সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফেরার সম্ভাবনা নেই


টাইমস প্রতিবেদক | Published: 2017-08-08 17:57:36 BdST | Updated: 2024-05-12 21:50:45 BdST

সিদ্দিকুরের চোখের রেটিনার ৯০ শতাংশেরও বেশি নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ের চিকিৎসক লিঙ্গম গোপাল। তিনি বলেছেন, রেটিনার ৯০ শতাংশের বেশি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফেরার আর আশা নেই। অপারেশনের পর সোমবার সিদ্দিকুরকে দেখার পর লিঙ্গম গোপাল এ কথা বলেন। বিকালে সিদ্দিকুরের সঙ্গে কথা বলার পর তার বন্ধু ও সহপাঠী শেখ ফরিদ এ তথ্য জানান।

শেখ ফরিদ জানান, সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফেরার বিষয়টিকে এখন ভাগ্যের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, গত শনিবারও সিদ্দিকুর বাম চোখে কিছুটা আলো অনুভব করছিল। তাতে আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিদ্দিকুরের সঙ্গে কথা হয়েছে। সিদ্দিকুর জানিয়েছে, ডাক্তার তাকে দেখে গেছেন। কিন্তু তিনি কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি। ফরিদ বলেন, রেটিনার ৯০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তার দৃষ্টি ফেরার আশা এখন ভাগ্যের ওপরেই ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক।

এ অবস্থায় সিদ্দিকুরকে নিয়ে কী করা হবে জানতে চাইলে শেখ ফরিদ বলেন, ওখানকার চিকিৎসকরা তো চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনও লাভ হলো না। দৃষ্টি না ফিরলে তো কিছু করার নেই। এখন ওখানকার চিকিৎসকরা ওষুধ দেবেন, তা নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসবে। তারপর দেখা যাবে কী হয়। সিদ্দিকুর কী বলেছেন জানতে চাইলে ফরিদ বলেন, সিদ্দিকুর বলে, আগের পরীক্ষাতে দৃষ্টি ফেরার সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও ডাক্তাররা তো আমার অপারেশন করেছে। কিন্তু আর তো কিছু করার নেই। এখন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলাম সবকিছু। আগামী ১১ আগস্ট দেশে ফিরে আসবেন তারা।

সাত পুলিশকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন

সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের চোখে আঘাত পেয়েছে টিয়ার সেলের মাধ্যমেই। সেদিন খুব কাছ থেকে টিয়ার সেল মারার কারণেই সিদ্দিকুরের এ ঘটনা ঘটেছে। আর এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সোমবার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে। এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল আলম। তদন্ত প্রতিবেদনে এমন অভিযোগই তুলে ধরা হয়। এর আগে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছিলেন, ছুড়ে মারা ফুলের টব সিদ্দিকুরের চোখে আঘাত করেছে। পরে পুলিশেরই তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে, সেদিন খুব কাছ থেকে আন্দোলনকারীদের দিকে টিয়ার সেল ছোড়া হয়েছিল।

গত ২০ জুলাই বেলা ১১টার দিকে রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নেন। পুলিশের বেঁধে দেওয়া আধা ঘণ্টা সময়ের পরও অবস্থান চালিয়ে গেলে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট সিদ্দিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থীর চোখে বিদ্ধ হয়েছে বলে দাবি করেন সহপাঠীরা। সে সময়কার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের ছোড়া টিয়ার সেলে রাজপথে পড়ে যান সিদ্দিকুর। তাঁর চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় এক হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম উল্লেখ করেন, আন্দোলনকারীদের ছোড়া ফুলের টবের আঘাতে সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখে আঘাত লেগেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, খুব কাছ থেকে ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের সেল সিদ্দিকুরের চোখে লেগেছে। গত ২০ জুলাই শাহবাগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দায়িত্বরত থানার পুলিশ ও দাঙ্গা দমন বিভাগের পুলিশ সদস্যদের কর্তব্যে অবহেলা ছিল বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।

তদন্তে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন, শাহবাগ থানার পরিদর্শক আবু জাফর আলী বিশ্বাস, পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদসহ দাঙ্গা দমন বিভাগের পাঁচ কনস্টেবল।

এ ছাড়া এ ঘটনায় পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবালকে প্রধান করে গঠন করা তদন্ত কমিটিরও দু-একদিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। আহত সিদ্দিকুর বর্তমানে ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে চিকিত্সাধীন আছেন।

টিআই/ ০৮ আগষ্ট ২০১৭