ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে প্রথম হওয়া নুয়েলের স্বপ্ন বিচারক হওয়া


Desk report | Published: 2022-06-29 03:27:09 BdST | Updated: 2024-03-19 09:13:20 BdST

‘কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ডাক্তার হয়ে নাম কামাবে। আমার ছোট বেলার যতো বন্ধুরা আছে তাদের একেক জনের একেক আশা ছিলো। যদিও কেউ জানে না, আগামী দিনের ঠিকানা। বাবাও আমাকে বলেছিলেন, আমি চাই তুমি পড়ালেখা করে বিচারক হও। আমার স্বপ্নও তাই ছিল। বাবার চাওয়া ও আমার স্বপ্ন সেদিন কেবল মনের মাঝেই রেখেছিলাম। সেদিন থেকেই বিচারক হওয়ার একবুক স্বপ্ন লালন করে চলছি।’

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে (কলা অনুষদ) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ফরিদপুরের সন্তান নাহানুল কবির নুয়েল (২০)।

 

সোমবার (২৭ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আনুষ্ঠানিকভাবে কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ফল ঘোষণা করেন।

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন নাহানুল কবির নুয়েল। তিনি ভর্তি পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে ৯৬.৫ পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স কেন্দ্রে পরীক্ষা দেন তিনি।

মঙ্গলবার(২৮ জুন) নাহানুল কবির নুয়েল ও তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। নাহানুল কবির নুয়েল বলেন, আমি এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেই। জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। এরপর বাবার চাওয়া অনুযায়ী বিজ্ঞান বিভাগ পরিবর্তন করে ২০১৯ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই। সেখান থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মানবিক বিভাগে ঢাকা বোর্ডের সমন্বিত মেধা তালিকায় ২৮তম হয়ে উত্তীর্ণ হই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ইউসিসিতে কোচিং করি।

তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা পড়ালেখা করেছি। একজন ছাত্র গড়ে ৯ ঘণ্টা পড়ালেখা করলে ভালো ফল করা সম্ভব। বাবা-মায়ের পাশাপাশি আমার শিক্ষকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা। কারণ তারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে ইউসিসির স্যার শরীফ ওবায়দুল্লাহ। আমার এই ভালো ফল করার পেছনে তার অবদান আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেধাবী নাহানুল কবির নুয়েল ময়মনসিংহ সদরের ভাবোখালী ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামের বাসিন্দা চাঁদপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল কবিরের একমাত্র সন্তান। মা নাজমুন নাহার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। ২০০২ সালে ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন নাহানুল।

বাবার চাকরির সুবাদে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন খুলনা শহরের একটি স্কুলে। ২০১২ সালে বাবা আনোয়ারুল কবির খুলনা থেকে বদলি হয়ে আসেন ফরিদপুরে। ফরিদপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৩ সালে মা নাজমুন নাহার ফরিদপুর সদর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ফরিদপুরেই বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন নাহানুল। সে কারণে প্রথমে জিলা স্কুল এবং পরবর্তী সময়ে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে পড়ালেখা করেন নাহানুল কবির।

২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আনোয়ারুল কবির বরগুনায় বদলি হয়ে যান। সেখান থেকে ছয় মাস আগে বদলি হয়ে চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে সেখানে কর্মরত।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মা নাজমুন নাহার বদলি হয়ে ঘিওর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বাবা-মা অন্যত্র বদলি হয়ে গেলেও ফরিদপুরে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যান নাহানুল। ছুটি পেলেই বাবা-মা এসে নাহানুলকে দেখে যান।

নাহানুল কবির নুয়েলের বাবা আনোয়ারুল কবির বলেন, ছেলে ভালো ফল করায় ভিষণ খুশি হয়েছি। আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ফল ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে। ছেলের জন্য গর্ব হচ্ছে। ছেলের স্বপ্ন পূরণ হোক সেই দোয়া করি। সবার কাছে দোয়া কামনা করি।

নাহানুল কবির নুয়েলের মা নাজমুন নাহার বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই খুবই শান্ত প্রকৃতির। পড়ালেখার প্রতি তার অনেক আগ্রহ। পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত থাকে সবসময়। তার ও তার বাবার ইচ্ছা ছিল সে বিচারক হবে। আইন বিষয়ে পড়ালেখা করবে। তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার, আমি কৃষিবিদ। তাই চেয়েছি, ছেলে আইন ও বিচার বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হোক।

তিনি আরও বলেন, আমি এবং তার বাবা ফরিদপুর থেকে বদলি হলেও নাহানুল ফরিদপুরের বাসায় থেকে যায়। মাঝেমধ্যে ফরিদপুরে গিয়ে তাকে দেখে আসতাম। ভালো ফল করায় মনটা ভরে গেছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা বলেন, আমাদের কলেজের একজন শিক্ষার্থী দেশসেরা হয়েছে, এটা গৌরব এবং বড় আনন্দের বিষয়। ফল প্রকাশের পর নাহানুল কবিরের বাবা-মায়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। নাহানুল কবির মায়ের সঙ্গে ঘিওরে থাকে, সে কারণে দেখা করা সম্ভব হয়নি। কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

//