উপলব্ধি


Dhaka | Published: 2020-09-20 03:02:49 BdST | Updated: 2024-03-29 19:52:19 BdST

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

করিম তরফদারের বিশাল সাইজের ভুঁড়িটার মতো তার ব্যবসাও যেন দিনকে দিন ফুলেফেঁপে উঠছে। সর্বনাশা করোনা আর দশটা মানুষকে টেনে হিঁচড়ে পথে নামালেও তরফদারের জন্য তা এসেছে অপার আশীর্বাদ হয়ে। অবশ্য ব্যবসা আগেও মন্দ ছিল না তার, হাসপাতালগুলোর কিছু অসাধু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নিম্নমানের সার্জিক্যাল পণ্য চড়া দামে সরবরাহ করে বেশ ভালোই চলছিল তার অবৈধ কারবার। এর মধ্যেই বিশ্বজুড়ে থাবা বসানো কোভিড নাইনটিন যেন তাকে দুই হাতে উজাড় করে দিচ্ছে। দিনরাত ব্যস্ততা, অর্ডারের পর অর্ডার। দম ফেলার জো নেই। ঢাকা শহরে তার চার-চারটা নকল সার্জিক্যাল পণ্য তৈরির কারখানা। সবখানেই কাজের ধুম, কেউ পণ্য তৈরি করছে কেউ আবার নিম্নমানের এসব পণ্যগুলোতে বিদেশি নামীদামি ব্রান্ডের লেবেল বসিয়ে প্যাকেটজাত করছে।

কিন্তু ব্যবসা ভালো চললেও সারাক্ষণই মেজাজ চড়ে থাকে তরফদার সাহেবের। তার মেজাজের এমন তিরীক্ষি ভাবের প্রধান কারণ, হুট করে কর্তাব্যক্তিদের কমিশন বেড়ে যাওয়া। এইতো সেদিন এক হাসপাতালের পরিচালক ফোন দিয়ে বললো, ‘করিম সাহেব, আপনি এসব কি ভেজাল দুই নাম্বারি প্রোডাক্ট পাঠাইছেন, চিকিৎসকরা বার বার আমার কাছে এসে কমপ্লেইন করতেছে। এদিকে হাসপাতালে হাসপাতালে যে র‌্যাবের অভিযান শুরু হইছে শুনেছেন তো? আমি আর ম্যানেজ করতে পারব না ভাই। আপনি অন্য কোথাও দেখুন।’

ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে দেওয়ার পর এক দলা থুথু ফেলতে ফেলতে হারামির বাচ্চা বলে পরিচালককে গালি দেয় সে। পরক্ষণেই ভিড়ভিড় করে বলে, শালা সময় বুঝে জিহ্বা এক হাত লম্বা করে ফেলছো। আমারে দুই নাম্বারি ভেজাল বুঝাও না? এতোদিন ভেজালে সমস্যা হয়নাই, এহন হুট কইরা বিরাট বড় সমস্যা হয়া গেছে। আরে বেটা তোর মতো কতো পরিচালককে সকাল-বিকাল চড়ায়া খাই, আর তুই আসছোস নিজের ভাগ বাড়ানোর জন্য কায়দা করতে।

কিন্তু পিছে পিছে যতই গালি দিক না কেন দীর্ঘ পঁচিশ বছর এই লাইনে থাকা তরফদার ভালো করেই জানে, এদেরকে কিছুই বলা যাবে না। ইদানীং এই লাইনে তার মতো আরও অনেক তরফদার এসে ভর করেছে। আর এটির ফায়দা নিচ্ছে হাসপাতালের দুই নাম্বারিরা। হারামিরা যেখানে কমিশন বেশি পায়, সেখানেই সিল মারে।

পকেট থেকে বেঞ্চন এন্ড হ্যাজেসের প্যাকেটটা বের করে একটায় আগুন ধরাতে ধরাতে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো সে । এমনিতেই আজ তার মন খারাপ, সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখে এসেছে ছোট মেয়েটার জ্বর আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। গলা ব্যথার সঙ্গে হালকা কাশিও আছে। মহামারির এই সময়ে এটা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। একবার করোনা টেস্ট করাইতে পারলে ভালো হইতো।

করিম তরফদারের মেয়ের অবস্থা আগের থেকে আরও খারাপ হয়েছে। কোন গতিক না দেখে উত্তরার এক হাসপাতালে নিয়ে যায় তার মেয়েকে। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় নি। তিনদিনের দিন এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অজানায় পাড়ি জমিয়েছে ফুটফুটে মেয়েটা।

হাসপাতালের অভ্যর্থনাকক্ষে বিমর্ষ ও ক্রুদ্ধনয়নে বসে আছে করিম তরফদার। সে মাত্রই এক দালাল মারফত খবর পেয়েছে, হাসপাতালে আনার পরদিনই মারা যায় তার মেয়ে, কিন্তু বিল বেশী করতে আইসিউতে রাখার কথা বলে আরও দুইদিন ফেলে রাখে ওই জানোয়াররা। এই খবরে আরও ভেঙে পড়েছে তরফদার। এতোদিন কয়টা টাকা বেশী লাভের জন্য ভেজাল পণ্য হাসপাতালে হাসপাতালে সাপ্লাই দিয়ে রোগীদের ঠকাইত সে। আজ তাকেই কিনা ঠকানো হলো!

কি হবে এতো টাকা দিয়ে। যে টাকা দিয়ে কলিজার টুকরা মেয়েটাকেই বাঁচানো গেল না! ভাবতে ভাবতে এক ঝাপটে উঠে দাঁড়ালো সে৷ নাহ আর না। এভাবে আর নাহ।

৯৯৯, ক্রিং ক্রিং ক্রিং, হ্যালো, একজন অসাধু ব্যবসায়ী করিম তরফদার বলছি। আমাকে গ্রেপ্তার করুন। আমার সাথে আর যারা আছে তাদের নামও বলছি শুনুন....।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ইয়েস গ্রুপ আয়োজিত করোনাকালে দুর্নীতি ও প্রতিরোধের গল্প শিরোনামে 'দুর্নীতিবিরোধী গল্প লেখা' প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ইয়েস গ্রুপ আয়োজিত করোনাকালে দুর্নীতি ও প্রতিরোধের গল্প শিরোনামে 'দুর্নীতিবিরোধী গল্প লেখা' প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান

//