
সাইয়েদ আব্দুল্লাহ
জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্য শুভকামনা। রাজনীতির রিয়েল গ্রাউন্ডে স্বাগতম। এই দলটা সফলভাবে দাঁড়িয়ে গেলে তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য চমৎকার একটা ব্যাপার হবে। বাংলাদেশকে ধারণ করে এমন সেন্ট্রিস্ট ( কিছুটা লেফটিস্ট বা রাইটিস্ট ইফেক্টও যদি থাকে) দল দাঁড়িয়ে গেলে তা আদতে পতিত স্বৈরাচার লীগের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেরাটা ( নিয়ার ফিউচারে তো নয়-ই, দূরবর্তী সময়কে মিন করেছি) অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এই দলটা যারা গঠন করছে, তারা সবাই আমার খুব ক্লোজ, দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহযোদ্ধা ভাই-ব্রাদার। নানা আলোচনা কিংবা সমালোচনা থাকতে পারে, এই কয়েকমাসে অনেকেই হয়ত ভুলভাল অনেককিছু করে ফেলেছে বা কমিটমেন্টের প্রতি সুবিচার করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু এতোটা বলতে পারি, তাদের অধিকাংশেরই পিওর সৌল আছে। এটলিস্ট এখন পর্যন্ত তো নিশ্চিতভাবেই আছে, সামনে কী হবে সেটা সময় বলে দিবে।
রাজনৈতিক দল গঠন করার মিনিং হলো এখন থেকে সরাসরি রিয়েল খেলার মাঠে নেমে পড়া। অনেক সংকট আসবে, বিতর্ক হবে, মন ভাঙাভাঙি হবে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব হবে, ব্যাকস্ট্যাবিং হবে, বিশ্বাসঘাতকতা থাকবে— পলিটিক্সে এসবকিছুই নরমাল ঘটনা। এগুলোকে কীভাবে নিয়মিত ঠাণ্ডা মাথায় ম্যানেজ করা যায়— সেটাই হলো রাজনীতির আসল খেল।
মাটি কামড়ে মাঠে লেগে থাকতে পারলে লঙরানে ভালো সফলতা আসবেই, অর্গানিক্যালিই সেটা আসতে বাধ্য।
রাজনৈতিক দল গঠনের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্রন্টে উত্তাপ ছড়ানোর ব্ল্যাংকচেক ছিলো। অনেককিছুতেই ছাড় পাওয়া যেতো, কিন্তু দল হিসাবে অফিসিয়ালি দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর সেই সুযোগটা আর থাকবে না, থাকা উচিৎ-ও না। এখন যাই করতে হবে বা বলতে হবে, তা অনেক হিসেবনিকেশ করে।
সামনের দিনে হাল ঠিকমতো ধরে রাখতে চাইলে স্রেফ দুইটা জায়গায় মনোযোগী হলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে—
১. একটিভিজম আর রাজনীতি এই দুইটা আলাদা জিনিস, এই দুইটার ভেতর পার্থক্য করতে শেখা। এমনকি আন্দোলন আর ভোটের রাজনীতি যে আলাদা—সেই ম্যাকানিজমও বুঝতে শেখা। পিওর সৌল থাকার পাশাপাশি পলিটিক্যাল ম্যাচুরিটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি মনের দিক থেকে ভালো, কিন্তু পলিটিক্যাল ম্যাচুরিটি কম— এমনটা হলেও কিন্তু রাজনীতিতে টিকে থাকা অসম্ভব।
২. বেশি তাত্ত্বিক মানুষদের ফাঁদে না পড়া। ইতোমধ্যে এই ফাঁদে তারা পড়ে গেছে নানা জায়গায়, ভুলভাল অনেক কাজ হয়েও গেছে। সেসব জায়গা থেকে যতদ্রুত উত্তরণ করা যাবে ততোই ভালো। তাত্ত্বিক মানুষ এবং অন্য কোন পর্দার আড়ালের গোষ্ঠীর শেখায়ে দেওয়া বুলি বা নোট এক্সিকিউট করার টেন্ডেন্সি কিন্তু স্বাভাবিক রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে পুরোপুরি ভোঁতা বানিয়ে ফেলবে। এই দলের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বহু। প্রত্যাশা বেশি থাকার কিন্তু ভিন্নরকম একটা ইমপ্যাক্টও পড়ে। মানুষ যদি দেখে কাজের মধ্য দিয়ে সেই প্রত্যাশার রিফ্লেকশন হচ্ছে না, তাহলে সমর্থনের পারদও অস্বাভাবিকভাবে নেমে যায়।
যাইহোক, পথটা হয়ত হাজারো কণ্টকাকীর্ণ, কিন্তু সফল হতেই হবে। একটা চমৎকার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য এই দলটার সফল হওয়াটা খুব বেশি জরুরি। নতুন এই অভিযাত্রায় সু-স্বাগতম।
All the best wishes, Comrades.
লেখাটি তার ফেইসবু আইডি থেকে নেয়া