উত্তাল দিনগুলোর ছবি নিয়ে শাবিতে ‘আলোকচিত্রে একদফা’


Desk report | Published: 2022-02-01 08:27:52 BdST | Updated: 2024-05-02 06:55:56 BdST

পুলিশের উদ্ধত লাঠি দুহাত তুলে প্রতিহতের চেষ্টা করছেন এক ছাত্রী, কিংবা আরেক ছাত্রের একহাতে জলন্ত মশাল, অপর হাত মুষ্টিবদ্ধ।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেল এসব দৃশ্য। তবে বাস্তবে নয়, ছবিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ‘আলোকচিত্রে একদফা’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীতে ১৩ জানুয়ারি এক প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের শুরু থেকে ২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙা পর্যন্ত ১৪ দিনের উত্তাল ক্যম্পাসের চিত্র স্থিরচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

উপচার্যের বাসার সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে থাকা, পুলিশকে ফুল উপহার দেয়া, শীতের রাতে জবুথবু হয়ে সড়কে হাজারও শিক্ষার্থীর বসে থাকা, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি সড়ক আর দেয়ালজুড়ে লিখে রাখা স্লোগান- এমন নানা ছবি ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, ‘উপচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরা ১৫ দিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের আজকের আলোকচিত্র প্রদর্শনী।’

আন্দলনের উত্তাল সময়ের দেড় শতাধিক ছবি এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে জানিয়ে শাহরিয়ার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের তোলা আন্দোলনের নানা মুহূর্তের ছবি একসঙ্গে করে আমরা এখানে প্রদর্শন করছি। এইভাবে ধারাবাহিক অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

ক্যাম্পাসের চেতনা ’৭১ এর পাশে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও টিন দিয়ে টং দোকান নির্মাণ করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। টংয়ের সামনেই চটের মধ্যে লেখা- ‘চাষাভুষার টং’।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনের সময় কিছু টং দোকান এবং করোনার ছুটির সময় বাকি টং দোকানগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বল্পমূল্যে খাবার খেতেন এবং আড্ডা দিতেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় বন্ধ টং দোকান পুনরায় খোলার দাবি জানালেও প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।

গত ২৫ জানুয়ারি ভলিবল মাঠের পাশে অস্থায়ীভাবে ‘চাষাভূষার টং’ নামে একটি টং দোকান চালু করেন শিক্ষার্থীরা। কোনো স্থাপনা ছাড়াই খোলা আকাশের নিচে চলছিল ওই টংয়ের কার্যক্রম। এবার টং দোকানগুলোকে স্থায়ী রূপ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নির্মাণ করা হচ্ছে ৫টি স্থাপনা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পুনরায় টং দোকান চালু করছেন বলে জানান আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে এমন অভিযোগ এনে গত ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ জানান কিছু শিক্ষক। এ সময় অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষক। আমরা সম্মানটুকুর জন্য কাজ করি এবং সম্মানের জন্যই শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। আমরা বুদ্ধিজীবী শ্রেণি ধারণ (Belong) করি, আমরা কোনো চাষাভুষা নই যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে।’

তার ওই মন্তব্যে চাষাভুষা মানুষকে ছোট করা হয়েছে এবং অসম্মানিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ওই মন্তব্যের প্রতিবাদেই টং দোকানগুলোর নামকরণ ‘চাষাভুষার টং’ করা হয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের সমস্যা নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ছাত্রীরা প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় প্রভোস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন এমন অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। উপাচার্য অবরুদ্ধ হলে ১৬ জানুয়ারি পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এর পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।