মানসিক বিপর্যয়ে ১০ বছরে শাবির ১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা


Sust | Published: 2020-08-13 02:12:26 BdST | Updated: 2024-04-28 04:00:08 BdST

চোখে-মুখে অনেক স্বপ্ন ও প্রত্যয় নিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ শুরু করেন। কিন্তু অভিমান কিংবা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মানসিক জটিলতায় ফিকে হয়ে যায় কিছু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। বেছে নেন আত্মহননের মতো ভয়ংকর পথ।

এভাবেই নিজেকে শেষ করে গত এক দশকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী এ পথ অবলম্বনে পৃথিবী জীবনের ইতি টেনেছেন।

মানসিক বিপর্যয় সইতে না পেরে সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট এ মিছিলে যোগ দেন বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তোরাবি বিনতে হক। পারিবারিক কলহের জেরে নেত্রকোনায় নিজ কক্ষে সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

এছাড়াও বিভিন্ন সময় প্রেমজনিত সম্পর্কের টানাপোড়েন, পারিবারিক কলহ, শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, একাকিত্বতা, চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় নানা বিষন্নতার কারণে আত্মহননের মতো পথ বেছে নিয়েছেন আরও ৯ শিক্ষার্থী।

এর মধ্যে বিগত দুই বছরে এ মিছিলে শামিল হন ৪ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের এমন আত্মহননে উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর আগে ২০১৯ সালের ৩ আগস্ট ইদুর মারার বিষ 'রেট কিলার' খেয়ে আবাসিক হলের নিজকক্ষে আত্মহত্যা করেন বকুল চন্দ্র দাস নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্ট্যাডিজ বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

একই বছরের ১৪ জানুয়ারি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীক নগরীর কাজলশাহ এলাকার একটি বাসায় আত্মহত্যা করেন। অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া এ শিক্ষার্থীর আত্মহননের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

২০১৮ সালের ৩ জুলাই সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী মৃত্তিকা রহমান শ্বশুর বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সহপাঠীদের কাছ থেকে জানা যায়, মৃত্তিকার স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল এবং তিনি প্রায়ই মৃত্তিকার ওপর নির্যাতন করতেন।

২০১৬ সালের ৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বড়গুল এলাকার একটি মেস থেকে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ মল্লিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুইসাইড নোটে নিজের হতাশার কথা লিখে যান বিশ্বজিৎ। মূলত ব্যক্তিগত জীবনের মান অভিমান থেকেই তিনি আত্মহত্যা করেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে ছিলেন।

২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নগরীর সুরমা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী শাহরিয়ার মজুমদারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

জানালার গ্রিলের কোমর সমান উচ্চতায় ফাঁস দিয়ে কিভাবে তার মৃত্যু হলো তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার বিষয়টি উঠে আসে।

এছাড়াও ২০০৯ সালে প্রেমজনিত কারণে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ঝর্ণা, ২০১০ সালে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সায়মা সুলতানা এনি, ২০১১ সালে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সৈকত আল ইমরান ও ২০১২ সালে শ্রীনিবারণ একই মিছিলের যাত্রী হন।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা দপ্তর এবং বিভাগসমূহকে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি বাড়তি নজর দেয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্ববিল্যালয়ের ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) সাবেক পরিচালক ও নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল বিশ্বাস।

তিনি বলেন, মানুষ যখন নিজের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, নিজেকে অর্থহীন বা তুচ্ছ মনে করে, চলমান সমাজ ব্যবস্থা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, তখনই সে আত্মহত্যার মতো বিপদগামীতা অবলম্বন করে নিজের জীবন শেষ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের গতিবিধি লক্ষ্য করে তাদের সমস্যা সম্পর্কে জেনে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

অন্যদিকে ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, প্রতিটি বিভাগে ছেলে-মেয়েদের জন্য পৃথক ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বড় সমস্যা হচ্ছে তারা ছাত্র উপদেষ্টাদের কাছে যেতে চাই না, তারা মনে করে এখানে কোনো কাজ হবে না। তাদের উচিত বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টাদের কাছে নিজের সমস্যাবলী তুলে ধরা। ছাত্র উপদেষ্টাদের কাছে যেতে স্বাচ্ছন্দবোধ না করলে বিভাগের যে কোনো শিক্ষকেরও সাহায্য নেয়া উচিত।

এছাড়া শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা সম্পর্কে সম্প্রতি নিয়োগকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করেন তিনি।