ফল স্থগিত, বিড়ম্বনায় আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা


Desk report | Published: 2022-09-21 04:45:09 BdST | Updated: 2024-04-20 21:39:13 BdST

ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষার দীর্ঘদিন পর ফাজিল (স্নাতক) পাস কোর্সের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ফল প্রকাশিত হলেও নতুন করে সামনে এসেছে ‘ফল স্থগিত’ এর সমস্যা। ফলে বহুল কাঙ্ক্ষিত ফল প্রকাশের পরও সেটি অসম্পূর্ণ থাকায় শিক্ষাবর্ষ সমাপ্ত করতে পারছেন না অসংখ্য শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত সারা দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার ফাজিল (স্নাতক) পাস ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষের নিয়মিত, অনিয়মিত, প্রাইভেট, রিটেক ও মানোন্নয়ন পরীক্ষা-২০২০ চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী, এসব কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফল তিন মাসের মধ্যে প্রকাশের কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা করতে পারেনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। সবশেষ চার মাস চব্বিশ দিন পর গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয়েছে তিনটি শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল। তবে প্রকাশিত এই ফলে অসঙ্গতি থাকায় হতাশ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্রশাসনের ভুলে ওএমআর সংক্রান্ত জটিলতায় ফল স্থগিত হয়েছে অনেকের।

 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনার সমস্যার কারণে দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত সময় বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। ২০২০ সালে যে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়েছে ২০২২ সালে। তারপর আবার ফল পেতে লেগেছে প্রায় পাঁচ মাস। তারপর যদিও ফল প্রকাশিত হয়েছে, এখন আবার অধিকাংশেরই ফল স্থগিতের সমস্যা। কি কারণে ফল স্থগিত হয়েছে সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয়।

তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্রশাসনের গাফিলতির কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীই রয়েছেন যারা তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার পরও ফল স্থগিতের সমস্যার কারণে চাকরিতে আবেদন বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় ছাত্রজীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়ার ফাজিল শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট হয়েছে, এখন সেটি স্থগিত। এর সমাধান কবে হবে সেটিও আমরা জানি না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম এভাবে চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতার পরিচয় দেওয়া দরকার। তাদের মনমতো সবকিছু করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রবিউল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সমস্যার সমাধান সবার কাম্য। কিন্তু এখানে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অথচ মাদ্রাসাগুলোকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গতিশীলতা আনতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর এখন তা আর ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে না। অথচ সে সম্পর্কে তারা জানেই না। তাহলে কেমন করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সমস্যা আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, মাদ্রাসার ভুলের কারণে মাশুল দিচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে সহকারী-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, চূড়ান্ত পরীক্ষার খাতা ও ওএমআর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নির্দেশিত রঙের কাপড়ে না পাঠানোর কারণেই এই বিপত্তি তৈরি হচ্ছে। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের যেসব খাতা আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছায় সেগুলো সর্টিং করার সময় কাপড়ের রঙের ভিন্নতার কারণে এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে একটি শিক্ষাবর্ষের ওএমআর বা খাতার সঙ্গে অন্য শিক্ষাবর্ষের খাতার সংমিশ্রণ হয়ে যায়। ফলে রেজাল্ট শিট তৈরির সময় অনেক ওএমআর অনুপস্থিত দেখা যায়। যার চূড়ান্ত পরিণতিই হলো রেজাল্ট উইথহেল্ড।

‘আবেদনের দরকার নেই, ৪৫ দিনের মধ্যে ফল সমন্বয় হবে’— পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

লোকবল সংকট থাকায় বর্তমানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, স্থগিত ফলের সমন্বয়ের জন্য কোনো আবেদন করার প্রয়োজন নেই। ৪৫ দিনের মধ্যেই পুনরায় স্থগিত ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ফাজিল (স্নাতক) পাস ১ম ও ২য় ও ৩য় বর্ষ পরীক্ষা-২০২০ এর ফল গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ৪৫ দিনের মধ্যে স্থগিত ফল প্রকাশ করার বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের মাধ্যমে যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।