সারাদেশে উন্মুক্ত লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা হলে মানুষের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন ফটকে ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি দিবসের’ আলোচনাসভায় তিনি বলেন, “দেশজুড়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে উন্মুক্ত লাইব্রেরি করা গেলে আমাদের মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটি অনেকভাবে বদলে যাবে।
“বই মানুষের চেতনার দিগন্তকে আলোকিত করবে। উন্মুক্ত লাইব্রেরি আমাদের সামাজিক মূল্যাবোধের জায়গায় একটা বিশাল দ্বার খুলে দেবে।”
সারাদেশে উন্মুক্ত লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এই কথাসাহিত্যিক আরও বলেন, “দিন দিন মানুষের মূল্যবোধ হ্রাস পাচ্ছে। তাদের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত করা গেলে আমাদের জীবনের অনেক ক্ষতি হ্রাস পাবে। মানবিকবোধে প্রদীপ্ত হব। আমাদের চেতনার জগৎকে আলোকিত করবে। দেশপ্রেমকে বড় আকারে নিয়ে যাবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি’।
এবার বছর ঘুরে সেই ফেব্রুয়ারিতেই ‘বই হোক মুক্তির হাতিয়ার’ স্লোগানে প্রথবারের মতো ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি দিবস’ পালন করছে এর সঙ্গে যু্ক্ত সংশ্লিষ্টরা।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার শোভাযাত্রা, কবিতা আবৃত্তি, প্রবন্ধ পাঠ, রম্যরচনা, নৃত্য, লোকগীতি বাউল গানেরও আয়োজন করা হয়।
এছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখায় কুড়িগ্রামের জয়নাল আবেদিনকে ‘পলান সরকার সম্মাননা’ প্রদান করা হয়, যিনি দিনমজুর হয়েও প্রায় সাড়ে তিন হাজার বইয়ের একটি সামাজিক পাঠাগার গড়ে তুলেছেন।
সম্মাননা গ্রহণ করে জয়নাল আবেদিন বলেন, “আমরা যদি নিজেকে জানতে চাই, একটি পরিশীলিত সমাজ গঠন করতে চাই, যদি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই, তাহলে আমাদের বই পড়তে হবে।
“উন্মুক্ত পাঠাগার প্রতিষ্ঠা শুধু তানভীর হাসান সৈকত কিংবা আমার একার আন্দোলন নয়, এটা আমাদের সবার আন্দোল হওয়া দরকার। আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে একটা করে পাঠাগার হওয়া দরকার। তবেই আমরা মুক্তি পাব।”
প্রতিটি গ্রামে গ্রামে উন্মুক্ত লাইব্রেরি গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, বিগত ১৪ বছরে দেশে অনেক অবকোঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়, মানুষের মনস্তাত্বি উন্নয়নও ঘটাতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বাব বার তার বক্তব্যে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।
“উন্নত দেশগুলোতে রাস্তার দ্বারে বা পার্কের কোণায় বই পড়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে রাস্তার দ্বারে বই পড়া বা উন্মুক্ত লাইব্রেরির সংস্কৃতি নাই। আমরা সেই সংস্কৃতি তৈরি করার চেষ্টা করছি।”
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বক্তব্য দেন।