিষয়ে ‘বিচার-আচার’ করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ উঠেছে, ওই শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণে এমনই একটি ‘গেস্টরুম আয়োজনে’ নির্দিষ্ট সময়ে না আসায় তাকে ডেকে এনে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গণরুমে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি জ্ঞান হারান। এ বিষয়ে আখতার হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

আখতারের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্তরা হলেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান রাজু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইফুল ইসলাম রোহান, ইতিহাস বিভাগের হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজকল্যাণ বিভাগের ইয়ামিন ইসলাম ও সাইকোলজি বিভাগের ওমর ফারুক শুভ। তারা সবাই ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।

হল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টায় তথাকথিত ‘গেস্টরুম’ ছিল। অন্যরা গেস্টরুমে আসলেও আখতার অসুস্থ থাকায় আসেননি। এতে অভিযুক্তরা তাকে ডেকে এনে লাইটের দিকে আধা ঘণ্টা তাকিয়ে থাকার সাজা দেন। ১০ মিনিট তাকিয়ে থাকার পর সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তার ব্যাচমেটের সাহায্যে গণরুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আখতার অজ্ঞান হয়ে পড়েলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার ইসিজি, কোভিড টেস্ট ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হলে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক।

জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হল ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী আবু ইউনুস ও রবিউল ইসলাম রানার অনুসারী। এই দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।

তবে এ ঘটনার দায় নিতে রাজি নন আবু ইউনুস। তিনি বলেন, ‘তারা যে গেস্টরুম নিচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। হল প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে, যেন দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।’

একই রকম দাবি জানিয়েছেন রবিউল ইসলাম রানাও। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনও নির্দেশনা নেই। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’

আখতার জানান, তার বাবা সাতদিন আগে স্ট্রোক করেছেন, আর ছোট ভাই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন; এসব বিষয় নিয়ে কয়েকদিন ধরেই মানসিক ট্রমার ভেতরে তার সময় কাটছিল। এমন সময় এ ধরনের নির্যাতন তিনি সহ্য করতে পারেননি।

পরে এ বিষয়ে হল প্রভোস্টকে জানালে তিনি নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী আখতারের সাথে দেখা করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে আখতার হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। সেই আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।'

এসময় তিনি ছাত্রলীগের নেতাদের এসব এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এত রাতে বিজয় একাত্তর হলে আসতে হয়েছে, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান থাকবে সব কিছুতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য।’

//