ইরানের ভান্ডারে কত ক্ষেপণাস্ত্র আছে—কত দিন যুদ্ধ চলবে এতে


ডেস্ক নিউজ | Published: 2025-06-16 22:43:07 BdST | Updated: 2025-07-12 06:37:20 BdST

গত শুক্রবার ভোরে আকস্মিকভাবে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। মূলত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি হামলার জবাব দিচ্ছে দেশটি। ইসরায়েল দাবি করেছে, গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত ইরান মোট ৩৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশির ভাগই তারা প্রতিহত করেছে।

তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এড়িয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে এবং অন্তত ২৪ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, আহত হয়েছেন শত শত মানুষ।

প্রশ্ন হলো—এই মুহূর্তে ইরানের কাছে কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র আছে এবং বর্তমানে দেশটি যে হারে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে, তাতে তাদের মজুত শেষ হতে কত দিন লাগবে?

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মতে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ও বৈচিত্র্যময় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে। মার্কিন সূত্র অনুযায়ী, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত শুরুর আগে ইরানের কাছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজারটি। এর মধ্যে রয়েছে স্বল্প, মধ্য ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং এমনকি হাইপারসনিক প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।

ইরানের আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ গত বছর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, তাদের কাছে ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এমন অন্তত ৯ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মিডিয়াম রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল, যেমন—ইমাদ ও গদর-১। এই রেঞ্জের মধ্যে ইরানের প্রথম হাইপারসনিক ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।

ইসরায়েলি সূত্র অনুসারে, সংঘাত শুরু হওয়ার আগে ইরানের গুদামে আনুমানিক ৩০০০ ক্ষেপণাস্ত্র থাকলেও সংঘাত চলাকালে তারা এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র বা উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করেছে। সেই হিসাবে ইরানের কাছে বর্তমানে ব্যবহার উপযোগী অবশিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে প্রায় ২ হাজারটি।

পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে ইরান গড়ে প্রতিবার ৫০ থেকে ১৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র একসঙ্গে ছুড়ছে। এই হার যদি তারা ধরে রাখে বা দিনে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, তবে মাত্র ২০ দিনে ইরানের মজুত শেষ হয়ে যাবে। আর যদি সপ্তাহে ১০০টি করে নিক্ষেপ করে, তবে অবশ্য মজুত শেষ হতে ২০ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

তবে এই হিসাব চূড়ান্ত নয়। কারণ, ইরান নিজেই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করে। কিছু বিশ্লেষণ বলছে, ইরান বছরে ৫০০ থেকে ১ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনে সক্ষম। কিন্তু এটি পর্যাপ্ত নয়, যদি সংঘাত টানা চলে।

কিছু বিশ্লেষক মত দিয়েছেন, সংঘাত যদি লম্বা সময় ধরে চলে এবং ইরান এই হারেই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে, তাহলে ২–৩ মাসের মধ্যে তাদের মূল স্টক উল্লেখযোগ্যভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে।

তবে ইরান এ ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করতে পারে। তারা যুদ্ধের সময়টিতে মাঝেমধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়বে, পুরোদমে নয়। এমন হলে তারা ছয় মাস বা তার বেশি সময় পর্যন্ত সীমিতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সদস্যরা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, তাঁরা শুরুতে ১ হাজার ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের আগাম হামলায় মিসাইল ঘাঁটিগুলো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, সেগুলো দ্রুত মোতায়েন করা যায়নি।

বর্তমানে ইরান শেহেদ ড্রোনের মতো স্বল্প খরচে তৈরি অস্ত্রের মাধ্যমে ইসরায়েলকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য তাদের যথেষ্ট সময় ও সক্ষমতা নেই। ইসরায়েলের লাগাতার আক্রমণে ইরানের শীর্ষ সামরিক ও পরমাণু নেতারা নিহত হয়েছেন। এগুলো দেশটির প্রতিরক্ষা ও প্রতিশোধমূলক ক্ষমতায় বড় ধাক্কা।

এদিকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা তথ্য এতটাই নিখুঁত যে, তুলনামূলকভাবে তারা ইরানের বেশি ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটাতে পারছে। ইরান যতই বড় ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলুক না কেন, ইসরায়েলের কার্যকর গোয়েন্দা ও আক্রমণ কৌশলের কাছে তারা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ছে।

বিশ্লেষক মাইকেল শুব্রিজ বলেন, ইরান ইসরায়েলের দুয়েকটি জায়গায় হামলা করেছে, যেখানে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত। কিন্তু ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে ইরানের গভীরে আঘাত হানছে। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল এভাবে হামলা চালিয়ে গেলে ইরান প্রতিরক্ষা তো দূরের কথা, পাল্টা জবাব দেওয়ারও সক্ষমতা হারাবে।

অন্যদিকে অধ্যাপক ফ্রুহলিং মনে করেন, এটি ধীরে ধীরে একটি নিম্নস্তরের যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে। ইসরায়েল হয়তো দীর্ঘ সময় ধরে আক্রমণ চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না ইরানে বড় কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে। হতে পারে তা শাসন পরিবর্তন।

এই সংঘাত কত দিন চলবে বা কোথায় গিয়ে শেষ হবে—তা এখনই বলা কঠিন। তবে এ কথা স্পষ্ট, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে এটি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্ব রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।