
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে ১ বছর ৭ মাস ১৭ দিন অর্থাৎ ৫৯৫ দিন ধরে। এই সময়ের মাঝে দুই মাসের জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতি ছিল। এ ছাড়া, পুরোটা সময়জুড়ে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় নির্বিচারে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গেছে। এই সময়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রায় ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় অন্তত ৫৩ হাজার ৮২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০টি মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ১৮৫ জন। সব মিলিয়ে আহতদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮২ জনে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘অনেক ভুক্তভোগী এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।’ লন্ডন থেকে পরিচালিত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গাজায় এখনো অন্তত ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ।
প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত ১৮ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় নতুন করে হামলা শুরু করে। এর ফলে জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি ভেঙে যায়। নতুন করে হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৭৩ জন নিহত এবং ১০ হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
এদিকে, গাজা শহরে পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। জ্বালানি সংকট ও স্থানীয় অবকাঠামো লক্ষ্য করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজা পৌরসভা। পৌরসভার মুখপাত্র হোসনি মেহান্না আনাদোলুকে জানান, গাজা ‘ব্যাপক তৃষ্ণার’ এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করছে। এর ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি মারাত্মক স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন।
মেহান্না জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ও মানবিক সংস্থাগুলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধ করা, সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং জ্বালানি ও সরঞ্জাম প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান মেহান্না। তিনি আরও জানান, শত শত পরিবার গাজা শহরের সমুদ্র সৈকতের দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এসব এলাকায় মৌলিক পরিষেবা, বিশেষ করে পানির অভাব রয়েছে।
পানির অভাবে মানবিক সংকট আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন মুখপাত্র। তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে এবং মৌলিক জীবনযাত্রার অভাবে ‘শহরটি এক নজিরবিহীন পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘সংকীর্ণ এলাকায় বাস্তুচ্যুত মানুষের ভিড়ের কারণে পানির চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর কারণে অন্য অঞ্চলে পানি পৌঁছানো যাচ্ছে না।’ তিনি যোগ করেন, ‘এটি আমাদের সম্পূর্ণ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।’
গত ২ মার্চ থেকে গাজায় প্রয়োজনীয় মানবিক সরবরাহের ওপর পূর্ণ অবরোধ চলছে। এর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর বড় আকারের সামরিক হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।