২২ অক্টোবর কাশ্মীর গণহত্যা দিবসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিচার দাবি


Dhaka | Published: 2021-10-23 00:43:37 BdST | Updated: 2024-04-26 02:06:55 BdST

২২ অক্টোবর কাশ্মীর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ শুক্রবার বিকাল ৩ টায় তথ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং একই স্থানে বিকাল ৪ টায় মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা, এ্যাডভোকেট এইউজেড প্রিন্স, ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামান রাজু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

আলোচনা সভার বক্তব্যে বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, "নিরীহ কাশ্মীরি জনগোষ্ঠীর ওপর পাকিস্তান নেতৃত্বাধীন উপজাতি বাহিনী কাবিলিসের নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর কোড ‘অপারেশন গুলমার্গ’ নামক হামলা চালানো হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করার দাবিতে সোচ্চার হতে হবে।"

এ্যাডভোকেট এইউজেড প্রিন্স বলেন, "জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য পুরো এশিয়া উপমহাদেশে সহিংসতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১৯৪৭ সালে এই ঘৃণ্য নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা পরিচালিত অপারেশন সার্চলাইট নামক গণহত্যার কোডের সমান্তরালে তৈরি হয়েছিল এই আয়োজন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের নিকট দাবি, অবিলম্বে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিচারের নিশ্চিত করার সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা পাকিস্তান।"

সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "২২ অক্টোবর, ১৯৪৭ সালে ৪০ হাজারের বেশি কাশ্মীরি মুসলমান, শিখ ও হিন্দু বর্বর পাক সেনাদের হাতে নিহত হয়েছিল। ১০ হাজার নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং দুই হাজার নারীকে জোর করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বেলুচিস্তানে মুসলিমদের হত্যা ও জাতি নিধন চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট আহবান, অবিলম্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এদের বিচার করতে হবে।"

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা, ২১শে আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে গ্রেনেড হামলা, একাত্তর সালে অপরাশেন সার্চলাইট এর নামে বাংলাদেশে নারকীয় গণহত্যা, ৩রা নভেম্বর জেলহত্যা, শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং সর্বশেষ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলায় প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছে পাকিস্তান। স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-বিএনপির অঘোষিত দলীয় কার্যালয় পাকিস্তান দূতাবাস অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের মূল হোতা পাকিস্তানের সাথে সকল ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ১৯৪৭ সালের ২২শে অক্টোবর কাশ্মীরের পশতুন উপজাতির ওপর পরিচালিত অপারেশন গুলমার্গ এর নামে ৪০ হাজার কাশ্মীরি নাগরিকদের হত্যা এবং ১০ হাজার নারীকে ধর্ষণ করেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। একাত্তরের গণহত্যা, সাতচল্লিশে কাশ্মীরে গণহত্যা, চলতি বছরে মৌলবাদী তালেবান দ্বারা আফগানিস্তানে গণহত্যার অপরাধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট দাবি জানাচ্ছি।"

আল মামুন আরোও বলেন, "কাশ্মীরের অসহায় নাগরিকদের ওপর ২২ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সমর্থিত প্রায় দুই হাজার উপজাতীয় মিলিশিয়া নৃশংস নির্যাতন করার জন্য কাশ্মীরে পাঠানো হয়। এ জন্য দিনটি সারা বিশ্বে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ প্রতি বছর এই দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করবে। ১৯৪৭ সালের উপজাতিদের ওপর আক্রমণ রাতারাতি ঘটেনি, এটি পাকিস্তানের কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল। হানাদার বাহিনী দ্বারা বড় আকারের নৃশংসতা চালানো হয়েছিল। বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও তাদের সম্পদ লুট করা হয়েছিল, এমনকি হাসপাতাল গুলোকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। আক্রমণকারীরা কাশ্মীরিদের দ্বারাও প্রতিহত হয়েছিল; তারা শ্রীনগর বিমানবন্দর দখল করার জন্য পাকিস্তানি আক্রমণকারীদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। এই ধ্বংসযজ্ঞের পটভূমিতে, জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংহ ভারত সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন এবং পাকিস্তান ও তার শক্তিশালী আক্রমণকারীদের দ্বারা লুণ্ঠিত হওয়ার জন্য তার রাজ্যকে বাঁচাতে ভারতের সঙ্গে একাত্মতার জন্য সন্ধি স্বাক্ষর করেছিলে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনারা পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে সুরক্ষিত করেছিল জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরকে। ২৭ অক্টোবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম পদাতিক বাহিনী শ্রীনগর বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিল এবং কাশ্মীরকে হানাদারদের থেকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ শুরু করে কাশ্মীর হানাদার মুক্ত করেছিল। জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট দাবি, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে।"