করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার ভাইরাসের আগের যে কোনো ধরনের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) একে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এটি টিকার প্রতিরোধক্ষমতাকে এড়াতে পারে, যে কারণে এটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ওমিক্রনের কারণে সৃষ্ট অসুস্থতাকে ‘হালকা’ বলা হচ্ছে। তবে এটি সহজেই তাদেরও সংক্রমিত করতে পারে যারা আগে ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল কিংবা সব টিকা (বুস্টার ডোজ সহ) নিয়েছে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদেরকে এর বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিয়েছে। ওমিক্রনে যে নতুন লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে-
ক্লান্তিবোধ
করোনাভাইরাসের আগের যে কোনো ধরনের চেয়ে ওমিক্রন একটু বেশি ক্লান্তি বা চরম ক্লান্তির কারণ হতে পারে। আপনি ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করতে পারেন, শক্তি স্বল্পতা অনুভব করতে পারেন এবং আপনার ভেতর বিশ্রাম নেওয়া প্রবল ইচ্ছা জাগতে পারে। যা আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করতে পারে।
তবে একথাও মনে রাখতে হবে, শুধু কোভিডের কারণে নয়, অন্যান্য কারণ এবং স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও যে কারো ক্লান্তি বোধ হতে পারে। আপনার শারীরিক অবস্থা নিশ্চিত হতে পরীক্ষা করে নিন।
খসখসে গলা
দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসক অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজের মতে, ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিরা গলা ব্যথার পরিবর্তে ‘খসখসে গলায়’ কথা বলছেন।
যা অস্বাভাবিক। আগেরটি গলার জ্বালার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর নতুনটি আরো বেদনাদায়ক।
হালকা জ্বর
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে হালকা থেকে মাঝারি জ্বর হলো অন্যতম লক্ষণ। তবে করোনার আগের ধরনগুলো রোগীদের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেললেও ডা. কোয়েটজির মতে, বর্তমান ধরন শরীরে হালকা তাপমাত্রা আনে, আবার নিজে থেকেই চলে যায়।
রাতে ঘাম এবং শরীরে ব্যথা
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেকটি আপডেটে জানা যায়, ডা. উনবেন পিলে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীরা লক্ষণগুলো তালিকাভুক্ত করছেন। তিনি বলেন, রাতের ঘাম ঝরা ওমিক্রন সংক্রমণের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে। রাতে এতটাই ঘাম হতে পারে যে যদি আপনি শীতল জায়গায়ও শুয়ে থাকেন, তবুও আপনার কাপড় এবং বিছানা ভিজে যাবে। ডাক্তারের মতে, এটি ‘প্রচুর শরীর ব্যথা’সহ অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে দেখা দিতে পারে।
শুকনো কাশি
ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শুকনো কাশিও দেখা দিতে পারে। এটি আগের ধরনের মধ্যেও সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি ছিল।
ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের দেখে এখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছে যে, ওমিক্রন আপাতত শুধুমাত্র হালকা লক্ষণগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। আর তাছাড়া করোনার আগের ধরনগুলোর মতো ওমিক্রনে গন্ধ বা স্বাদ হারানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে এতে কোনো রোগীর নাক বন্ধ হয়ে যেতেও দেখা যায়নি।
শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, ওমিক্রন এখনো পর্যন্ত কারো মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারেনি। বেশিরভাগ রোগীই ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন গত দুই সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মাত্র ৩০% গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন। যা আগের তুলনায় অর্ধেক। আর হাসপাতালে গড়ে মাত্র ২.৮ দিন করে থাকতে হচ্ছে রোগীদের, যা আগে ছিল গড়ে ৮ দিন।
আর এবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মাত্র ৩% মারা যাচ্ছেন। অথচ আগের ডেল্টা ধরনের সময় এই হার ছিল ২০%।
তবে ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকায় মহামারী আকার ধারন করেছে মাত্র দুই সপ্তাহ হল। ফলে এখনই চূড়ান্তভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন দেশটির চিকিতসকরা।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ওমিক্রনের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা রোগীর সংখ্যা ৪০০ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার ২২,৪৪০ জন এবং শুক্রবার ১৯ হাজার জন করোনা রোগীর শরীরে ওমিক্রন ধরা পড়েছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় এখন প্রতদিন ২০০ গুণ বেশি মানুষ করোনার রোগী হচ্ছেন। গত এক মাসে ৯০ হাজার মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।