আল-জাজিরার প্রতিবেদন দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র: মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিবাদ


ঢাকা | Published: 2021-02-03 17:38:00 BdST | Updated: 2024-04-25 22:21:46 BdST

কাতার ভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরা কর্তৃক বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আজ ৩ ফেব্রুয়ারী বুধবার বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন স্বাক্ষরিত এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে।

লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরোও বলা হয়েছে, "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধারাবাহিক নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে আসছে কাতারি রাজ পরিবারের মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা। আল জাজিরায় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত যেকোন সংবাদ উপস্থাপনের ধরন দেখে মনে হয় তাদের মূল উদ্দেশ্যই থাকে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।

বিশেষ করে একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া এগুনোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাদের অপপ্রচারের মাত্রা।আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বিচারকে প্রহসন হিসেবে উপস্থাপন করে একাত্তরের কুখ্যাত ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ‘ভালো মানুষ‘ সাজিয়ে তাদের ‘ইমেজ বিল্ডআপ’ এরও একটি চেষ্টা দেখা গেছে আল জাজিরার সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর ‘দি পলিটিকালাইজেশন অব বাংলাদেশ‍স ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তালহা আহমেদ নামের একজন প্রতিবেদক বাংলাদেশের চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করেন।

ওই প্রতিবেদনে একাত্তরের পাকসেনাদের দোসর জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আল জাজিরার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রমাণ দেয় দলটির সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়টির। সেখানে বলা হয়, ‘এমনিতেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল অবস্থায়- এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায়। এতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে আরও। ’ প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে বিতর্কিত হিসেবে অভিহিত করা হয়। এছাড়া আল জাজিরার আরও বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে জামায়াতের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়। বিশেষ করে ‘বাংলাদেশ পলিটিশিয়ান অ্যাকিউজড অফ ওয়্যার ক্রাইম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রতিবেদক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের পক্ষে সাফাই গান। সেখানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সাবেক রাজনীতিবিদ গোলাম আযম ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি। ৮৯ বছর বয়সী গোলাম আযম হাঁটতে পারেন না, দেখতে পান না।

এভাবেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের শিরোমণি গোলাম আযমকে নিতান্ত ভালো মানুষ হিসেবে ‍উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয় আল জাজিরায়। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে দেশ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে নিপতিত হবে বলেও তথ্য উপস্থাপন করে আল জাজিরা। শুধু মুক্তিযুদ্ধ কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোই নয়, বরং বাংলাদেশের অন্যান্য ঘটনাবলী নিয়েও ‘নেতিবাচক’ উপস্থাপনের একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় আল জাজিরার সংবাদ পরিবেশনায়। এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, এই গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য কী? আল জাজিরার এসব কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার হীন প্রয়াস।

সম্প্রতি আল জাজিরা সবচেয়ে বিতর্কিত ভূমিকা নেয় মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর। আল জাজিরায় হোয়াটস বিহাইন্ড বাংলাদেশ’স ওয়ার ক্রাইম ট্রায়ালস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আল জাজিরার উপস্থাপিকা জেন ডাটন ‍ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুখোমুখি করেন জামাতের পেইড এজেন্ট ডেভিড বার্গমান, আইনজীবী টবি ক্যাডমান ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হককে।

ওই অনুষ্ঠানেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উপস্থাপনের একটা অপচেষ্টা চলে। টবি ক্যাডম্যান এবং ডেভিড বার্গম্যান উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলেও মফিদুল হক যথাযথ তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে একাত্তরে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপকর্মের খতিয়ান উপস্থাপন করেন। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। আল জাজিরা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই এসব পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশনা করছে না। বরং পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুবিদিত।

এমনকি আল জাজিরা কর্তৃপক্ষের এসব অপসাংবাদিকতা মেনে নিতে না পেরে সংবাদ সংস্থাটি থেকে একযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এর মিশর শাখার ২২ জন সাংবাদিক। যা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন ও সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে আল-জাজিরার পক্ষপাতমূলক কার্যক্রমের প্রতিবাদে এ পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছিল। পশ্চিমা বিশ্বেও টেলিভিশন চ্যানেলটিকে দেখা হয় সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের পরোক্ষ প্রেরণাদাতা৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরতে গিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়ে আল জাজিরা। এছাড়াও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ পরিবেশনের কারণে মিশর ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যবস্থা নেয় টেলিভিশন চ্যানেলটির বিরুদ্ধে।

২০১০ সালে আল জাজিরা টেলিভিশনের কুয়েত শাখার কার্যালয় বন্ধ করে দেয় কুয়েতের সরকার। বিরোধীদের সমাবেশে পুলিশী হামলার চিত্র উস্কানিমূলকভাবে সম্প্রচার করায় এর কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয় তারা। পাশাপাশি দেশটিতে আল জাজিরার প্রতিনিধিদের কাজ করার অনুমোদনও প্রত্যাহার করে কুয়েত। এর আগেও একবার ২০০২ সালের নভেম্বরে আল জাজিরা কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিল কুয়েত সরকার। মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে গত জুন মাসে আল-জাজিরার তিন সাংবাদিককে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় মিশরের আদালত। মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ রায় দেন মিশরের আদালত। পাশাপাশি মিসরের প্রসিকিউটররা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আল জাজিরার ২০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে এমন চিত্র তুলে ধরার অভিযোগ আনা হয় এসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।
এই যখন পরিস্থিতি তখন বাংলাদেশেও জনমত জোরদার হচ্ছে আল জাজিরার বিরুদ্ধে।

আল-জাজিরা স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে কাজ করায় এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে টেলিভিশন চ্যানেলটি প্রকৃত অর্থে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী যে ধরনের অভিযোগ তুলছে আল জাজিরা সরাসরি সেসব অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রতিবেদন, অনুষ্ঠান প্রচার করে যাচ্ছে। অর্থাৎ তারা জামায়াতের মুখপত্র হিসাবে কাজ করছে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের তথ্য বিকৃতির জন্য আল-জাজিরার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এছাড়াও হলুদ সাংবাদিকতার কারণে আল জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ করতে হবে। যারা বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে এ দেশের ইতিহাস অবমাননা করেন তাদের কোন জায়গা এ দেশে নেই। এরা দেশের বাইরে থেকে একেকজন একেকভাবে ইতিহাস রচনা করছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। আর আল জাজিরা বহু আগে থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে চলেছে এবং জঙ্গিবাদ উস্কে দেওয়ার কাজ সুচারুরূপে চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও থেমে থাকেনি তাদের ইতিহাস বিকৃতি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদের সংখ্যা নিয়েও আল জাজিরা বিতর্ক তৈরীর চেষ্টা করেছিল। এহেন অপপ্রচার ও রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারা ব্যাহত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আল জাজিরা কর্তৃক বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও রুখে দিবে দেশের সচেতন নাগরিকরা। বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিষয়ে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।"

প্রেস বিজ্ঞপ্তি