রাতের আঁধারে জঙ্গলে নিয়ে র‌্যাগ, জাবির ১১ শিক্ষার্থীকে শোকজ


Desk report | Published: 2023-05-30 02:23:16 BdST | Updated: 2024-04-24 17:00:48 BdST

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের রাতের আঁধারে জঙ্গলে ডেকে নিয়ে র‌্যাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দ্বিতীয় বর্ষের ১১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের শোকজ করা হয়েছে। সোমবার (২৯ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান এ তথ্য জানান।

রোববার (২৮ মে) রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ড-সংলগ্ন এলাকায় র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। গোপনে খবর পেয়ে ওই জঙ্গলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ ও মো. রনি হোসাইন।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের নূর ইসলাম, মো. আবদুস ছবুর, প্রিন্স কুমার রায়, খন্দকার মোয়াজ ইসলাম, মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থী মিঠুন রায়, মো. তানভীর ইসলাম, চিরঞ্জীত মন্ডল, এ বি এম আব্দুল্লাহ আল কাফি, আহমেদ ইজাজুল হাসান আরিফ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী মো. রাসেল হোসাইন ও মো. জোবায়েদ হাসান। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানা যায়, রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ড সংলগ্ন এলাকায় উপস্থিত হতে বলা হয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। একই বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জরুরিভাবে এ নির্দেশ দেন বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তবে রাত সাড়ে ৮টায় উপস্থিত হতে বলা হলেও সিনিয়ররা আসেন রাত সাড়ে ১১টায়। পরবর্তীতে সেখানে এসেই আগে থেকে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নানা ধরনের নির্দেশ দেন তারা। এর মধ্যে মুরগি হও, চেয়ারে বসা ও ক্ষিপ্ত হয়ে জুতা ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটে।

ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও সাংবাদিকরা। তবে তাদের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় আব্দুল্লাহ আল কাফি নামে এক শিক্ষার্থীকে আটক করেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত অন্য শিক্ষার্থীদের কথা জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫১তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাত ৮টায় বড় ভাইয়েরা (৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা) সিডনি ফিল্ড সংলগ্ন জঙ্গলে আমাদেরকে ডাকেন। কিন্তু ভাইয়েরা আসেন রাত ১১টায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো আমাদের র‌্যাগ দেওয়া হয়। এ সময় আমাদেরকে মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়। ম্যানার শেখানোর নামে সিনিয়ররা আমাদের গালিগালাজ করেন। মুরগি ও চেয়ার (র‌্যাগিংয়ের মাধ্যম) বানানো হয়। এছাড়া সিনিয়রদের সালাম না দেয়ায় শাসান এবং আমাদের একজনের গায়ে জুতা নিক্ষেপ করা হয়।

এদিকে ঘটনার পর র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এ বি এম আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, আমাদের ডিপার্টমেন্টের জুনিয়রদেরকে ডাকা হয়েছিল। আমরা ৫০ ব্যাচের ১০-১২ জন ছিলাম। এর মধ্যে ছিল নূর ইসলাম, তানভীর ইসলাম, মো. আবদুস ছবুর, প্রিন্স কুমার রায়, আহমেদ ইজাজুল হাসান আরিফ, চিরঞ্জীত মন্ডল, মো. রাসেল হোসাইন, সিজান, খন্দকার মোয়াজ ইসলাম ও মিঠুন রায়। এ সময় ওদেরকে র‍্যাগ দেওয়া হয়, তবে আমি দেয়নি। আমি ভুল স্বীকার করছি আর এমনটা হবে না।

জুনিয়রদের লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুতা ছুড়ে মারছিল, তবে কে মারছিল আমি ঠিক জানি না।

এ বি এম আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, আমাকে বহিষ্কার করা হোক এটা চাই না। বহিষ্কার হলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

এ ব্যাপারে সহকারী প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ বলেন, আমরা রাতে জানতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ড সংলগ্ন জঙ্গলে নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং করা হচ্ছে। এমন খবরের ভিত্তিতে প্রক্টর স্যারের নির্দেশে আমরা দুইজন সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে যাই। যাওয়া মাত্রই কয়েকজন সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে আমরা আব্দুল্লাহ আল কাফী নামে একজনকে ধরতে পারি। কারা সেখানে উপস্থিত ছিলো সে তাদের নাম জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, রাতেই আমরা একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আজকেই অভিযুক্তদের শোকজ করা হয়েছে। র‌্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। অভিযুক্তদের আমরা ইতোমধ্যে শোকজ করেছি। তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। এর আগেও যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো র‌্যাগিং চলবে না।