অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অপসারণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে বিভাগের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় বিভাগে তালা দিয়ে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণাও দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ইতিহাস বিভাগ থেকে আইআর বিভাগে চেয়ারম্যান হয়ে এসেছিলেন। বিভাগে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ৬ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ওপর নানা অনিয়ম অত্যাচার করে আসছেন। এছাড়া বিভাগের সেশনজট, অর্থ কেলেঙ্কারি ও যৌন হয়রানির সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নওশিন ইসলাম বলেন, 'উনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ৬ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ওপর নানা অনিয়ম অত্যাচার হয়ে আসছে। বিভাগের সেশনজট, অর্থ কেলেঙ্কারি ও যৌন হয়রানির সঙ্গে উনি জড়িত। এরকম শিক্ষককে আমরা বিভাগে চাই না। আমরা উপাচার্য বরাবর একটি দরখাস্ত দিয়েছি কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি।'
আরেক শিক্ষার্থী ওমর ফারুক তুফান বলেন, 'আব্দুল্লাহ আল মামুন দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের বিভাগে অনিয়ম করে আসছেন। উনি ইতিহাস বিভাগ থেকে আমাদের বিভাগে চেয়ারম্যান হয়ে এসেছিলেন। আমরা তাকে এই বিভাগে আর দেখতে চাই না। আমরা চেয়ারম্যান স্যারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কমিটি করার জন্য।'
বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাউফু ইসলাম ইতু বলেন, 'ক্লাসে পড়ানোর নামে সে পারিবারিক গল্প করে। সে আমাদের সিনিয়রদের ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। জুলাই বিপ্লবে খুনি হাসিনার পক্ষ নেওয়াসহ ছাত্র হত্যার পক্ষে ফেসবুকে পোস্টও করেছে। আমরা তাকে আর এই বিভাগে দেখতে চাই না।'
এ বিষয়ে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন আজ দুপুরে ফেসবুকে 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার' নামক গ্রুপে এক পোষ্টের মাধ্যমে জানান, এই বিভাগে আমি প্রফেসরের শুন্যপদে স্থায়ী নিয়োগ লাভ করি। নিয়োগ লাভ করেই আমি শক্ত হাতে ডিসিপ্লিন প্রতিষ্ঠা করি। শিক্ষকদ্বয়কে কাউন্সেলিং করি এবং শিক্ষাদানের সঠিক প্যাডাগগি নিয়ে কাজ করি। আমার নেতৃত্বে বিভাগটি গতিশীল হয় এবং আমরা সেশন জট কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হই।'
তিনি আরো বলেন, 'এ বিভাগটিকে গত ০৬ বছর আমি সন্তানের মতই লালন-পালন করেছি। গত মে মাসে আমি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষ করি এবং নতুন সভাপতি দায়িত্ব বুঝিয়ে দিই। আর আজ এই তার প্রতিদান। নতুন করে আবার আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এই দেশে ভালো কিছু করা মানেই নিজের বিপদ ডেকে আনা। সেই বিপদেই পড়েছি।'
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ড. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, 'আজকে সকালেও উপাচার্য স্যারের সাথে কথা হয়েছে তিনি আশ্বস্ত করেছেন দ্রুতই একটা সমাধান হবে। এবিষয় তদন্ত কমিটি গঠন হবে এবং আশা করছি শিক্ষার্থীরা ন্যায় বিচার পাবে। বিভাগের পক্ষ থেকেও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে তাদের।'
অবস্থান কর্মসূচিতে বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।