
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুইটি প্রশাসনিক ভবনসহ ১২টি স্থাপনার পুনরায় নামকরণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পুনঃনামকরণকৃত স্থাপনাগুলো হলো- সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন ও শহীদ মনসুর আলী প্রশাসন ভবনকে প্রশাসন ভবন-১ ও প্রশাসন ভবন-২, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলকে বিজয়-২৪ হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলকে জুলাই-৩৬ হল, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনকে সিনেট ভবন, শেখ কামাল স্টেডিয়ামকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম, ড. কুদরত-ই-খুদা অ্যাকাডেমিক ভবন ও ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া অ্যাকাডেমিক ভবনের নাম বদলে জাবির ইবনে হাইয়ান ও জামাল নজরুল ভবন, কৃষি অনুষদ ভবনের নাম কৃষি ভবন করা হয়েছে।
এছাড়াও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মডেল স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটের ও বিনোদপুর গেটের নাম বদলে শহীদ সাকিব আঞ্জুম গেইট ও শহীদ আলী রায়হান গেইট করা হয়েছে।
এর আগে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বঙ্গবন্ধু হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শেখ রাসেল মডেল স্কুল, শেখ কামাল স্টেডিয়াম, নির্মাণাধীন এএইচএম কামারুজ্জামান ও শেখ হাসিনা হলেরও নামফলক ভেঙে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সেদিনই তারা এসব স্থাপনার নাম পরিবর্তনের দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান আলী বলেন, ‘স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত শুধুই প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, এটি ২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতিফলন। শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও গণতান্ত্রিক হওয়া উচিত। জুলাই আন্দোলন আমাদের সামনে সেই দাবি এনেছিল। পুরোনো নামগুলো ছিল একটি নির্দিষ্ট দলীয় ইতিহাসের প্রতিনিধিত্বকারী, যেখানে বহু শিক্ষার্থীর মতামত উপেক্ষিত ছিল। এখনকার এই পরিবর্তন, বিশেষ করে শহীদ সাকিব আঞ্জুম ও শহীদ আলী রায়হানের নামে গেটের নামকরণের মাধ্যমে তাদের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত আরা বলেন, আমরা এই নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন এক মূল্যবোধের যাত্রা শুরু হতে দেখছি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো একক দলের নয়। ‘বিজয়-২৪ হল’ বা ‘জুলাই-৩৬ হল’ এর মতো নামকরণ আমাদের ২৪ এর আন্দোলনের ইতিহাসকে সংরক্ষণ করে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করবে।
তবে কেউ কেউ করছেন সমালোচনাও। সাফায়াত মোস্তাকিম অনিক নামের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ড. কুদরত-এ-খুদা বাংলাদেশের একজন পথিকৃৎ বিজ্ঞানী, তার নাম পরিবর্তন করে ইবনে হাইয়ানের নাম দেওয়াটা একেবারে বেখাপ্পা। ড. ওয়াজেদ দেশের প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী আর সর্বজন শ্রদ্ধেয়, তার নাম পরিবর্তন করাটাও দৃষ্টিকটু। প্রশাসনিক ভবন, স্টেডিয়াম এসব থেকে ব্যক্তির নাম সরায়ে দেওয়াটা ভালো করছে। কিন্তু সেখানেই আবার গেটের নাম দিয়েছে ব্যক্তির নামে, অথচ মানুষ কিন্তু ঐ বিনোদপুর, কাজলা গেটই বলবে। এই চেতনা চাপাইতে গিয়েই একাত্তরকে পচায়ে ফেলছিল।’
জান্নাত ফিজা নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘অতিরঞ্জিত কোনো কিছুই ভালো না। তাজউদ্দীন, মনসুর আলী, ড. কুদরত, ড. ওয়াজেদ, এরা কী করেছে? আর বিনোদপুর গেট, কাজলা গেটের নাম কেন পরিবর্তন করতে হবে? ফাইজলামি নাকি? বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটা বাদ রাখলেন কেন? ওইটারও একটা সাজেশন দেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘ভবনগুলোর নাম পরিবর্তনের জন্য আমাদের কাছে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা ছিল। সে অনুযায়ী সিন্ডিকেট সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন নতুন দুইটি হলের বাজেট এবং প্রক্রিয়াধীন কিছু জটিলতার জন্য এই মুহূর্তে নাম পরিবর্তন করা হয়নি। নির্মাণ কার্য শেষ হলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।’
মেয়েদের হলের নাম ‘জুলাই ৩৬’ রাখা প্রসঙ্গে উপ-উপাচার্য বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে আমাদের মেয়েদের অনেক বড় অবদান ছিল। তাদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে একটা ছেলেদের এবং একটা মেয়েদের হলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘সিন্ডিকেট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নামগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা যে নামই নির্ধারণ করি না কেন, এতে সমালোচনা আসবেই। নির্মাণাধীন নতুন দুইটি হলের নাম পরিবর্তন করতে হলে যাবতীয় নথি পরিবর্তন করতে হবে। নির্মাণকাজ শেষ হলে আমরা এ দুটি হলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’