তরুণ প্রজন্ম যেন অপরাধী না হয়ে উঠে


Dhaka | Published: 2022-01-13 04:22:12 BdST | Updated: 2024-03-29 18:25:55 BdST

আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে দাসপ্রথা বিলোপ করেন। কিন্তু আজকের আধুনিক বিশ্বেও শ্রমদাস বা জবরদস্তিমূলক শ্রম দেখা যায় উন্নত বিশ্বেও। মূলত সভ্যতার শুরু থেকেই আপরাধ ও অপরাধীরা ছিল। সময়ের সাথে সাথে বা সভ্যতা বিকাশের সাথে তাল মিলিয়ে অপরাধের ধরণ ও প্রবণতা পরিবর্তিত হয়েছে। আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে নানা ধরনের অপরাধের মধ্যে কন্যা শিশু হত্যা ছিল অন্যতম, কিন্তু আজকের পৃথিবীতে কন্যা শিশুকে হত্যা করা হয়না ঠিকই, তবে এই সময়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায় নানাভাবে মেয়েদের রাস্তায় হেনস্তা করা হয় যেমন ইভটিজিং,বাজে প্রস্তাব ইত্যাদি । তাছাড়া বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের বিভিন্নভাবে কিছু লোক হয়রানি বা ভয়ভীতি দেখায়। আর এ সকল অপরাধে যুক্ত হয় সমাজের কিছু ঘৃণ্য মানুষ, যার মধ্যে কিছু তরুণও রয়েছে।যদিও দেশের অনেক তরুণ দারুণ দারুণ ভাল কাজ করে যাচ্ছে যা ব্যপক প্রশংসিত।

বর্তমানে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত মাদক ছড়িয়ে গেছে। মাদক গ্রহণের মিছিলে অংশ নিয়েছে প্রায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ বিশেষত তরুণ প্রজন্ম। দেখা যায় আর্থিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহণ চলছে বিভিন্ন উপায়ে । যেমন অনেক পথশিশু নিচ্ছে ড্যান্ডি (জুতার আঠা) , অনেক রিক্সাওয়াওয়ালা নিচ্ছে গাঁজা, অনেক নিন্মমধ্যবৃত্ত বা মধ্যবৃত্ত নিচ্ছে ইয়াবা, অন্যদিকে প্রচুর অর্থের মালিক বা তাদের ছেলে-মেয়ে নিচ্ছে হেরোইন, মদ, আইস, এলএসডি এর মতো ভয়াবহ মাদক। মাদকের নানাবিধ কুফল জানার পরও মাদক সেবন চলছে!মূল ভয়াবহতার স্বীকার হয় আমাদের তরুণ প্রজন্ম যা দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রগতির জন্য বড় বাধা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৮ বছর বা এর ঊর্ধ্বের বয়সী মানুষের মধ্যে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মাদকাসক্ত। অন্যদিকে, ৭ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এই হার শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। যদিও মাদক নিয়ন্ত্রনে সরকার নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। মো:পুর থানা, ডিএমপি এর উপ-পরিদর্শক মো:নাজমুল ইসলাম বলেন,"প্রকাশ্য মাদক আমরা নিয়ন্ত্রণ করি সহজেই কিন্তু ফ্লাটের ভিতরে প্রচুর বিত্তবান ব্যক্তির সন্তান মাদক গ্রহন করে, যা আমাদের পক্ষে জানা একটু কঠিন হয়ে যায়। তাই বাবা-মাকে সন্তানদের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখাতে হবে মাদক নিরাময়ে।" একই থানার উপ-পরিদর্শক হোসনে মোবারক বলেন, "মাদককে কার্যকরভাবে দমনের জন্য সরকার ২০১৮ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন প্রণয়ন করেছে, যা প্রয়োগ করা হচ্ছে মাদক অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী। "
তাই বলাই বাহুল্য, সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি পরিবারের সচেতনতা বা সঠিক নির্দেশনা থাকা অধিক জরুরী। যদিও কিছু পরিবারের বাবা-মা নেশাগ্রস্ত আছে, তাদেরকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে সন্তানদের কল্যাণার্থে।বাবা-মাকে নজর রাখতে হবে সন্তান কাদের সাথে মিশছে বা কোন ধরনের জীবন-যাপন করছে । তবেই মাদকমুক্ত করা সহজ হবে। তাছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে কঠোরভাবে। অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে মাদক নিয়ন্ত্রনে । কিন্তু সকল কিছুর উপরে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা অধিক গুরুত্ব বহন করে।

অন্যদিকে, ইদানীং কিশোর-গ্যাং এর কথা ব্যপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। কিশোরগ্যাং এর সদস্যদের যখন স্কুলে থাকার কথা ছিল তখন তারা অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামছে মারামারি-ছিনতাই করবার জন্য যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। অনেকেই বলে থাকেন, টিকটক ও লাইকির মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অগমণের সাথে সাথে দেশে কিশোরগ্যাং বেড়েছে কয়েকগুণ। সন্তানের নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবার জন্য সন্তানের হাতে সঠিক সময়ে, সঠিক নির্দেশনা দিয়ে স্মার্টফোন দেয়াই যথার্থ।নতুবা তরুণ প্রজন্ম তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সাইবার আপরাধ করতে পারে যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারি সংস্থাও নিয়মিত কিশোরগ্যাং দমনে ও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছে বটে। তথাপি কোনো গ্যাংয়ে দলভুক্তি হবার আগেই অর্থাৎ অপরাধী হবার পূর্বেই লক্ষ্য রাখতে হবে পিতা-মাতাকে।

যদি করো একটি সন্তান খারাপ পথে চলে যায়, তবে তার পুরো পরিবারকে এজন্য ভূগতে হয় নিদারুণভাবে। সুতরাং মাদক মুক্ত রাখবার জন্য, কিশোরগ্যাং থেকে দূরে থাকবার জন্য এবং সর্বোপরি সুন্দর জীবন গড়বার জন্য আপনার সন্তানকে সময় দিন, নজর রাখুন, আলোর পথ দেখান, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করুন, নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিন। এভাবেই গড়ে উঠবে আমাদের সোনার বাংলা যেখান তরুণেরা ব্যস্ত থাকবে শিক্ষা, গবেষণা, আবিষ্কার, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায়।

লেখক,
আহমেদ রেজা,
উপ-পরিদর্শক,
মোহাম্মদপুর থানা,ডি এম পি,ঢাকা।
[email protected]

//