সমুদ্র ও পাহাড়ের ডাকে বশেমুরবিপ্রবির এফএমবি ৩য় ব্যাচ


Reshad Hossain | Published: 2024-11-10 22:59:04 BdST | Updated: 2024-12-14 12:47:06 BdST

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স  বিভাগের ৩য় ব্যাচের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজারে ৪ দিনের ফিল্ড ট্যুর। ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক নিয়াজ আল হাসানের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর রাত ৮ টায় ক্যাম্পাস থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করি আমরা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

১ম দিন রাঙামাটিতে যখন পৌঁছাই তখন রাতের আঁধার কেটে পাহাড়ের সবুজ বুকে ভোরের আলো কেবল ফুটতে শুরু করেছে। সকালের নাস্তা শেষ করে কাপ্তাই লেকে টলারে করে শুভলঙ্গঝর্ণা পৌঁছাই। কাপ্তাই লেকের অথৈ জল আমাদের মুগ্ধ করে। পুরো কাপ্তাই লেক এলাকা ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে হোটেল পৌঁছাই।রাতের নাস্তা শেষ করে রাঙ্গামাটি শহরে ঘুরতে যায় সেখানে পাহাড়ি বিভিন্ন শাক,সবজিও ফলের পসরা সাজিয়ে বসছে।আমরা যেহেতু  নগর জীবনে কেমিক্যাল ও ফরমালিন মেশানো ফল খেয়ে অভ্যস্ত। তাই পাহাড়ে এসে একটু প্রাকৃতিক ফল-সবজি পেয়ে আগ্রহভরে দেখি  এবং কিনি।

পরের দিন, সকাল বেলা নাস্তা শেষ করে বান্দরবানের উদ্দেশ্য রওনা দেই এবং দুপুরে বান্দরবান পৌঁছাই। বিকালে রুপালি ঝর্ণার অপূর্ব শোভা দেখতে ছুটে যাই। এরপর চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, সাফারি পার্ক, প্যাডেল বোট, ক্যাবল কার, উন্মুক্ত মঞ্চ ও চা বাগান উপভোগ করে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে এবং সর্বশেষ নীলাচল দর্শনের মাধ্যমে ইতি ঘটে সেদিনের মতো। এই পাহাড়ি এলাকাটিকে অনেকেই স্বর্গভূমি বলে থাকেন। নীলাচল থেকে সমগ্র বান্দরবন শহর একনজরে দেখা যায়।বিশেষকরে নীলাচলে সূর্যাস্তের দৃশ্য আমাদের মনে স্বর্গীয় অনুভূতি আনে।

পরদিন সকালে বান্দরবনের সবুজ পাহাড়ের মায়া কাটিয়ে সমুদ্রের টানে চলে আসি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। প্রায় অর্ধদিনের ভ্রমণ ক্লান্তি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঢেউয়ের গর্জনে নিমিষেই উড়ে যায়। বিকেলে স্পিড বোটে করে মহেশখালী দ্বীপের আদিনাথ মন্দিরে।  সাগরবেষ্টিত মহেশখালী দ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।মহেশখালী গেলাম কিন্তু পান খেলাম না তা হয় কি করে। তাই আমার বন্ধু জাকিউর ও মাহাবুল পান নিয়ে মনের সুখে চিবানো শুরু করল। এভাবে তিনটা দিন কেটে গেল।

ফিল্ড ট্যুরের সর্বশেষ দিনের শুরুতে টেকসই কোস্টাল এবং মেরিন ফিশারিজ প্রোজেক্ট দেখতে বের হই সবাই। সেখানে শিক্ষার্থীরা বাস্তবধর্মী জ্ঞান আহরোণ করে। এরপর খোলা জীপে করে হিমছড়িরতে যাই সেখানে   সৈকত লাগোয়া আকাশছোঁয়া পাহাড় এবং পাহাড়ের হিম শীতল ঝরনাও বেশ আকর্ষণীয় ছিল। হিমছড়ি থেকে  খোলা জিপে চড়ে রওনা হই পাটয়ারটেক  সৈকতের উদ্দেশ্যে, যা কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত। পিচঢালা মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে গাড়ি ছুটছে দূরন্ত বেগে। একপাশে বিস্তীর্ণ সমুদ্রের বালুকাবেলা, অন্যপাশে সবুজ পাহাড়ের সারি। মনে হবে কোন স্বপ্নের দেশে ভেসে যাচ্ছি। ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে চলা খোলা জিপে দাঁড়িয়ে দু’পাশের এমন রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখে হৃদয় পুলকিত হয়ে উঠল। এ যেন কাব্যিক, স্বপ্নের মতো সুন্দর। যাত্রা শুরুর ঘন্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম পাটয়ারটেক বীচে। বীচের নজরকাড়া সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত না হয়ে উপাই নেই। একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে দিগন্ত বিস্তৃত থইথই নীল জলরাশি।

চারদিন পার করে এবার ক্যাম্পাসে ফিরতে হবে। ফিশারিজ বিভাগের সঙ্গে পাহাড় ও সমুদ্রে আনন্দ উলস্নাসে কাটিয়ে দেওয়া এই চারদিন আমাদের জীবনের অন্যতম সুন্দর দিন সে কথা বলতে কোনো দ্বিধা নেই।

ফিশারিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাকিউর রহমান সরকার বলেন, কোনো কিছু চোখে দেখে শেখা আর সে বিষয় মুখস্থ করে শেখার মধ্যে পার্থক্য আছে।আমরা এই ফিল্ড ট্যুরে যে জ্ঞান   আহরণ করেছি ।  এ বাস্তবধর্মী জ্ঞান থেকে সারাজীবন উপকৃত হব।

ফিশারিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহাবুল বলেন, সবসময় সিনিয়ররা বলতেন ভার্সিটি লাইফের প্রোগ্রাম আর ট্যুর মিস না করার জন্য। আসলেই কেউ তা মিস করলে, ভার্সিটিতে পড়াশোনা করার একটা বড় অংশ মিস করবে। অনেক মজা হয়েছে, স্মৃতির পাতায় আজীবন থাকবে বন্ধুদের সঙ্গে এমন সুন্দর অভিজ্ঞতা।