দেশসেরা ফিচার রির্পোটার ওমর ফারুকের ছুটেচলা


নিতিশ কর্মকার | Published: 2017-11-02 03:30:52 BdST | Updated: 2024-03-28 18:03:06 BdST

যিনি নানা স্পর্শকাতর বিষয়গুলো তুলে আনেন অতি সহজে, ফিচার রির্পোটিং করেও যিনি অনেক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে, প্রমাণ করেছেন সাংবাদিকতা মিশে আছে তার রক্তে। তিনি আর কেউ নন দেশ সেরা ফিচার রির্পোটার মোহাম্মদ ওমর ফারুক। কাজ করছেন ইত্তেফাকের ফিচার রির্পোটার হিসেবে। সদা হাস্যজ্জল ওমর নিজের কাজ গুলোকে নিয়ে গেছেন অন্যমাত্রায়, প্রমাণ করেছেন- মেধা, পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় সবই সম্ভব। সাংবাদিকতা জগতে ছুটে চলেছেন দুরন্ত গতিতে। মানবিকতা, সচেতনতা এবং দেশের কল্যাণেই সাংবাদিকতা- এমন বিশ্বাসে ই এগিয়ে চলেছেন একনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমের এই কনিষ্ঠ তরুণ। তুলে আনছেন নিপীরিত মানুষের কষ্টগুলো। কাজ করছেন সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষ গুলোর জন্য। সাংবাদিকতা করে মানুষের জন্য যে কিছু করা যায়, সেটাই দেখিয়েছেন তরুণ এই সাংবাদিক।

ওমরের সাংবাদিকতা জীবনটা নানান বৈচিত্রময়। মফস্বল থেকে কাজ করে সরল পথে রাজধানীতে। মফস্বলের সরল পথ পেরিয়ে রাজধানীতে আসার পথটি মোটেও সরল ছিল না তার জন্য। নানান প্রতিবন্ধকতা, নিজের আর সমালোচনাকারীদের সাথে যুদ্ধ করে এ যেন অন্যরকম বিজয়। কিন্তু বিজয় করেই যে পথ শেষ তা কিন্তু নয়, জায়গায় পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সাথে যোগ সমালাচনাকারীও। ওমরের সোজা কথা, ’কে কি ভাবলো বা বল্লো, তা দেখার সময় নেই’।

তরুন এই রির্পোটারের লেখালেখির হাতের খড়ি সেই ছোট বেলা থেকেই। সম্ভবতো প্রাথমিক পড়াশোনা থেকেই লেখার প্রয়াস শুরু। আর ভালোভাবে লেখালেখি শুরু করেন উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময়। তখন ক্লাস সেভেন থেকেই স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকা গুলোতে টুকটাক লেখা প্রকাশ হতো তাঁর। স্কুল শিক্ষক বাবা চাইতেন ছেলে আর্মি অফিসার হবে কিন্তু ছেলে চাইতেন সৃজনশীল কিছু করতে। সেই ধারাবাহিকতায় লেখালেখিসহ বিভিন্ন সংগঠন করতেন তিনি। স্কুল জীবনে নিজেই ছিলেন বেশ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোক্তা। তার পর ক্লাস অষ্টম শ্রেনীর কথা নিজের কবিতা দিয়ে প্রকাশ করেছেন কাব্যগ্রন্থ 'বিদ্ব্যান'। তখনই বইটির জন্য ইয়ং রাইটার হিসেবে পেয়েছিলেন পুরস্কার।

তরুণ এই রিপোর্টার লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। কিন্তু এখন কেন কবিতা লিখেন না, এই নিয়ে মুখ খুললেন ওমর। তিনি বলেন, আগে যে কবিতা গুলো লিখেছি তা এখন পড়লে খুব লজ্জা পাই, এগুলো আমি কি লিখেছি, কাঁচা হাতের লেখা যা হয়। আসল কথা হচ্ছে এতো ব্যস্ততার মাঝে এগুলো লিখার আর সময় নেই। অবশ্যই সময় পেলে আবার চেষ্টা করব। তখন তার নিজের লেখার পাশাপাশি অন্যের লেখা প্রকাশের জন্য সংবাদ ভিত্তিক ম্যাগাজিন মাসিক বিশ্বের আলো বিশ্বকন্ঠ সম্পাদনা দিয়ে শুরু হয় সাংবাদিকতার সূত্র। চৌদ্দ কি পনেরো বয়সেই সম্পাদক! এখনকার, দেশের সেরা এই ফিচার রির্পোটাকে বলতে পারেন সম্পাদনা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু। সেটা দিয়েই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সেই বয়সেই। ছাড়িয়ে গিয়েছেন নিজেকে, সবার মুখে মুখে ওমরের নাম। নিজের উপজেলার প্রতিটি হাইস্কুলে ওমরের রব রব অবস্থা। তাইতো এসএসসি পরীক্ষার হলে গিয়ে চেনা শিক্ষক গুলোর সাথে বিড়ম্বনায় শিকার। বলা যায় এই বয়সে খ্যাতির বিড়ম্বনা! পরের গল্পটা আরেকটু ভিন্ন রকম। যখন এসএসসি পরীক্ষা কেবল মাত্র শেষ হলো তখন বিশ্বের আলো বিশ্বকন্ঠের জন্য লেখা চাইতে গিয়ে কাজ করার সুযোগ হয় কুমিল্লার স্থানীয় সাপ্তাহিক কুমিল্লার আলোতে। কুমিল্লার আলোতে কাজ ভালোই চলছিল কিন্তু কোন এক কারণে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কাজ শুরু করেন দৈনিক আমাদের কুমিল্লার রির্পোটার হিসেবে।

এরপর শুরু হয় কলেজ জীবন। কলেজে এসে আর্দশ পাবলিক কলেজে এইএসসিতে পড়ার পাশাপাশি কুমিল্লা কৃষি কলেজ থেকে এগ্রিকালচারে ডিপ্লোমা করেন তিনি। আর কাজ তো আছেই। এক পর্যায়ে আমাদের কুমিল্লা ছেড়ে দিয়ে তখনকার নব্য দৈনিক ময়ামতিতে কাজ শুরু করেন। আবার তখনকার কুমিল্লার সাপ্তাহিক সময়ের পথ, কুমিল্লার কথা', পথিকৃত কুমিল্লায় ছিলেন বেশ কয়েকদিন। পরে আবার কাজ শুরু করেন দেশের প্রথম মফস্বল বৈকালিক পত্রিকা কুমিল্লার ডাকে। কুমিল্লার ডাকে কাজ করার পাশাপাশি কুমিল্লার সকল পত্রিকায় তখনকার সময়ের কলামও লিখতেন তিনি। আর সেই সুবাদে কুমিল্লার পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন ওমর। কুমিল্লায় কাজ করার সময় চ্যানেল আইয়ের 'সাপ্তাহিক' এ তার অসংখ্য লেখা প্রকাশ হয়।

কাজ করতে গিয়ে নানান প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে তাকে। সাংবাদিকতার স্বীকৃতি স্বরুপ শিশুদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে সেরা রির্পোটার হিসেবে তিন তিনবার পেয়েছেন জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ১১, ১২ সর্বশেষ ২০১৬। ২০১৩ সালে একই পুরস্কারের জন্য মনোনিত হন তিনি। এরপর বিএফটিএসএসি অ্যাওয়ার্ড ২০১১, এখানে থেমে থাকেননি তিনি।

এইচএসসির পাঠ চুকিয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পাশাপাশি কাজ করছেন দৈনিক ইত্তেফাকে। এর আগে তিনি বনিক বার্তায় ফিচার রির্পোটার হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দেশসেরা বিনোদন ম্যাগাজিন আনন্দ বেলাতে। এখন ইত্তেফাকের পাশাপাশি কনসাল্টিং এডিটর হিসেবে আছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল লেটেস্ট বিডি নিউজে। গত বছর তৃতীয় লিঙ্গদের নিয়ে কাজ করে পেয়েছেন বন্ধু মিডায়া ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৫ সহ সেরা রির্পোটার হিসেবে আটটি অ্যাওয়ার্ড আছে তার ঘরে। বর্তমানে তিনি ইত্তেফাকে ফিচার রির্পোটার হিসেবে কাজ করছেন। ওমর মূলত পলিটিক্যাল ইন্টারভিউ, নারী, শিশু, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাস হালচাল, তরুন প্রজন্ম, অর্থনীতি, তৃতীয় লিঙ্গ বা সংখ্যালঘুর মতো স্পর্শকাতর ইস্যু গুলো নিয়ে কাজ করছেন।

জন্ম ও পরিবার: মোহাম্মদ ওমর ফারুক ২৮ ডিস্মেবর ১৯৯৫ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহন করেন। জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া গ্রামে তার শৈশব বেড়ে ওঠা। স্কুল শিক্ষক বাবার আর্দশেই বেড়ে ওঠেছেন তিনি। বাবা মায়ের চার সন্তানের মধ্যে ওমর সবার বড়।

শিক্ষা: প্রাথমিক শিক্ষা বাবার স্কুল দিয়ে শুরু করলেও স্কুল পরিবর্তন হয়েছেও বেশ কয়েকবার। পরে নানুয়ার বাজার সরকারী প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শেষ। পরে হাই স্কুল শুরু বুড়িচং আনন্দ পাইলট সরকারী বালক উচ্চবিদ্যালয়। কিন্তু এসএসসি দিয়েছেন গ্রামের বিদ্যালয় থেকে। আদর্শ পাবলিক কলেজ থেকে এইএসসি, কুমিল্লা কৃষি কলেজ থেকে চার বছরের কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করেন তিনি। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তরুণ এই সংবাদকর্মী।

এনএইচ/ ০১ নভেম্বর ২০১৭

//