অক্সফোর্ড-ইয়েল-স্ট্যানফোর্ডসহ বিশ্বের শীর্ষ সব বিশ্ববিদ্যালয় যেন ভারতে তাদের ক্যাম্পাস খুলতে পারে— সেজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। দেশটির উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনের (ইউজিসি) ইতোমধ্যে এ সম্পর্কিত একটি খসড়া পরিকল্পনাও প্রস্তুত করেছে।
ইউজিসির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিদেশি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতে ক্যাম্পাস খোলার অনুমতি দেওয়া হবে— সেসব ক্যাম্পাসে শিক্ষক নিয়োগ, ভারতীয় ও বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি, টিউশন ফি নির্ধারণ, বৃত্তি প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের পূর্ণ এক্তিয়ার থাকবে স্থানীয় ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষের।’
ইউজিসির এক কর্মকর্তা এনডিটিভিকে বলেন, ‘এখন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরাসরি ভারতে ক্যাম্পাস খুলতে পারে না। সেই বাধা দূর করতে চাইছে ইউজিসি। আমাদের খসড়ায় বলা হয়েছে—বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতে তাদের ক্যাম্পাস খুলতে পারবে, অধ্য়াপক নিয়োগ করতে পারবে, ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করাতে পারবে, পড়াতে পারবে এবং তাদের কোর্স শেষ হওয়ার পর সার্টিফিকেট দিতে পারবে। তারা হবে স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শিগগিরই এ প্রস্তাবের চুড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে পার্লামেন্টে পাঠাবে ইউজিসি।
এই প্রস্তাবটি পাস হলে ভারতের পাশপাশি ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ। বিশ্বের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ার জন্য ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান। ইউজিসির প্রস্তাব পাস হলে সেই সুযোগ তারা ভারতেই পেয়ে যাবেন।
প্রস্তাবটি পাস হওয়াও প্রায় নিশ্চিত বলে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র। ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার চায়, ভারতে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বমানের শিক্ষা পাক। বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, তার থেকে অনেক কম টাকায় তারা বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ভারতও শিক্ষাক্ষেত্রে একটা আকর্ষক দেশ হিসেবে বৈশ্বিক পরিচিতি পাবে।
এমন নয় যে, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করে শিক্ষার্থীরা ভালো চাকরি পান না বা বিশ্বের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সফল হতে পারেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষাগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাজারের চাহিদা অনুসারে তারা কোর্স তৈরি করে না, এমন সমালোচনাও আছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোও বিশ্বমানের নয়।
এই অবস্থায় নামী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতে ক্যাম্পাস করলে সেই সব ঘাটতি দূর হবে। সেই সঙ্গে বিশ্বমানের শিক্ষাও পেতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা। এখন বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্য়ালয়গুলি সাধারণত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে চুক্তি করে এবং সেখানে তাদের ছাত্রছাত্রীদের একটা সেমিস্টার পড়ার জন্য পাঠায়।
'মেধাবীরা উপকৃত হবে'
অধ্যাপিকা উত্তরা রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যদি ভারতে ক্যাম্পাস খোলে তাহলে নিঃসন্দেহে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবেন। তাদের মান, তাদের পড়ানোর পদ্ধতি, তাদের বিষয় নির্বাচন সবই আধুনিক।’
উত্তরা মনে করেন, ‘এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য বেশি টাকা লাগবে ঠিকই। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে শিক্ষাঋণ পাওয়া যায়। তাছাড়া অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয় যদি আসে, তাহলে সেখানে পড়ার জন্য টাকা অনেক পড়ুয়াই জোগাড় করে নেবে।’
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবাশিস ভৌমিকের মতে, ‘কোনো সন্দেহ নেই, বিশ্বের সেরা বিশিববিদ্যালয় এলে পড়ুয়াদের সামনে একটা নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। দেশে থেকে তারা এই সুযোগ নিতে পারবে। তবে এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য কত টাকা দিতে হবে, সেটা নিঃসন্দেহে একটা বড় বিষয়। তাছাড়া সরকার যেন এদের কোনো করছাড় না দেয়, সেটাও দেখতে হবে।’