২০১১ সালে সাংবাদিক সরদার হাসান ইলিয়াছ তানিমকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, ছাত্র উপদেষ্টা মো. তারেক নূর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহমেদসহ ছাত্রলীগের ৯ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গতকাল ২ ডিসেম্বর বাদী তানিমের ছোটভাই মো. রোকনুজ্জামান রাজশাহী কোর্টে এই মামলা করেন। আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় রাবির কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে মামলা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানন তিনি।
ভুক্তভোগী তানিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি রাবি প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল কমিউনিটির সদস্য। এছাড়া, তৎকালীন রাজশাহী স্থানীয় দৈনিক লাল গোলাপ ও জাতীয় দৈনিক সংগ্রাম-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন। তিনি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার বাসিন্দা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট ককটেল উদ্ধারের খবর সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দল তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে এবং পানির কুয়ার মধ্যে চুবিয়ে রাখে। তার ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে থাকা রাবির প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাকে রক্ষার বদলে উল্টো হামলার নির্দেশ দেন।
মামলায় অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক রাবি শাখার সভাপতি আহম্মদ আলী মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আবু হোসাইন বিপু, মাদার বখ্শ হল শাখার আহ্বায়ক রুহুল আমিন বাবু, সহ-সভাপতি আল আরাফাত রাব্বি, ও দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম ও কামাল হোসেন। তারা বর্তমানে বিভিন্ন পদে আছেন, যার মধ্যে একজন পুলিশ ইনচার্জ ও আরেকজন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাদী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট আনুমানিক দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের স্টোর রুম থেকে ককটেল উদ্ধারের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী প্রশাসনের উপস্থিতিতে আমার বড় ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ তার উপর বর্বরোচিত আক্রমণ করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক তানিমকে হকিস্টিক, রড ও জিআই পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তারা ইট দিয়ে তার মাথা ও মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় পানির কুয়ার মধ্যে চুবিয়ে রাখে। এ সময় তার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, সহকারী প্রক্টর তারেক নূর ও মুস্তাক আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তাকে রক্ষার বদলে সন্ত্রাসীদের নির্দেশনা দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তানিমকে সহকর্মীরা উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বাদী রোকনুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন আইনের শাসনের অভাবের কারণে মামলা দায়ের বিলম্বিত হয়েছে। তিনি মামলার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নাগরিকদের সোচ্চার ভূমিকা পালন করার অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (মামলা নং: সিআর ২১১/২০২৪) মামলাটি আমলে নিয়ে ৭ জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে মতিহার থানার ওসিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।