১০ দফা দাবিতে ঢাবি ভিসিকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের স্মারকলিপি


DU Correspondent | Published: 2023-03-10 02:25:55 BdST | Updated: 2024-04-20 04:25:57 BdST

প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে প্রথম বর্ষ থেকে সিট বণ্টন নিশ্চিত, ডাকসু নির্বাচন, শিক্ষা ব্যয় কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) অপরাজেয় বাংলার ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর উপাচার্য বরাবর এই স্মারকলিপি জমা দেয় তারা।

দলটির নেতাকর্মীরা জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী ১০ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে উপাচার্য বরাবর শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের দাবিগুলো হলো

১. নতুন হল নির্মাণ করে প্রথম বর্ষ থেকেই প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে সিট বন্টন নিশ্চিত করা, দখলদারিত্বমুক্ত হল ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

২. অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে।

৩. বিভাগ উন্নয়ন ফি, হল স্থাপনা ফিসহ নামে-বেনামে ফি আদায় করা এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সসহ সকল বাণিজ্যিক কোর্স বাতিল করতে হবে। ইউজিসির কৌশলপত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় চালানো বন্ধ করতে হবে।

৪. প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে ডাইনিং চালু করে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেওয়া এবং মোকাররম ভবন, মোতাহার ভবন এলাকার অনুরূপ ক্যান্টিন স্থাপন করাসহ খাবারের দাম কমানো এবং পর্যাপ্ত পুষ্টিমান নিশ্চিত করা।

৫. ক্লাসরুম সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বড় ক্লাস রুমগুলোতে সাউন্ড সিস্টেম নিশ্চিত করা। সেমিনারগুলোর পরিসর বাড়িয়ে আধুনিক মানের জার্নাল সংগ্রহ করা। আধুনিক মানের কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা। শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করে। শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা এবং বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।

৬. মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিকীকরণ করা। আসন সংখ্যা বাড়ানো। পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা করা। মেডিকেল সেন্টারের তত্ত্বাবধানে আবাসিক হলগুলোতে মেডিসিন কর্নার চালু করতে হবে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা কমিয়ে উচ্চ শিক্ষা সংকোচনের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

৮. কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিসর বাড়ানো, সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা এবং ভাড়াভিত্তিক নয় নিজস্ব বাস ক্রয় করতে হবে। পাশাপাশি রাত ১০ টা পর্যন্ত বাসের ট্রিপ চালু রাখতে হবে।

৯. স্বাস্থ্যবিমার নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

১০. যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আরাফাত সাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন ‘আমরা যে দাবিগুলো তুলেছি সেগুলো মূলত শিক্ষার্থীদেরই মৌলিক অধিকারের দাবি। কিন্তু প্রশাসন পরিস্থিতি এমন করে রেখেছে যে অধিকারহীনতাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমরা এই স্বাভাবিকতা ভাঙতে চাই। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন জ্ঞান তৈরি ও চর্চার জন্য উপযুক্ত মানবিক পরিবেশ নেই। হলে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে থাকে। উচ্চদাম দিয়ে নিম্নমানের খাবার খায়। আদব কায়দা শেখানোর নামে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। ক্লাসরুম সংকটের কারণে ক্লাসেও শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসে, পড়ানোর পরিবেশ নেই। ভালো সাউন্ড সিস্টেম নেই। শিক্ষকরা গতানুগতিক সিলেবাসে ও উপায়ে পাঠদান করে। লাইব্রেরিগুলো ছোট পরিসরের হওয়ায় ও ৭ দিন ২৪ ঘন্টা খোলা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা নিজ সুবিধামত পড়তে পারে না। শিক্ষা ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত, নামে—বেনামে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ডাকসুর কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন নেই বললেই চলে। এগুলোসহ বিশ্ববিদ্যালয় আজ নানা সংকটে জর্জরিত।’

তারা আরও বলেন, ‘অতীতে আমরা দেখেছি আন্দোলন না করলে প্রশাসন মৌলিক অধিকারগুলোও বাস্তবায়ন করে না। তাই আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংকটসমূহ তীব্রতর হচ্ছে। এরূপ বৃহত্তর সংকটকাল দূর করতে পারবে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ ও সংগ্রামশীল আন্দোলন।’