শুকনো পাতার মড়মড় শব্দে এক ভিন্নরকম অনুভূতি প্রাণের মতিহারে


Shoeb Shuvro | Published: 2024-03-23 22:50:58 BdST | Updated: 2024-04-27 12:19:34 BdST

শুকনো পাতার মড়মড় শব্দে এক ভিন্ন রকম অনুভূতি জাগায় অন্তরে। প্রাণ খুলে গাইতে ইচ্ছে করবে, ‘ও ঝরা পাতা, ও ঝরা পাতাগো/ তোমার সাথে আমার রাত পোহানো কথা/ তোমার সাথে আমার দিন কাটানো কথা।’ প্রকৃতির এমনি এক প্রাণ-চঞ্চল দৃশ্যের দেখা মিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)।

ফাগুনের শেষে বাংলার প্রকৃতিতে দোল দিচ্ছে চৈত্রের হাওয়া। ঋতুরাজ বসন্ত এখন পূর্ণ যৌবনে। এই মাসেই ঋতুবৈচিত্র্যের আবহমান এই বাংলার রূপে তৈরি হয় এক নৈসর্গিক রূপময়তার। চারিদিকে ফুলের শোভা। পিচঢালা পথগুলো ঢেকে আছে ঝরে পড়া পাতায়। হলুদ আর বাদামি রঙা শুকনো পাতার সেই রাস্তা যেন আরেক সৌন্দর্যের পসরা। প্রকৃতি যেন বরণ ডালা সাজিয়েছে ঝরা পাতার বাদামি গালিচা দিয়ে।

চিরচেনা এই ক্যাম্পাস আজ যেন ঝরা পাতার এক অচেনা রাজ্য। রঙ-বেরঙের বাহারি ফুল আর লাল টকটকে শিমুলের লালিমায় সেজেছে প্রাণের মতিহার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দুই ধারের সারিসারি দেবদারু গাছের ঝরা পাতা আর বিভিন্ন রঙের ফুল আপনাকে অভিবাদন জানাবে। প্রশাসন ভবন পেরিয়ে প্যারিস রোড ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন রাস্তার দুইপাশের ঝরা পাতার নজরকাড়া সৌন্দর্য মুহূর্তেই করবে পুলকিত।শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও মুগ্ধ রাবির এই সৌন্দর্যে।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর, লিপু চত্বর, প্রেমবঞ্চিত চত্বর, আমতলা, শেখ রাসেল চত্বরসহ আশেপাশের মেহগনি বাগানের গাছগুলো প্রায় পাতা শূণ্য। তবে গাছের নিচে পাতা পড়ে সৃষ্টি করেছে সোনালী গালিচা। জারুল, রাধা চূড়া, কৃষ্ণ চূড়া, গগণ শিরিষ, আকাশমণি, বহেরা, আমলকি, বন কাঠালি, তমাল, হিজল, কামরাঙা, জলপাই, পলাশ, জামরুল, কামিনী, নাশপাতি, আমড়া, শিশু গাছ, দেবদারু, আকন্দ, অশ্বত্থসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো এখন পাতা শূণ্য। কঙ্কালসার এসব গাছে আসতে শুরু করেছে সবুজের কুঁড়ি। স্বগর্বে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তারা। গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করেছে সবুজ পাতায়। আবার কোন কোন গাছে শোভা পাচ্ছে নানা ফুল।

বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবন, রাকসু ভবন, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পাতাবিহীন শিমুল, পলাশ গাছগুলো রঙিন বর্ণ ধারণ করেছে। ঝরে পড়া ফুলগুলো গাছের নিচে তৈরি করছে পুষ্পশয্যার। বাহারি রঙের ফুল আর ঝরে পড়া পাতায় বসে সেলফি তুলতে ব্যস্ত অনেকে। কেউবা আবার ঝরা পাতাময় বসন্তকে স্মরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন ঢংয়ে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে, বসে শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে ছবি তুলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার ফাহি ক্যাম্পাসে এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তিনি বলছেন, "এই ক্যাম্পাস আমাদের আবেগের জায়গা। ৭৫৩ একরের পুরোটা জুঁড়ে তৈরি হচ্ছে আমাদের অজস্র স্মৃতি। জায়গাটা যেমন আবেগের তেমনি সৌন্দর্যের। পদ্মা নদীর ধারে মতিহারের এই সবুজ ক্যাম্পাস আমাদের মনকে আরো উজ্জীবিত করে তোলে। সেই সৌন্দর্য আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে বসন্ত এসে। প্যারিস রোডসহ ক্যাম্পাসের সব গাছের পাতা ঝড়ে আবার নতুন পাতা গজানোর সৌন্দর্য অতুলনীয়। পাতা ঝড়া গাছে সন্ধ্যায় পাখিদের নিজ বাসায় ফিরে আসার যে দৃশ্য দেখা যায় তা অনিন্দ্য সুন্দর।"

আরেক শিক্ষার্থী শোয়াইব হোসেন বলেন, "প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া লাগার সাথে সাথে আমাদের ক্যাম্পাসে গাছ থেকে দলে দলে পাতা ঝরে পড়তে শুরু করেছে। একটু আলতো বাতাসের দোলা লাগলেই গাছ থেকে ঝুর-ঝুর করে পাতার দল হেলে দুলে নিচে পড়ে। পথচারীর মাথার উপরেও কখনো কখনো তারা জায়গা করে নিচ্ছে। ক্যাম্পাসে পা দিতেই যা দেখে আমরা মুগ্ধ হই। এ যেন স্রষ্টার এক অপরূপ সৌন্দর্য্য। সারি-সারি গাছের নিচে রাস্তায় এখন পরতে-পরতে ঝরা পাতার স্তুপ জমে যাচ্ছে"।

নিজের ভালোলাগার কথা জানিয়ে নুসরাত জাহান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ''ক্যাম্পাসের পাতা ঝরার এমন দৃশ্য সত্যিই ভালো লাগে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের রাস্তাটা দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয় দুইপাশের গাছগুলো আমাকে স্বাগত জানাতে পাতা বিছিয়ে দিয়েছে"।

ক্যাম্পাসের এমন অপরূপ দৃশ্যে নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক কুদরত-ই-জাহান বলেন, ''প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। একেক ঋতুতে আলাদাভাবে সেজে উঠে ক্যাম্পাস। কখনো হরেক ফুলের সুবাসে করে মাতোয়ারা। আবার কখনো ভরে উঠে সবুজের বিশাল সমারোহে। তবে বসন্তে ক্যাম্পাস নৈসর্গিক রূপ লাভ করেছে। শুকনো পাতা পড়ে ধারণ করেছে এক অপরূপ সৌন্দর্য।''