আজ ৩ মে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের দাবিতে প্রতিবছর এই দিনে বিশ্বজুড়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সকল প্রকার মানবাধিকারের চালিকাশক্তি’। দিবসটি নিয়ে কী ভাবছেন ক্যাম্পাস গণমাধ্যমকর্মীরা!
আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ও চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি-
গণমাধ্যমকে বলা হয়ে থাকে সমাজের দর্পণ বা আয়না। আয়নায় যেমন নিজের অবয়ব স্পষ্ট ফুটে ওঠে তেমনি গণমাধ্যমেও সমাজের প্রতিচ্ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। আর সেই ছবি ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব নেন গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করা প্রান্তিক পর্যায়ের সাংবাদিকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম। অনেক ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। এর ফলে অনেকে বেছে নেয় অনৈতিক পথ। কিন্তু গণমাধ্যমগুলো যদি ঠিকমতো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতো তাহলে অপ-সাংবাদিকতা সৃষ্টি হতো না। আবার এই পেশায় নেই চাকরির নিরাপত্তাও। যদি চাকরির নিরাপত্তা এবং আর্থিক-সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যেতো তাহলে বিভিন্ন হাউসে কাজ করা গণমাধ্যমকর্মীরা ভালো ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা পেতো। তাই ঠিকভাবে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ও চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
মুছা মল্লিক, সাবেক সভাপতি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি
গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহ কখনো থেমে থাকে না- একজন সাংবাদিককে এক নিরন্তর লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে তার দিন/ মাস/ বছর পার করতে হয়। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের জন্য নিজের পরিবারের সুখকেও বিসর্জন দিতে হয়। মাঝে মাঝে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির চাপ, করপোরেটের চাপ, সমাজের কট্টর মতামত, আইন ও প্রশাসনের অপব্যবহার, মিডিয়ার আপস—মত প্রকাশের স্বাধীনতার সামনে বিস্তর বাঁধা থাকে। মাঝে মাঝে মামলা হামলার মুখোমুখি হতে হয়। তবুও সংবাদকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহ কখনো থেমে থাকে না।
কালাম মুহাম্মদ, সভাপতি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার-
একবিংশ শতাব্দীতে তথ্য শুধু অধিকার নয়, এটি একটি সম্পদও বটে। তথ্যের অবাধ প্রবাহে গণমাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম। তথ্য পরিবেশন, জ্ঞান বৃদ্ধি, সামাজিক চেতনা বিকাশ, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি,পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা, মানসিক বিকাশ, নান্দনিক রুচি বিকাশ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিকাশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে: ‘প্রত্যেকের মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে; এই অধিকারে হস্তক্ষেপ ছাড়াই মতামত রাখা এবং কোনো গণমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য ও ধারণাগুলো অনুসন্ধান করা, গ্রহণ এবং গ্রহণের স্বাধীনতার সীমানা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।’ এছাড়াও সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদের ২(ক)তে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রের উচিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা।গণমাধ্যমকে রাষ্টের ৪র্থ স্তম্ভ হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আসুন আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই।
রাকিবুল ইসলাম, দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি
গণমাধ্যম এখন নাগরিক জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গী-প্রাচীনকাল থেকেই মানব সভ্যতাকে বিকশিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যোগাযোগ বা তথ্য সরবরাহ। কালক্রমে এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। যাকে বলা হয় মিডিয়া বা গণমাধ্যম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নেহায়েত তথ্য সরবরাহ বা সংবাদ সম্প্রচার ছাড়াও আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে সংবাদ মাধ্যমগুলো। গণমাধ্যম এখন নাগরিক জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গী। স্যোশাল মিডিয়া আসার পর থেকে গণমাধ্যমের ধারণা আরো বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমান মিডিয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি যা সামগ্রিক অর্থে পুরো বিশ্বকেই ছোট করে দিয়েছে। শত শত ভাষায় যেকোনো তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে। মানবসভ্যতার এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গণমাধ্যমকে তাই আরো বেশি শক্তিশালী এবং সার্বজনীন করা প্রয়োজন। দেশে দেশে রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক কিংবা ব্যবসায়িক অপব্যবহার থেকে বের হয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো সমাজ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করুক, বিশ্বব্যবস্থা চালনায় অবদান রাখুক, বিশ্ব গণমাধ্যম দিবসে এই প্রত্যাশা রইল।
জাকারিয়া হোসেন, কোষাধ্যক্ষ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি