মুগ্ধতার কেন্দ্রবিন্দু ইবি কেন্দ্রীয় মসজিদ, পূর্ণতা পাবে কবে!


Shakib Aslam | Published: 2024-03-10 23:18:59 BdST | Updated: 2024-04-29 04:37:36 BdST

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নির্মাণশৈলীর কেন্দ্রীয় মসজিদ সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা’টি নির্মাণাধীন হয়ে পরে আছে প্রায় ত০ বছর ধরে। এ কেন্দ্রীয় মসজিদের নির্মাণ কাজ ১৯৯৪ সালে শুরু হলেও ২০২৪ সালে এসে এ কাজ পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ৩০ বছর চলে গেলেও কেন্দ্রীয় মসজিদের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয় নি। ধাপে ধাপে এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরম্ভকালে সরকারি অর্থায়নে কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে নির্মাণ কাজ চলমান থাকে। মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় করা হলে ও সঠিকভাবে কাজে না লাগানোর অভিযোগ উঠলে অর্থ ফেরতও নেয় বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে নির্মাণ কাজে বাঁধা সৃষ্টি হয়।

 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ পার্শ্বের প্রবেশ পথে ফটকের ব্যবস্থা থাকলেও নেই ফটক। এছাড়াও নিচতলায় একাধিক তালাবদ্ধ কক্ষ, ফাঁকা স্থানে ডালপালা রেখে দেওয়া, দুটি কক্ষে আনসার সদস্যদের আবাসন, অফিস সহায়ক সমিতির নাম সম্বলিত অফিস কক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ইমামের কক্ষ ও একটি অজুখানা দেখা যায়। এছাড়াও নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি পর্যন্ত টাইলস বাঁধাই থাকলেও দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলার সিঁড়িতে নেই কোন প্রকার টাইলসের অস্তিত্ব।

এদিকে পর্যাপ্ত ফটক না থাকায় অরক্ষিত নিরাপত্তা বলয়ে ২০২২ সালের ৮ জুন রাতে মসজিদের কাচ ভেঙে ৪টি বড় স্ট্যান্ড ফ্যান চুরির ঘটনা ঘটে। পরদিন ৯ জুন কেন্দ্রীয় মসজিদের তৎকালীন পেশ ইমাম ও খতিব ড. আ স ম শোয়াইব আহমাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

এছাড়াও ফ্যানও সাউন্ড সিস্টেম সংকট, ভেতরের অংশে পর্যাপ্ত মাদুর থাকলেও বাহিরে কিছু অংশে না থাকা, জুম্মার দিনে অধিক মুসল্লির আগমনে চাপ সামলাতে ব্যর্থ অজুখানা। ফলে দিতে হয় লম্বা লাইন। তাছাড়াও জুতা রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রধান ফটক জানালার গ্রীলে জুতা রাখতে দেখা যায় যা মসজিদ পরিবেশ বিবেচনায় দৃষ্টিকটু।

এদিকে মসজিদের কাজ শুরুর পর নানা কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তিন ধাপে এর অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। ২০০৪ সালে ৩৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলে সর্বশেষ ২০১৭ সালে উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারীর সময় দুই ধাপে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটির ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। নির্মাণকাজ শেষে দেশের প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সর্ববৃহৎ মসজিদ হবে এই কেন্দ্রীয় মসজিদটি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমাংশে ২.২৫ হেক্টর জায়গা জুড়ে মসজিদের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরের আয়তন ৫১ হাজার বর্গফুট। চারতলা বিশিষ্ট মসজিদের মূল অংশে মোট সাত হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। এছাড়া মসজিদের সামনের অংশের পেডমেন্টে আরো ১০ হাজার মুস্ললি নামাজ পড়তে পারবে।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তারা বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সৌন্দর্যের স্থানটি হলো এই মসজিদ তবে দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ হচ্ছে না এর। এটা দুঃখজনক।

ক্ষোভের প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী নাফিজ আহমেদ বলেন, এতো বছরেও প্রশাসন মসজিদের কাজ শেষ করতে পারে নি। ক্যাম্পাসের অন্যতম স্থাপনা এই মসজিদ। এর কাজ অতি দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।

অসমাপ্ত কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ.কে. এম শরীফ উদ্দীন বলেন, প্রকল্পটা আমাদের অনেক বড়। উপমহাদেশের বেশকিছু মসজিদের সাথে এটি কম্পলিট হবে। আর অনেক বড় প্রকল্প হওয়ার ঠিকমতো বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দেরী হচ্ছে।

বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাহির থেকে কোন বরাদ্দ আসছে কি না এই ব্যাপারে আমার জানা নেই। আমি দায়িত্বে আসার পর দেখছি পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নেই হচ্ছে এই প্রকল্পটি। আর ডিজাইন যেটা করা হয়েছে সেটা কম্পলিট হবে।

নিতচলায় সহকার্যক্রম হিসেবে কি থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসজিদের নিচতলা বেশকিছু অফিসের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। সম্পন্ন হওয়ার পর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে কি করবে সেখানে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়া বলেন, এখন কোনো প্রজেক্ট নেই। আমরা প্রজেক্ট পাশের চেষ্টা করছি। পাশ হলে মসজিদের কাজ নতুন করে শুরু করা হবে।