বুয়েট শিক্ষার্থীর জনপ্রিয় 'রিদমিক' কিবোর্ড


Dhaka | Published: 2019-10-11 18:11:23 BdST | Updated: 2024-03-28 18:27:21 BdST

অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন সোশ্যাল প্লাটফর্মগুলোতে বাঙ্গালি যারা উপস্থিত হন তাদের শতকরা ৮০ ভাগই বাংলাকেই লেখার মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন। আর এদের মধ্যে সিংহভাগই আবার ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন মুঠোফোন থেকে। আর আমাদের এই বাংলাভাষাকে জনপ্রিয় করতে এন্ড্রয়েড ফোনে বাংলা লেখার সফটওয়্যার উদ্ভাবনের মাধ্যমে অনলাইন মাধ্যমে যিনি যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন, শামীম হাসনাত, বুয়েটের কম্পিউটার প্রকৌশলের তরুণ ছাত্র, তার সাথেই আজ সবার পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে।

বুয়েটে চান্স পাবার পর থেকেই মূলত কম্পিউটার নামক গনক যন্ত্রের সাথে তার পরিচয় শুরু হয়। নিত্য নতুন চিন্তা করতেন আর লজিক নিয়ে খেলতেন। প্রোগ্রামিং করে বানাতে চেষ্টা করতেন মানুষের কাজ সহজ করে দিবে এমন সফটওয়্যার বানাবার। তখন এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য ভালোমানের কোন বাংলা লেখার কীবোর্ড বা সফটওয়্যার ছিলনা। ফোনেটিক কনভার্সনের জন্য কোড লিখেছিলেন প্রথমে, এরপর ওখান থেকেই এন্ড্রয়েড কীবোর্ড বানানোর আইডিয়া পান। বহুদিনের পরিশ্রমে সৃষ্টি করলেন ‘রিদমিক কিবোর্ড’। এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা লেখার কীবোর্ড । হাসনাত তখন দ্বিতীয় বর্ষে পা রেখেছেন কেবল।

এন্ড্রয়েড ফোন কি এবং এই অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্ব কতটূকু, এটা আমাদের সকলেরই কমবেশি জানা। এন্ড্রয়েডের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তার কারণ হচ্ছে এগুলোর সাথে চলে এমন এপ্লিকেশন বা গেইম খুব সহজেই পাওয়া যায়, যেগুলোর অধিকাংশই বিনামূল্যের।

কম্পিউটারে বাংলা লেখার জন্য ‘অভ্র’ সফটওয়্যারের সাথে আমরা অধিকাংশই পরিচিত। অভ্রের জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হচ্ছে এটির ‘ফোনেটিক উপায়ে বাংলা লেখা’ র পদ্ধতি। অর্থাৎ এটির মাধ্যমে আমরা ইংরেজীতে যেমনটা উচ্চারন হয় সেভাবে লিখলেই বাংলায় শব্দগুলো রুপান্তর হয়ে যায়। কীবোর্ডের কোথায় কোন বাটনে কোন অক্ষর আছে তা আলাদাভাবে আমাদের মনে রাখতে হয়না। যেমনঃ যদি আমরা লিখতে চাই, “আমার নাম ” সেক্ষেত্রে ইংরেজিতে “Amar nam” লিখলেই তা বাংলাতে রুপান্তর হয়ে যায়। ডেস্কটপের উপর নির্ভরতাকে কমিয়ে উনি তা নিয়ে গেছেন মানুষের হাতের মুঠোয়। এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য এই ফোনেটিক ভাবে বাংলা লেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখার মাধ্যম এখন হাসনাতের তৈরি ‘রিদমিক’।

শামীম হাসনাথ 

রিদমিকের বৈশিষ্ট্য আছে অনেকগুলি। সেই শুরু থেকে প্রতিনিয়ত এটির উন্নয়ন করছেন হাসনাত। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের উপর ভিত্তি করে। সফটওয়্যারটি ব্যাবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন বিনামূল্যে। কোন বিজ্ঞাপনের বিড়ম্বনাও নেই এটিতে। বর্তমানে ক্রমান্বয়ে ৬ টি ভার্সন পার হয়ে রিদমিক ৩.১.৫ এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। আগের অনেক ছোটখাটো ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে।

সৌন্দর্যপ্রেমিদের জন্য রিদমিক কীবোর্ডের আছে হরেক রকমের থিম বা স্টাইলের ব্যাবস্থা। রিদমিক কীবোর্ড ‘গুগল প্লে স্টোর’ থেকে নামিয়ে মোবাইল ফোনে সেটাপ দেওয়াও যেমন সহজ তেমনি হাসনাত ব্যবহারকারীদের জন্য অতি সহজেই অনেক প্রকার মানানসই থিম পরিবর্তনের সুযোগও রেখেছেন।

বর্তমানে বাজারে এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য ‘মায়াবী কীবোর্ডের’ ন্যায় পাশাপাশি আরও বেশকিছু কীবোর্ড আছে। তবে সব দিক হতে হাসনাতের নিজের প্রচেষ্টায় সৃষ্টি করা ‘রিদমিক’ এখনও পর্যন্ত সবাইকে পিছনে ফেলেই এগিয়ে আছে। তার প্রধান কারণ হচ্ছে, সহজেই ব্যাবহার করা যায় এমন ফীচারের পাশাপাশি রিদমিকের ইউনিজয় এবং ফোনেটিক এমনকি এটার বিজয় ব্যাবহারকারিদের জন্যও সহজেই ব্যবহারের অপশন রাখা। নিজের মনের ভাব সহজেই প্রকাশের জন্য আছে অসংখ্য প্রয়োজনীয় ইমো বা Smileys.

গুগল প্লে স্টোরে ব্যাবহারকারীদের মাধ্যমে যেকোনো সফটওয়্যারকে মানের দিক থেকে রেটিং কিংবা ক্রমের দিক থেকে বাছাইয়ের সুযোগ থাকে। রিদমিক সফটওয়্যারটি পাওয়া যাবে এখানে। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ব্যাবহারকারীদের রেটিং এর মাধ্যমে হাসনাতের রিদমিক অর্জন করেছে ৫ এর মধ্যে ৪.৫ মান, যা খুবই বিরল। কেবলমাত্র প্রোফেশনাল লেভেলের সফটওয়্যার কারিগর ছাড়া এমন উদাহরণ খুবই কম। এযাবৎ রিদমিক কীবোর্ড ডাউনলোডের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে প্রায় ৩ লক্ষ। এতগুলি মানুষ বাংলাভাষায় লিখছেন রিদমিক ব্যবহার করে। এটিকে হাসনাত তার জন্য অনেক বড় পাওয়া বলেই মনে করেন।

হাসনাত ছেলেটি খুবই অন্তর্মূখী এবং লাজুক স্বভাবের। সারা বিশ্বের মানুষের মুঠোফোনে যার বানানো রিদমিক ব্যবহারকারী অসংখ্য, সেখানে বুয়েটের হলের যে ফ্লোরে তিনি থাকেন তাদের অনেকেই জানেননা তাদের কাছের বন্ধু, বড় ভাই বা স্নেহের ছোট ভাইটিই এই জনপ্রিয় কীবোর্ড-স্রষ্টা।

দেশের জন্য কিছু করার চিন্তা থেমে যায়নি হাসনাতের। রিদমিক নিয়ে তার এত অল্পবয়সে সফলতার পর তার ইচ্ছা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করা। এখনই সেটি বিস্তারিত প্রকাশ করতে হাসিমুখে নাকচ করে দেন লাজুক হাসনাত। অপেক্ষা করতে বলেন কিছুদিন।

  1. রিদমিক কি–বোর্ড
    মুঠোফোনে বাংলা লেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপের শীর্ষে আছে রিদমিক কি–বোর্ড। রিদমিক বা রিদমিক ক্ল্যাসিক কি–বোর্ড ব্যবহার করেই স্মার্টফোন থেকে বাংলা লিখতে পারবেন। কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার অভ্র কি–বোর্ডের মতোই এখানেও বাংলা লিখতে ফোনেটিক কি–বোর্ড ব্যবহার করা যাবে । অ্যাপ ইনস্টল করার পর অ্যান্ড্রয়েডচালিত ফোনের জন্য কিছু সেটিংসে পরিবর্তন আনতে হবে। যেহেতু একটি অ্যাপ দিয়েই বাংলা ও ইংরেজি দুটোই লিখতে পারবেন, তাই রিদমিককে ডিফল্ট কি–বোর্ড হিসেবে নির্ধারণ করে দিতে হবে। ইনস্টল হওয়ার পর অ্যাপে ঢুকতে হবে। অ্যাপে ঢুকলে Setting up Ridmik Keyboard–এর পরবর্তী নির্দেশনা অনুসরণ করে রিদমিক ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলা বা ইংরেজি লিখতে কি–বোর্ডের স্পেস বোতামটি সোয়াপ (ডানে–বাঁয়ে সরানো) করে নিতে হবে। আইফোনেও রিদমিক কি–বোর্ড ব্যবহার করা যায়।
    নামানোর ঠিকানা: অ্যান্ড্রয়েড: https://bit.ly/M21RidmikKeyboardAndroid
  2. বা https://bit.ly/M21RidmikClassicAndroid

  3. আইওএস: https://apple.co/2GqTT5E
//