ছাত্র ইউনিয়নের অবস্থান ধর্ষকদের পক্ষে প্রমাণিত: ঢাবি ছাত্রলীগ


Dhaka | Published: 2020-09-29 03:49:06 BdST | Updated: 2024-05-12 15:44:12 BdST

‘ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নকে বৈধতা দেয়ায়’ ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসকে শিক্ষার্থীরা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখতে চায় না বলে মন্তব্য করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করে সংগঠনটি।

এ বিবৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ । দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ  স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

ঢাবি ছাত্রলীগের প্রতিবাদ বিবৃতিটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিটি সংগ্রামে এক প্রবাদপ্রতিম সংগঠন। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি পরিপূরক নাম। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই ধারাবাহিকতার গর্বিত উত্তরাধিকার। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রতিটি আন্দোলনের বিপ্লবী ভূমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রতিবার তাঁদের জীবনকে উৎসর্গ করেছে অহংকারের সাথে, হাসিমুখে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বশ্ববিদ্যালয় এর সংগ্রামী সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের একটি বক্তব্যকে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে কুরুচিপূর্ণ ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে রঙ মাখিয়ে বিভ্রান্তিকর যে প্রচারণা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নামে প্রচারিত হয়েছে, তা ছাত্র ইউনিয়নের গৌরবজনক ঐতিহাসিকতার হতাশাজনক পরিণতি বলে আমরা মনে করি। আমরা উদ্বেগের সাথে আরও মনে করি, সাম্প্রদায়িক-প্রতিক্রিয়াশীল, স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীর কাছে ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান নেতৃত্ব তাদের সংগঠনকে যেভাবে লজ্জাজনক ইজারা ও দখলদারিত্ব প্রদান করেছে সাম্প্রতিক যৌথ বিবৃতি তারই প্রমাণ বহন করে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই মিথ্যাচার ও বানোয়াট যৌথ বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যানপূর্বক মনে করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ধর্ষিত হবার ঘটনায় আশ্চর্যজনকভাবে নীরব থেকে ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ধর্ষকদের পক্ষে তাদের সাংগঠনিক অবস্থান প্রমাণ করেছে। পাশাপাশি ধর্ষকদের সাথে নিজেদের রাজনৈতিক মিত্রতাকে তারা ধর্ষিতার আর্তনাদের থেকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। যা এই সংগঠনের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করে।

ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ যে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর খোলসে রূপ লাভ করেছে তা সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার প্রমাণিত। যৌথ বিবৃতিটির মাধ্যমে তারা চূড়ান্তভাবে নিজেরাই তা স্বীকার করে নিলো মাত্র।

স্বাধীনতা সংগ্রামে গৌরবান্বিত ভূমিকা পালন করা ছাত্র ইউনিয়ন যে বর্তমানে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির মুখপত্রে পরিণত হয়েছে তা প্রমাণ হয় একাত্তরের মহান স্বাধীনতার সংগ্রাম, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কুলাঙ্গার শিক্ষকের মিথ্যাচরকে ‘রাষ্ট্রীয় বিতর্কিত বিষয়’ বলে উল্লেখ করার মাধ্যমে। সাম্প্রতিক যোউথ বিবৃতি সেই ধারাবাহিকতারই আরেকধাপ পতন বলে আমরা মনে করি।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন ও নারীর মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার বিপক্ষে সোচ্চার।বিপরীতে ছাত্র ইউনিয়ন ধর্ষণকারীদের পক্ষে নীরবতা পালন করে, ধর্ষণকারীদের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে, আকারে-ইঙ্গিতে থেকে প্রকাশে ধর্ষণকারীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এমনকি নিজ সংগঠনের ভেতরে সংঘটিত নারী নির্যাতনের ঘটনারও কোন প্রতিকার পূর্বে তারা করেনি যার ফলশ্রুতিতে তাদের কেন্দ্রীয় অফিসে নির্যাতিতাকে অবস্থান ধর্মঘট পালন করতে হয়েছে।

সুষ্ঠু-স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা, সহমর্মিতাকে পাশ কাটিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ কর্তৃক যে হীন প্রতিহিংসা দৃশ্যমান তা সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতির জন্য নেতিবাচক বলে আমরা মনে করি। স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠীর সমার্থক হয়ে পরিচালিত ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের এমন কর্মকাণ্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কোনভাবেই মেনে নিবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তাই আহ্বান জানায়- নেতৃত্বের দুর্বলতা কাটিয়ে, প্রগতিশীল রাজনৈতিক কৌশল বিনির্মাণের মাধ্যমে, সংগঠন থেকে বিভিন্ন অপশক্তি উৎখাত করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিয়ন তাদের পূর্বের ঐতিহাসিক ধারায় প্রত্যাবর্তন করবে, সে সুদিনের প্রত্যাশা রইলো।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদ তাদের বিবৃতিতে বলেছিল:

যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বলেন, গতকাল সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক বক্তৃতায় ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ‘স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া অন্য কোনো নারী যদি নির্যাতনের শিকার হয়...তা প্রতিহত করব’ এমন একটা বক্তব্য দিয়েছেন।

‘আমরা মনে করি, এই বক্তব্য ছাত্রলীগকর্মীদের হাতে ক্রমাগত ঘটে চলা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনাকে বৈধতা দেয়ার অপচেষ্টা মাত্র।’

তারা বলেন, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর নির্যাতনের শিকার নারীর মধ্যে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ খোঁজার মাধ্যমে সঞ্জিত তার সংগঠনের নারী নিপীড়কদের বাঁচানোর অপপ্রয়াস করছেন।

ছাত্রলীগ পুরোদস্তুর একটি ধর্ষক-নিপীড়কদের সংগঠনে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে নেতৃবৃন্দ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একশর অধিক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা ছাত্রলীগ নেতা মানিককে জনগণ ভুলে যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নারী নিপীড়নের কলঙ্কিত ঘটনা যারা ঘটিয়েছিল তারা এই ছাত্রলীগেরই নেতাকর্মী। সবশেষ সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এহেন ছাত্রলীগ সভাপতি নারী নির্যাতনকে বৈধতা দেয়ার অপচেষ্টা চালাবেন, এতে আমরা একটুও বিষ্মিত হই না।

ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃদ্বয় আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে একক ছাত্রসংগঠন হিসেবে রণাঙ্গনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক যোদ্ধা ছাত্র ইউনিয়নের ছিল। এটি ছিল একটি গণযুদ্ধ, দেশের সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ নিয়েছিল। সঞ্জিত তার সংগঠনের অপকর্মকে বৈধতা দিতে এই রক্তার্জিত স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আদর্শকে কলঙ্কিত করেছেন।

‘যে রাজু শহীদ হয়েছিলেন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সন্ত্রাস প্রতিহত করতে গিয়ে, সেই রাজুর নামে স্থাপিত ভাস্কর্যকে তিনি কলঙ্কিত করেছেন। তার উপস্থিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সঞ্জিত চন্দ্র দাসকে আর ক্যাম্পাসে দেখতে চায় না।’