ঢাবিতে নিয়োগ নিয়ে দুই অধ্যাপকের দ্বন্দ্ব, হাইকোর্টে রিট


Desk report | Published: 2022-05-14 20:12:45 BdST | Updated: 2024-03-29 14:13:14 BdST

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের স্টোরকিপার পদে নিয়োগ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন ও শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিমের মধ্যে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৭ এপ্রিল অধ্যাপক রেজাউল করিম হাইকোর্টে রিট করেন। নিয়োগ নিয়ে আদালতও দেয় স্থগিতাদেশ। নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে জটিলতা না থাকলেও বিভাগের চেয়ারম্যান উপাচার্যকে সিএন্ডডি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ায় বৃদ্ধি পায় জটিলতা।

এ ঘটনায় বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন ও শিক্ষক অধ্যাপক একেএম রেজাউল করিম একে অপরকে দুষছেন। কামাল উদ্দিনের দাবি, অধ্যাপক রেজাউল করিমের অসৎ উদ্দেশ্য ছিলো বলে নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রার্থীদের তালিকা নিয়েছেন। রেজাউল করিমের দাবি, নিয়োগে দুর্নীতি হতে যাচ্ছিলো দেখে তিনি তালিকা নিয়ে রেখেছিলেন। তালিকা নিয়ে রাখলে সেখানে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১৩ অক্টোবর একটি স্টোরকিপার নিয়োগে অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিমসহ মোট পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির নিয়োগ সংক্রান্ত সিএন্ডডি কমিটির সভায় ২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরীক্ষার আগে অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রার্থীদের তালিকা নিয়ে নিলে সেই নিয়োগ স্থগিত করেন বিভাগের চেয়ারম্যান। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি একাডেমিক কমিটি ও ২৩ ফেব্রুয়ারি সিএন্ডডি কমিটির সভায় অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে স্টোরকিপার পদে প্রার্থীদের নামের তালিকা বিভাগীয় প্রধানকে না জানিয়ে নিয়েছেন বলে সেই নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন। পরে অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো সমাধান না আসা পর্যন্ত ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে এবং নিয়োগ কমিটিও পুনর্গঠিত হবে না’ বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর ২ মার্চ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে দেওয়া একটি চিঠি দেন বিভাগের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন। সেখানে তিনি নিয়োগ কমিটি থেকে রেজাউল করিমকে বাদ দিয়ে নতুন একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। ওই চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ৩ ফেব্রুয়ারির অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় ১৭ সদস্যের মধ্যে ছয়জন শিক্ষক দ্বিমত পোষণ করেন। যদিও সভা সূত্র জানায়, সেখানে উপস্থিত আটজন শিক্ষক দ্বিমত পোষণ করেন। ভিসিকে দেওয়া ওই চিঠিকে ‘মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভায় উপস্থিত এক অধ্যাপক বলেন, সভায় ৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাকাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লেখা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো সমাধান না আসা পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে এবং কমিটিও পুনর্গঠন হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বিভাগের চেয়ারম্যান যদি চিঠিতে এটি উল্লেখ না করে ভিন্ন কিছু লেখেন তবে সেটি মিথ্যা।

এদিকে ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে দেওয়া ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ এপ্রিল নিয়োগ কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। পরে আগামী ১৪ মে সেই নিয়োগ পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন।

নিয়োগে স্থগিতাদেশ দিলেন হাইকোর্ট 

এদিকে বিভাগের এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জাফর আহমেদ এবং কাজী জিনাত হক গত ২৭ এপ্রিল এ স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক রেজাউল করিম গত ৩ মার্চ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি দেন, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। এর ফলে তিনি চিঠি দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এবং ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এজন্য আদালত পুনর্গঠিত অবৈধ নিয়োগ কমিটি বাতিল, ১৪ মে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আদেশ করা হলো।

নিয়োগ কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিম বলেন, আমার কাছে নিয়োগের আবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময়ের বাইরে একজনকে সুযোগ করে দেওয়ার তথ্য আসায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করেছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। যেটা কমিটির সদস্য হিসেবে আমার বেআইনি কিছু না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিভাগের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন নিজ প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সমস্যা হবে, এজন্য আমার ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগ এনে ভিসিকে চিঠি দিয়েছেন। পরে আমি ভিসিকে তার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি চিঠি দিই। তিনি আমার চিঠির কোনো উত্তর দেননি।

অভিযোগের ব্যাপারে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম যে অভিযোগ দিয়েছে, তা মিথ্যা এবং বানোয়াট। তিনি আমাকে না জানিয়ে নিয়োগে প্রার্থীদের নামে তালিকা নিয়ে নিয়েছেন। পরে তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এজন্য অ্যাকাডেমিক কমিটি তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি নিয়োগ কমিটিতে থাকলে ১ হাজার টাকা পেতেন অথচ লাখ টাকা খরচ করে তিনি হাইকোর্টে গেছেন।

বিভাগের চেয়ারম্যানের দাবি, অধ্যাপক রেজাউল করিম কাউকে না জানিয়ে বিভাগের স্টাফদের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে নিয়েছে। এটি উনি অসৎ উদ্দেশ্য করেছেন। এ নিয়ে সিএন্ডডি কমিটিতে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বললেও তিনি কোন ব্যাখ্যা দেননি। তিনি উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করার কথা জানিয়েছেন। পরে সিএন্ডডি সভার সদস্যরা তাকে কমিটি থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত দেয়।

তবে সিএন্ডডি সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, অধ্যাপক রেজাউল করিমকে বাদ দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সভায় কার্যবিবরণীতে লেখা রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে এবং কমিটিও পুনর্গঠিত হবে না।

কামাল উদ্দিন জানান, একজন শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে থাকলে প্রতি সভায় এক হাজার টাকা করে পেতো। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করে দিলেন। রিট করতেতো উনার এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্য না থাকলে তিনি এক লাখ টাকা কেন খরচ করবেন?

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, হাইকোর্ট থেকে কোনো নির্দেশনা এখনও আমার কাছে আসেনি। আসলে বলতে পারব। এর আগে বিভাগে নিয়োগের জন্য গঠিত একটি কমিটির একজন সদস্য পরিবর্তনের জন্য আমার কাছে চিঠি আসছিল। যেহেতু সেটা একটি মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত ছিল এজন্য আমি সেই অনুযায়ীই কাজ করেছি। সূত্র: ইত্তেফাক

 

 

//